কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সতর্কতা
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সতর্কতা সম্পর্কে বহু প্রাচীনকাল থেকেই আলোচনা হয়ে আসছে। নানাবিধ চিকিৎসায় এর বহুবিধ ব্যবহার পরিলক্ষিত হচ্ছে। আয়ুর্বেদিক, ইউনানী ও কবিরাজি শাস্ত্রেও কালোজিরার ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। কালোজিরা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানার জন্য আজকের এ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পুরোপুরি পড়ুন।
কালোজিরা বা কালিজিরা যে শুধু একটি মসলা তাও কিন্তু নয়! কালোজিরা সম্পর্কে অর্থাৎ এর খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সতর্কতা সম্পর্কে আজকে আমরা এই আর্টিকেলটিতে জানবো। কালোজিরা বা কালোজিরার তেলের বহুবিধ ঔষধিগুনের কারণে মহানবী (সাঃ) বলেছেন এটি হল এমন এক মহৌষধ যা সকল রোগ নিরাময়ে উপকারী তবে হাস্সাম বা মৃত্যু ব্যতীত।
পেজ সূচিপত্র
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সতর্কতা সম্পর্কে আলোচলায় প্রথমেই জানা দরকার এর খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। বহুবিধ পুষ্টিগুণ ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন কালোজিরা বা কালোজিরার তেল খাওয়ার বা ব্যবহারের কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।
- কালোজিরা ভেজে চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- মুড়ির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- বিশেষ প্রক্রিয়ায় কালোজিরার তেল তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে।
- কালোজিরার তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
- কালোজিরা গুড়া করে চায়ের সাথে খাওয়া যেতে পারে।
- শিল-পাটাতে পিশে পেস্ট বানিয়ে ব্যথার উপর লাগানো যেতে পারে।
- মসলা হিসেবে বিভিন্ন তরকারির সাথে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে।
বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন গবেষণালব্ধ ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে কালোজিরা মানবদেহের সকল রোগ নিরাময়ে উপকারী। কালোজিরা মানবদেহে যেসকল উপকার করে থাকে সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।
মেদ, চর্বি বা ওজন কমাতে কালোজিরা উপকারি
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সতর্কতা আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব মেদ, চর্বি বা ওজন কমাতে কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে। বর্তমান সময়ে প্রায় সবাই স্বাস্থ্য সচেতন অর্থাৎ মেদ, চর্বি ও অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত! প্রতিদিন নিয়মিত ১০ থেকে ১৫ টি কালোজিরা কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে
আরো পড়ুনঃ ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও ১০টি উপকারিতা
খালি পেটে খেলে ওজন কমে যায়। দধির সাথে কালোজিরা মিশিয়ে খেলেও ওজন কমতে সহায়তা করে। যুক্তরাষ্ট্রের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪ জন অতিরিক্ত ওজন বিশিষ্ট মানুষকে বর্ণিত উপায়ে কালোজিরা খাওয়ানোর পরে দেখা গেছে যে এক মাসে ১০ থেকে ১৫ কেজি ওজন কমেছে।
ছিউলি বা শ্বেতীরোগ ভালো করে কালোজিরা
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সতর্কতা সম্পর্কে আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো শিউলি বা শ্বেতী রোগ ভালো করা সম্পর্ক। বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশে
আবহাওয়া জনিত কারণে অনেক মানুষের লক্ষ্য করা যাচ্ছে ছিউলি বা শ্বেতীরোগ। কালোজিরা বেটে শিউলির উপরে নিয়মিত ব্যবহার করলে বা লাগিয়ে রাখলে শিউলি বা শ্বেতীরোগ ভালো হয়ে যায়।
দৈহিক ও মানসিক প্রশান্তিতে কালোজিরা
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সতর্কতা সম্পর্কে আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব কালোজিরা খেলে প্রশান্তি পাওয়া যায়। কেউ যদি নিয়মিত কালোজিরা খায় তাহলে তার দৈহিক গঠন সুস্থ, সুন্দর ও স্বাবলিন হয় পাশাপাশি মানুষিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে, ব্রেনের গঠন ভালো হয়।
বাত-ব্যথা নিরাময়ে করে কালোজিরা
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সতর্কতা সম্পর্কে আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো কালোজিরা বাত-ব্যথা নিরাময়ের উপকারিতা সম্পর্কে। বাত-ব্যথা নিরাময়ে কালোজিরার তেল খুবই উপকারী।
আরো পড়ুনঃ মধুর পুষ্টিগুণ খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
কালোজিরার তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে বাতের ব্যথা ভাল হয় । কালোজিরা পেস্ট করে করে লাগালে হাঁটু বাথা ভাল হয়। পিঠের ব্যথায় কালোজিরার তেল মালিশ করলে দ্রুত উপশম পাওয়া যায়।
স্মরণশক্তি বাড়াতে কালোজিরার ভূমিকা
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সতর্কতা শিরোনাম আলোচনায় এ পর্যায়ে আমরা জানবো স্মরণশক্তি বাড়াতে কালোজিরার ভুমিকা সম্পর্কে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে আমাদের ব্রেনের স্নায়োবিক গঠন ভালো হয়। এতে করে ব্রেইন সঠিকভাবে কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারে ফলে আমাদের স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। তাই সকলেরই পরিমাণমতো কালোজিরা খাওয়া উচিত।
দুগ্ধদানকারি মা ও শিশুর জন্য কালোজিরা উপকারি
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো দুগ্ধদানকারি মা ও শিশুর জন্য কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে। সদ্যপ্রসুত মা বা দুগ্ধদানকারী মা যদি নিয়মিত প্রতিদিন কালিজিরা খায় তাহলে তার স্তনের দুগ্ধ বেড়ে যায়।
বাচ্চা প্রচুর পরিমাণে দুধ খেতে পায় এবং বাচ্চার পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়। যার কারণে বাচচাগুলো শারীরিকভাবে,মানসিকভাবে ও স্নায়োবিকভাবে এনার্জটিক হয়। প্রতিনিয়ত কালোজিরা খাওয়ার কারণে দুগ্ধদানকারি মায়ের শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
হজমশক্তি বাড়ায় কালোজিরা
কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা গুলোর মধ্যে একটি অন্যতম উপকারিতা হলো কালোজিরা হজমশক্তি বাড়ায় ও আমাশয় ভালো করে। পেটের আমাশয় জনিত রোগে ভুগছেন? বিশেষ করে পুরাতন আমাশয়। দিনে ২ থেকে ৩ বার গরম দুধের সাথে এক চা চামচ কালোজিরার তেল বা চায়ের সাথে কালোজিরা মিশিয়ে খেলে আমাশয় ভালো হয়ে যায়।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কালোজিরার উপকারিতা
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সতর্কতা সম্পর্কে আলোচনায় এখন আমরা জানবো উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে। যে সমস্ত ব্যক্তিরা উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসারে ভুগছেন তারা
আরো পড়ুনঃ ডুমুরের পুষ্টিগুণ খাওয়ার উপকারিতা
ব্লাড প্রেসারের ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি যদি প্রতিদিন মধুর সাথে অথবা গরম ভাতের সাথে পরিমাণমত কালোজিরা মিশিয়ে প্রতিদিন তিনবার খান তাহলে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ফল পাবেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কালোজিরার উপকারিতা
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সতর্কতা সম্পর্কে আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা জানবো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে। সৃষ্টিকর্তার এক বিশেষ নেয়ামত এই কালোজিরা। কালোজিরা ডায়াবেটিস বা সুগার নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
আরো পড়ুনঃ কলার পুষ্টিগুণ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
যদি কোন ডায়াবেটিসের রোগী ডায়াবেটিসের ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন দুই বার লাল চায়ের সঙ্গে এক চিমটি কালোজিরা অথবা রসুন ও কালোজিরা সেবন করে তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে ও অন্যান্য ওষুধ খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়।
শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগে কালোজিরার উপকারিতা
আমাদের চারপাশের পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং ধুলাবালিতে চলাফেরার কারণে প্রতিনিয়তই শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি জাতীয় রোগগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই রোগগুলো হলে অনেক কষ্ট হয়। কালোজিরা হোল সকল রোগের একটা মহাঔষধ।
আরো পড়ুনঃ লটকন ফল খাওয়ার ১০টি উপকারিতা
যদি প্রতিনিয়ত নিয়ম মেনে এক কাপ গরম দুধের সঙ্গে এক চা-চামচ কালোজিরা অথবা এক কাপ লাল চায়ের সঙ্গে কালোজিরা খাওয়া যায় তাহলে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট রোগ ভালো হয়ে যায়। নিয়মিত কালোজিরা খান শ্বাসকষ্ট মুক্ত থাকুন।
পাইলস্ রোগ নিরাময় করে কালোজিরা
বর্তমানে আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত পাইলস্ বা অর্শ রোগীর সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। যে সমস্ত ব্যক্তিরা পাইলস রোগে ভুগছেন তারা যদি প্রতিনিয়ত কালোজিরার তেল, এক চামচ মাখন ও এক চামচ জলপাই এর তেল একসাথে মিশে দিনে দুই-তিন বার এক থেকে দুই মাস সেবন করেন তাহলে পাইলস্ রোগ থেকে মুক্তি পাবেন ইন-শা-আল্লাহ।
নারী-পুরুষ উভয়ের যৌনশক্তি বাড়ায় কালোজিরা
নারী-পুরুষ উভয়ের যৌনশক্তি বাড়াতে সত্যিই কালোজিরা অন্যতম। দুর্বল যৌনশক্তির নারী-পুরুষদের জন্য কালোজিরা হতে পারে একটা আশার আলো। কালোজিরার তেল মধুর সাথে মিশিয়ে নিয়মিত প্রতিদিন সেবন করলে
নারী-পুরুষের যৌন শক্তি বাড়ে। পুরুষের শুক্রানুর সংখ্যা বাড়ে এবং নারীদের ডিম্বাণু প্রস্ফুটিত হয়। যে সকল দম্পতির বাচ্চা হচ্ছে না তারা নিয়মিত খেলেও ভালো ফল পেতে পারেন।
চুলের যত্নে কালোজিরার উপকারিতা
কালোজিরার উপকারিতাগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম উপকারিতা হলো চুল ভালো রাখে। চুলের যত্নে কালোজিরার তেলের বিশেষ উপকারিতা রয়েছে। প্রত্যেক দিন চুল ভালোমতো পরিষ্কার করে কালোজিরার তেল মাথায় ভালোমতো মালিশ করলে চুলের গোড়া শক্ত হয়, চুল ঝরে পড়া রোধ হয়, চুল পাকা বন্ধ করে, চুল ঘন, উজ্জ্বল ও লম্বা হয়।
কালোজিরা খাওয়ার সতর্কতা
বহু পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন মহাঔষধ খ্যাত অনেক উপকারী কালোজিরা খাওয়ার সময় কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সতর্কতাগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।
- বেশি পরিমাণে খেলে অনেকেরই বমির ভাব হতে পারে।
- তিন মাসের বেশি সময় ধরে খেলে পাকস্থলী সংকুচিত হতে পারে।
- কালিজিরা বেশি পরিমাণে খেলে ত্বকের প্রদাহ হতে পারে।
- বেশি পরিমাণে খেলে গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- যারা কালোজিরার প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল তাদের এলার্জির ভাব হতে পারে।
- বেশি পরিমাণে কালোজিরা খেলে রক্তে শর্করার পরিমান আকর্ষিক ভাবে কমে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে কালোজিরা খেলে বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
আজকের আর্টিকেলটিতে কালোজিরা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। ইতোমধ্যে আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা কালোজিরা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও রোগ নিরাময়কারি মহৌষধ কালোজিরা বা কালোজিরার তেল। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে মানব দেহের সকল ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের ভালো লেগেছে ও উপকৃত হয়েছেন। আমি মনে করি প্রাপ্তবয়স্ক সকলেরই নিয়মকানুন মেনে নিয়মিত কালোজিরা বা কালোজিরার তেল খাওয়া উচিত। মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট নেক নিয়ত করে নির্দিষ্ট সময় ধরে কালিজিরা নিয়মিত সেবন করলে উপকার হবে ইন-শা-আল্লাহ্। ধন্যবাদ।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url