কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত
কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত? এটা জানার জন্য এ আর্টিকেলটি পুরোপুরি পড়ুন। কোরবানি মুসলমান তথা ইসলামের ইতিহাসের অতিপ্রাচীনকাল থেকেই পালিত হয়ে আসা একটি ওয়াজিব ইবাদত। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য বান্দার সর্বোৎকৃষ্ট আত্মত্যাগ এই কোরবানি। কোরবানির আভিধানিক অর্থ হলো প্রিয় জিনিস বা প্রিয় বস্তু বিসর্জন বা আত্মত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর সানিধ্য লাভ করা।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট হলেন তার প্রিয় জিনিস বা প্রিয় বস্তু কোরবানি করার জন্য। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য তিনি তার প্রিয় পুত্রের গলায় ধারালো ছুরি চালিয়েছিলেন। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর এই আত্মত্যাগে খুশি হয়ে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন মুসলিম উম্মাহর উপর পশু কোরবানি ওয়াজিব করে দিয়েছেন।
পেজ সূচিপত্র
যাদের উপর পশু কোরবানি ওয়াজিব
কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত এই আলোচনায় আগে জানা দরকার কাদের উপরে পশু কোরবানি ওয়াজিো। সুস্থ, স্বাভাবিক, প্রাপ্তবয়স্ক ও সামর্থ্যবান সকল মুসলিম নর-নারীর উপর কোরবানি ওয়াজিব। ঈদের ৩ দিন অর্থাৎ ১০ যিলহজ্ব থেকে ১২ যিলহজ্ব তারিখের মধ্যে
যদি কোন পুরুষ বা মহিলার নিকট সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা বাহান্ন ভরি রৌপ্য সমপরিমাণ অর্থ আসে তাহলে তার উপর কোরবানি ওয়াজিব। উল্লেখ্য যে হিজরা (তৃতীয় লিঙ্গ), পুরুষ বা মহিলা সামর্থ্যবান হলে তাদের উপরেও কোরবানি ওয়াজেিব।
এক পশুতে কতজন ভাগি হতে পারবে
কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত এই আলোচনায় জানা খুবই জরুরি যে একটি পশুতে কতজন ভাগি হয়ে কোরবানি দেওয়া যাবে। ভাগে কোরবানি দেওয়ার ব্যাপারে কিছু বিধি-বিধান রয়েছে। ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা প্রতিটি একজনে একভাগে কোরবানি দিতে পারবে। প্রতিটা ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা
আরো পড়ুনঃ মহররমের তাৎপর্য ও আশুরার মাহাত্মক এবং ১০ মহররমের ২০ ঘটনা
একটি করে ধরে গরু, মহিষ ও উটকে এরকম সাতটি ভেড়া, দুম্বা ও ছাগলের সমান ধরে সাতজনে মিলে গরু মহিষ বা উট কোরবানি দিতে পারবে। অর্থাৎ বলা যেতে পারে গরু, মহিষ ও উঠ প্রতিটিতে সাতজন ভাগি হয়ে কোরবানি করতে পারবে। এক ভাগে কোরবানি উত্তম।
কোরবানির পশুর রকমভেদ
কোরবানি পশু কেমন হওয়া উচিত এই আলোচনায় এখন আমরা জানবো কোরবানি পশুর রকমভেদ সম্পর্কে। হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, গৃহপালিত চতুষ্পদ ছয় প্রকারের পশু (নর বা মাদি) দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। পশুগুলো হলো গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, দুম্বা ও উট। হরিণ কিম্বা বন্য গরু বা অন্য প্রাণী বাড়িতে লালন-পালন করা হলেও কোরবানি জায়েজ নয়।
কোরবানির পশুর দৈহিক গঠন কেমন হওয়া উচিত
কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত এই আলোচনায় এখন আমরা জানবো কোরবানি পশুর দৈহিক গঠন সম্পর্কে। পরম করুনাময় অসীম দয়ালু মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কে খুশি
আরো পড়ুনঃ অর্থসহ ছেলে শিশুর ইসলামিক নামের তালিকা
করার জন্য এক অনন্য উদাহরণ এই আত্মপ্রতিদান বা তাগ বা কোরবানি। এই পশু নিখুঁত, সুস্থ, সবল, সুঠাম দেহ, মোটাতাজা, অধিক গোস্ত সম্পন্ন, দেখতে সুন্দর ও প্রিয় হওয়া উত্তম।
যে সকল খুঁত বা ত্রুটিযুক্ত পশু কোরবানি করা জায়েজ না
কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত এই আলোচনায় এখন আমরা জানবো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় অর্থাৎ পশুর খুঁত বা ত্রুটি সম্পর্কে। যে সমস্ত পশুর লেজের এক তৃতীয় অংশ কাটা, কানকাটা, শিং ভাঙ্গা বা শিং না ওঠা, চোখ কানা, চার পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারে না বা তিন
পায়ে ভর করে হাঁটে, হাড্ডিসার, বন্ধ্যা, গর্ভবতী যে পশুর বাচ্চা খুব শীঘ্রই প্রসবের সম্ভাবনা আছে বা দেখতে সুন্দর না এমন পশু কোরবানি করা জায়েজ না। এক কথায় বলা যায় পশু হতে হবে নিখুঁত, সুন্দর ও দর্শনীয়। যার প্রতি দরদ ও মমত্ববোধ বেশি এরকম পশু।
কোরবানির পশুর বয়স কত হওয়া উচিত
হাদিসের বর্ণনায় এসেছে কোরবানির পশুর বয়স হতে হবে উট পাঁচ বছর বা তার বেশি, গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর বা তার বেশি, ছাগল এক বছর বা তার বেশি, ভেড়া ও দুম্বার বয়স এক বছর। ভেড়া বা দুম্বার বয়স যদি ছয় মাসের উর্ধ্বে হয়
আরো পড়ুনঃ এডিস মশা ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয় কি
আর দেখতে এমন মনে হয় যে হৃষ্টপুষ্ট এবং স্বাস্থ্যবান, মনে হচ্ছে বয়স এক বছরের কম তাহলে সেই ভেড়া বা দুম্বা কোরবানি করা জায়েজ। উল্লেখ্য ছাগলের বয়স এক বছরের কম হলে কোন অবস্থাতেই কোরবানি করা জায়েজ নয়।
কোরবানির পশুর বয়স নির্ধারণের উপায়
কোরবানির পশুর বয়স যেহেতু একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই বয়স নির্ধারণের জন্য কিছু ক্রাইটেরিয়া ফলো করতে হয়। প্রাণি বিজ্ঞানীদের মতে দুই থেকে আড়াই বছর বয়সে গরু বা মহিষের দুধের দাঁত পড়ে গিয়ে নতুন দাঁত ওঠে। পরে উঠা দাঁত আগের তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ বড় হয় যা দেখে বয়স নির্ধারণ করা যায়। ছাগল বা ভেড়ার
আরো পড়ুনঃ অর্থসহ মেয়ে বাচ্চাদের ইসলামিক নামের তালিকা ও ইংরেজী বানান
ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৫ মাসের মধ্যে কর্তন দাঁত দুইটা পড়ে গিয়ে নতুন দুইটা দাঁত গজায়। এই দাঁতগুলো আগের তুলনায় দুই থেকে তিন গুন বড় দেখায়। এই দাঁতগুলো দেখে ছাগল বা ভেড়ার বয়স নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। সর্বোপরি পশু যার কাছ থেকে কিনবেন তার কথার উপর ভরসা করেও পশুর বয়স নির্ধারণ করা যেতে পারে।
সুস্থ পশু চেনার উপায় কি
কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত শিরোনামে আলোচনায় আমাদের জানা অতিব প্রয়োজন কোরবানির সুস্থ পশু চেনার উপায় সম্পর্কে। হাদিসের ব্যখ্যায় এসেছে সুস্থ পশু কোরবানি করা উত্তম।তাই সুস্থ পশু চেনার জন্য কিছু বিষয়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
আরো পড়ুনঃ টাফনিল এর কাজ খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা
সুস্থ পশু গুলো বেশি বেশি লেজ নাড়াবে, কান নাড়বে, চোখ বড় বড় ও উজ্জ্বল থাকবে, চোখের নিচে পরিষ্কার থাকবে, নাকের নিচে কালো জায়গাটাতে পানি পানি মনে হবে। নাকে সর্দি থাকবে না। অবসর সময়ে সুস্থ পশু যাবর কাটবে।
অন্যের পক্ষে কোরবানি আদায় করা সম্পর্কে কথা
কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত এই শিরোনাম আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব অন্যের পক্ষে কোরবানি আদায় করার প্রসঙ্গে। কোরবানি আদায় করতে পারবেন নফলে। একজন লোক নিজের কোরবানি ওয়াজিব আদায় করার পরে, সামর্থ্য অনুযায়ী ছোট বাচ্চার নামে, বাবা-মা নামে, মৃত ব্যক্তির নামে বা নিকট আত্মীয়র নামে ঐ কোরবানি পরিণত হবে।
কোরবানির পশু কেনার পরে খুঁত হলে করণীয় কি
কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত এই আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় অর্থাৎ পশুর খুঁত হলে করণীয় সম্পর্কে। সুস্থ ও নিখুঁত পশু কোরবানি দিতে হবে। হাদিসের ব্যখ্যায় এসেছে কাল কিয়ামতের ময়দানে এই পশুকে চোখ-কান, শিং, লেজসহ হাজির করা হবে। পশু কেনার পরে বিশেষ কোনো কারণে যদি পায়ে আঘাত পেয়ে যায়, শিং ভেঙ্গে যায়, কান ছিড়ে যায় তারপরও ওই পশু কোরবানি চলবে।
পা একেবারেই ভেঙ্গে যায়, শিং ভেঙ্গে হাড্ডি বের হয়ে যায়, লেজ অর্ধেকের বেশি কেটে পড়ে যায়, অযত্ন কিম্বা অবহেলার কারণে ত্রুটিযুক্ত হলে সামর্থ্য থাকলে ওই পশু পরিবর্তন করে নতুন পশু কোরবানি দেওয়া উত্তম। কোরবানির নিয়তে কেনা বা বাড়িতে লালন-পালন করা পশু যদি হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায় তাহলে তার থেকে বেশি দামের পশু কিনে কোরবানি দেওয়া উত্তম।
কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়ম কি
কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত এই শীর্ষক আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো এই পশু জবেহ করার নিয়ম প্রসঙ্গে। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তালার নৈকট্য লাভের আশায় যে কোরবানি আমরা করি এই পশুগুলো নিজেরটা নিজে জবেহ করাই উত্তম। যদি কেউ জবেহ করতে না পারেন তাহলে অন্য মুসল্লির দ্বারা জবেহ করে নেয়া যাবে।
কোরবানির পশু গর্ভবতী হলে করণীয় কি
কোরবানির জন্য নির্ধারিত গৃহপালিত পশু বা বাজারে কেনা পশু যদি বুঝতে না পারেন যে পশুটি গর্ভবতী বা জবাই করার পরে বুঝা গেল গর্ভবতী তাহলে কি করবেন। হাদিসের ব্যখ্যায় এসেছে যদি বাচ্চা জীবিত থাকে তাহলে পশুর সঙ্গে বাচ্চাটিকেউ জবেহ করা ওয়াজিব আর যদি জবেহ না করে রেখে দেওয়া হয় ও ঈদের দিন অতিক্রম করে তাহলে সদকা করে দেওয়া ওয়াজিব।
কোরবানির গোশত ভাগের সঠিক নিয়ম কি
কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। তাঁর নিকট সানিদ্ধ লাভ করা। ঈদের দিন পশু কোরবানি বা জবেহ করা ওয়াজিব, মাংশ খাওয়া সুন্নত। পশুর মাংশ তিন ভাগে ভাগ করে এক ভাগ গরিব দুঃখীর
মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর মধ্যে বিলিয়ে দিতে হবে আর এক ভাগ খাওয়ার জন্য রাখা যেতে পারে। অনেকে আবার সাত ভাগ করে এক ভাগ বিলিয়ে দেন, এটা অনুচিত।
নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করা ও বর্য্য পরিস্কার উচিত
পরম করুনাময় আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি জন্য বা নিকট্য লাভের উদ্দেশে এই আত্মত্যাগ বা কোরবানি। মনে রাখতে হবে এই কোরবানির জন্য সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের কোন অসুবিধার কারণ না হয়। পশু কোরবানি করা ওয়াজিব, মাংস খাওয়ার সুন্নত আর বর্জ্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা ফরজ।
যেখানে সেখানে বা রাস্তার পাশে পশু জবেহ না করে নির্দিষ্ট স্থানে জবেহ করতে হবে। কোরবানির পরে পরেই রক্ত-প্রসাব পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। পায়খানা বা অন্যান্য বর্জ্যগুলো নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিতে হবে বা মাটির মধ্যে পুতে ফেলতে হবে।
কোরবানির পশুর শিং ও হাড্ডি নিয়ে বিভ্রান্তি
অনেকের ধারণা পশু জবেহ করার পরে রক্তের মধ্যে পা চুবিয়ে রাখলে পায়ে কোন রোগ হয় না। অনেকে আবার ধারণা করেন এই পশুর শিং বা হাড্ডি বাড়িতে বা গাছে ঝুলিয়ে রাখলে জ্বীন-ভূতের আক্রমণ হয় না। এ সম্পর্কে হাদিস বা শরীয়তসম্মত কোন ব্যখ্যা নেই। এটা একটা কুসংস্কার মাত্র।
পরিশেষ
ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই ত্যাগ বা পশু কোরবানি। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন, প্রিয় পুত্র কোরবানির পরিবর্তে প্রিয় পশু কোরবানির নিয়ম চালু করে দিয়েছেন। শর্ত মেনে এই পশু নির্বাচন করতে হবে ও জবেহ করতে হবে। মনে রাখতে হবে যেন সামান্য ভুলত্রুটির কারণে এই কোরবানি বিফলে না যায়।
আশা করি আজকের এই পোস্টটি পড়ে কোরবানি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন ও উপকৃত হয়েছেন। পশু কোরবানির মাধ্যমে যেমন আল্লাহর সানিদ্ধ লাভ করা যায় তেমনি আমাদের আত্মীয়-স্বজন পাড়া- প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। তাই সমাজের বিত্তবান ও সামর্থ্যবান সবারই কোরবানি দেওয়া উচিত।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url