নিমপাতা ব্যবহারের উপকারিতা গুলো কি কি
উপকারী নিমপাতার ব্যবহার ভারতবর্ষে প্রায় ৫ হাজার বছর আগে থেকে প্রচলিত আছে। এই নিমপাতা গুলোর ঔষধিগুণ এত বেশি যে ভেষজবিদ্যায় বা আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে নিমপাতাকে জাদুকরি পাতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। নিমপাতা ব্যবহারের উপকারিতা গুলো জানার জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি পুরোপুরি ধৈর্য সহকারে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
ছোট বড় সকলেই এই নিমপাতা সম্পর্কে অবগত আছেন। তাই এ নিমপাতার পরিচয় বলার মত কিছু নেই। বিভিন্ন ঔষুধিগুণ সম্পন্ন নিমপাতা এত তেতো যে খাওয়ার সময় যে কাউরি সমস্যা হতে পারে কিন্তু এই তেতো নিমপাতা এত উপকারী যে সেগুলো বলে শেষ করার নয়। জাদুকরি নিমপাতা ব্যবহারের উপকারিতাগুলো নিম্নে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করা হলো।
পেজ সূচিপত্র
গোসলে নিমপাতার উপকারিতা
নিমপাতা ব্যবহারের উপকারিতা গুলো আলোচনায় এখন আমরা জানবো গোসলে নিমপাতার উপকারিতা সম্পর্কে। পানির মধ্যে নিমপাতা দিয়ে সেদ্ধ করে পানি ঠান্ডা করার পর সেই পানি দিয়ে গোসল করলে স্ক্রিনের এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। শরীর শীতল হয়। যাদের গায়ে দুর্গন্ধ থাকে সেই দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়াও সর্দি-জ্বরের উপশমকারী হিসেবেও নিমপাতার কদর রয়েছে।
ত্বক ও চুলের যত্নে নিমপাতার উপকারিতা
অনেকেরই মাথার চুলের মধ্যে স্কাল্পে ফুসকুড়ি বের হয়। এই ফুসকুড়ি গুলোতে নিমপাতা বেটে লাগিয়ে রাখলে ফুসকুড়ি গুলো ভালো হয়ে যায়। পাশাপাশি নিমপাতা নিয়মিত ব্যবহারের কারণে
আরো পড়ুনঃ টাফনিল এর কাজ খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা
চুলগুলোকে করে স্বাস্থ্যজ্জ্বল, চিকচিকে ও সিল্কিসুন্দর। চুল ঝরে পড়া রোধ করে ও মাথার খুশকি দূর করে। নিমপাতা নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল পাকা রোধ হয় ও মাথা ঠান্ডা রাখে। শরিরের ফুসকুড়িও ভালো হয়।
এন্ট্রিঅক্সিডেন্ট তৈরিতে নিমপাতার উপকারিতা
নিমপাতার উপকারিতাগুলো শিরোনাম আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো নিমপাতার এন্ট্রিঅক্সিডেন্ট প্রপাটিজ সম্পর্কে। অক্সিডেন্ট স্কাবিজ়েন্ড নামক এক ধরনের রাসায়নিক কেমিক্যাল থাকে নিমপাতায় যা শক্তিশালী
আরো পড়ুনঃ মোনাস ১০ এর কাজ খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা
এন্ট্রিঅক্সিডেন্টগুন সম্পন্ন। নিমপাতার এই অক্সিডেন্ট স্কাবিজ়েন্ড গুলো ফ্রিরেডিক্যালের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে এবং অক্সিডেশন প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়ার মাধ্যমে শরীরকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাঙ্গাস নিরাময়ে নিমপাতার উপকারিতা
নিমপাতা ব্যবহারের উপকারিতা গুলো আলোচনায় এখন আমরা জানবো ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাঙ্গাস এর বিরুদ্ধে কার্যকারিতা সম্পর্কে। প্রাকৃতিক ভেষজগুণ ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ নিমপাতায় রয়েছে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাঙ্গাস নিরাময়ের মতো ঔষধিগুণ। ভাইরাস জনিত গুটিবসন্ত রোগ হলে নিমপাতা
কাঁচা হলুদের সঙ্গে বেটে ঐ গুটি বসন্তের উপরে নিয়মিত কয়েকদিন লাগালে গুটি বসন্ত ভালো হয়। এই ধরনের অনুজীবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে ও তাদের বংশবিস্তার রোধ করে। যার কারণে ব্যাকটেরিয়া ,ভাইরাস ও ফাঙ্গাস জনিত রোগ নিরাময়ে নিমপাতার যথেষ্ট কদর রয়েছে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নিমপাতার উপকারিতা
নিমপাতা ব্যবহারের উপকারিতা গুলো আলচনায় এখন আলোচনা করবো রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণের নিমপাতার উপকারিতা সম্পর্কে। গবেষণায় দেখা গেছে যে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নিমপাতার রয়েছে বিশেষ ধরনের ওষুধিগুণ।
যারা নিয়মিত ব্লাড প্রেসার ঔষুধ খান, সে ঔষুধের পাশাপাশি নিমপাতার রস বা বড়ি বানিয়ে খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সুফল পাওয়া যায় পাশাপাশি রক্ত বিশুদ্ধকরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে নিমপাতা।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে নিমপাতার ভূমিকা
নিমপাতা ব্যবহারের উপকারিতা গুলো এর মধ্যে অন্যতম একটি উপকারিতা হোল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিমপাতা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। বিজ্ঞানীদের গবেষণালব্ধ ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যে সমস্ত রোগীদের
আরো পড়ুনঃ MM Kit এর কাজ খাওয়ার নিয়ম ও দাম
রেনডম ব্লাড সুগার বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে না তারা যদি নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধের সাথে নিমপাতার বড়ি কিংবা রস করে খান তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। কারণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে নিমপাতায় এন্ট্রিগ্লাইসেমিক ইফেক্ট রয়েছে।
দাঁত ও মুখ এর রোগ নিরাময়ে নিমের উপকারিতা
নিমপাতা ব্যবহারের উপকারিতা গুলো এর মধ্যে অন্যতম একটি উপকারিতা হলো দাঁত ও মুখের রোগ নিরাময় করে। প্রাচীনকাল থেকেই নিমের ডাল দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা বা ব্রাশ করার নিয়ম প্রচলিত আছে। নিয়মিত নিমের ডাল দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করলে
আরো পড়ুনঃ অর্থসহ ছেলে শিশুর ইসলামিক নামের তালিকা
দাঁতের ক্ষয় রোগ, দাঁতর মাড়িতে পচন রোগ,মাড়ি ফোলা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মুখের দুর্গন্ধ দূর করার পাশাপাশি দাঁতে প্লাগ জমে পাথর হওয়া বন্ধ করে। মুখ ও দাঁতের বিভিন্ন রকম রোগ নিরাময় করে দাঁতগুলোকে করে তুলে শক্তও, ঝকঝকে সাদা ও উজ্জ্বল।
কৃমিনাশক হিসেবে নিমপাতার উপকারিতা
নিমপাতা ব্যবহারের উপকারিতা গুলো অনেক, এর মধ্যে অন্যতম একটি উপকারিতা হোল নিমপাতার কৃমিনাশক গুণ। কৃমিনাশক হিসেবে রয়েছে নিমপাতার যথেষ্ট খ্যাতি। নিমপাতার রস বা বড়ি বানিয়ে নিয়মিত কয়েকদিন খেলে কৃমি দূর হয়।
নিমপাতার বড়ি বা রস অন্ত্রের সকল ধরনের কৃমির বিরুদ্ধে কাজ করে। নিমপাতার বড়ি বা রস খালি পেটে বা বাসি পেটে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায় ।
কালো আঁচিল দূর করতে নিমপাতার উপকারিতা
নিমপাতা ব্যবহারের উপকারিতা গুলো আলোচনায় এখন আমরা জানবো সোনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা বা নিমপাতা কালো আঁচিল দূর করে এ সম্পর্কে। কালো আঁচিল দূর করার জন্য নিমপাতার যথেষ্ট উপকারিতা রয়েছে। ৩ থেকে ৪ ফোঁটা নিমের তেল পানির সাথে মিশিয়ে নিয়মিত কয়েকদিন কালো আঁচিলের উপর লাগালে কালো আঁচিল ভালো হয় এবং আঁচিল চিরতরে দূর হয়ে যায়।
টিউমার ও ক্যান্সার নিরাময়ে নিমপাতার উপকারিতা
নিমপাতা ব্যবহারের উপকারিতা গুলো এর আলোচনায় এখন আমরা জানবো টিউমার ও ক্যান্সার নিরাময়ে নিমপাতার উপকারিতা সম্পর্কে। বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের গবেষণায় লব্ধ ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে
যে নিমপাতার মধ্যে পলিস্যাকারিডস্ ও লিউমনোয়েডস্ নামক দুটি রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, যা কিনা রক্তের টিউমার সেল ও ক্যান্সার সেলকে ধ্বংস করতে সহায়তা করে। নিমপাতার ব্যবহারে টিউমার ও ক্যান্সার থেকে মুক্তি মিলে।
নিমপাতা ব্যবহারের বা খাওয়ার নিয়ম
বহু পুষ্টিগুণ ও ভেষজগুণ সম্পন্ন নিমপাতা বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নিমপাতা ব্যবহারের বা খাওয়ার নিয়মগুলো নিম্নে রাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো।
- নিমপাতা পানিতে সিদ্ধ করে ওই পানি ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
- নিমপাতা শীল-পাটায় বেটে বড়ি করে খাওয়া যেতে পারে।
- নিমপাতা বেটে রস করে খাওয়া যেতে পারে।
- নিমপাতার ডাল দাঁত পরিষ্কার করার জন্য দাঁতন হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
- গুটি বসন্তের চিকিৎসায় নিমপাতা কাঁচা হলুদের সঙ্গে বেটে লাগালে গুটি বসন্ত ভালো হয়।
- নিমপাতা তেল পানির সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
নিমপাতা ব্যবহারে সতর্কতা
নিমপাতার উপকারিতা অনেক! মানব কল্যাণে ব্যবহৃত অনেক ভেষজগুণ সম্পন্ন এই নিমপাতা ব্যবহারে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সতর্কতাগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।
- ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নিমপাতা ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বাচ্চাদের বমির ভাব হতে পারে ও দুর্বল লাগতে পার।
- গর্ভবতী ও প্রসূতি মাদের ক্ষেত্রে নিমপাতা ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
- নিমপাতা হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ সহায়তা করে, তাই যাদের লো ব্লাড প্রেসার আছে তাদের না খাওয়াই ভালো।
- যিনারা নিমপাতার প্রতি অতি সংবদনশীল তাদের নিমপাতা না খাওয়া উচিত।
- পরিমাণমতো নিমপাতার রস খাওয়া উচিত, বেশি পরিমাণ নিম পাতার রস খাওয়া উচিত নয়।
লেখকের মন্তব্য
বহুগুণে গুণান্বিত নিমপাতা সতর্কতার সহিত ব্যবহার করলে শরীরের বিভিন্ন পর্যায়ে খুব ভালো উপকার পাওয়া যায়। নিমপাতা ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন পুষ্টিবিজ্ঞানীর সাথে আলাপ-আলোচনা বা পরামর্শ করে নেওয়া ভালো। বাড়ির আশেপাশে খালি জায়গা গুলোতে ঔষধি গাছ হিসেবে নিমগাছের চাষ করা উচিত।
আশা করি আজকের এ আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা নিমপাতার ব্যবহার ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন এবং আপনাদের ভালো লেগেছে। আপনাদের এই ভালো লাগাটা বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। নিয়মিত পরিমাণমতো নিমপাতা খাবেন সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url