ভিটামিন ই ক্যাপসুল মুখে ব্যবহারের নিয়ম
ভিটামিন ই ক্যাপসুল মুখে ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে আজকের লেখা। আজকে আমরা জানবো ভিটামিন ই ক্যাপসুল কিভাবে ব্যবহার করলে মুখের ত্বক সুন্দর হয়, সৌন্দর্য বাড়ে ও রং ফর্সা করে। এগুলো জানার জন্য পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভিটামিন ই এর বৈজ্ঞানিক নাম টোকোফেরোল। মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের তালু পর্যন্ত প্রত্যেকটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠনে ভিটামিন ই এর ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে মুখের ত্বক ও চুলের লাবণ্য বৃদ্ধিতে। বিভিন্ন ওষুধের দোকানে লাল ও সবুজ রঙের ভিটামিন ই ক্যাপসুল কিনতে পাওয়া যায়।
পেজ সূচিপত্রঃ
মুখের ত্বক ফর্সা করতে ভিটামিন ই এর ব্যবহার
ভিটামিন ই ক্যাপসুল মুখের ত্বক ফর্সা করার কার্যকরী উপাদান। নিয়মিত ভিটামিন ই ক্যাপসুলের তেল মুখের ত্বকে ব্যবহার করলে মুখমন্ডল হবে দাগমুক্ত, উজ্জ্বল, সুন্দর ও ফর্সা। মুখের রং ফর্সা করার জন্য আপনাদেরকে একটু কষ্ট করে এই মিশ্রণটা বানিয়ে নিতে হবে।
এই মিশ্রণটি তৈরি করার জন্য ছোট একটি পাত্রে এক চা চামচ মধু, দুই টেবিল চামচ পেঁপের পেস্ট ও দুই-তিনটা ভিটামিন ই ক্যাপসুলের তেল একত্রে মিশাতে হবে। প্রতিদিন রাতে এই মিশ্রণ পুরো মুখমণ্ডলে লাগাতে হবে।
মুখমণ্ডলে লাগানো হলে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রাখার পরে মুখ পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিত এভাবে মিশ্রণটি মুখমণ্ডলে ব্যাবহার করতে থাকলে ভিটামিন ই এর গুনে আপনার মুখমন্ডল হবে আরও উজ্জ্বল, ফর্সা, সুন্দর ও গ্লোয়িং।
চুলের যত্নে ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর ব্যবহার
ভিটামিন ই ক্যাপসুল মুখে ব্যবহারের নিয়ম জানতে গিয়ে এখন জানবো ভিটামিন ই ক্যাপসুল চুলের যত্নে কার্যকরীতা সম্পর্কে। ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করলে মাথার খুশকি দূর করে চুলগুলোকে করে স্বাস্থ্যজ্জ্বোল, প্রাণবন্ত ও সিল্কী।
আরো পড়ুনঃ এডিস মশা ও ডিম গুলো প্রতিরোধে করণীয় কি
ভিটামিন ই ক্যাপসুল চুলে ব্যবহারের আগে আপনাদেরকে কষ্ট করে মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে। এই মিশ্রণ তৈরি করার জন্য একটি কাঁচের পাত্রে ৮ থেকে ১০ চামচ নারিকেল তেল ও তিন থেকে চারটিভিটামিন ই ক্যাপসুলের তেল একসাথে মিশাতে হবে।
ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এই মিশ্রণটি দুই থেকে তিন দিন পর পর মাথার চুলে ভালো মতো মেসেজ করতে হবে বা লাগাতে হবে। কিছুদিন ব্যবহার করলে মাথা হবে খুশকিমুক্ত, চুল হবে লম্বা, স্বাস্থ্যজ্জ্বল, সিল্কি, ঘন ও কালো। আপনি হবেন কালো কেশী।
মুখের ব্রণ দূর করতে ভিটামিন ই এর ব্যবহার
ভিটামিন ই ক্যাপসুল মুখে ব্যবহারের নিয়ম আলোচনায় এখন জানবো ভিটামিন ই ক্যাপসুল মুখে ব্রণের দাগ দূর করার জন্য উপকারীতা সম্পর্কে। মুখমণ্ডলে ব্রণ ভালো হয়ে যাওয়ার পরে অথবা ব্রণ থাকা অবস্থায় এক ধরনের ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
আরো পড়ুনঃ মাসে ৩০ হাজার টাকা আয় করার দারুন সব সহজ উপায়
এই ক্ষত বা ব্রন দূর করার জন্য প্রতি রাতে দুই তিনটে ভিটামিন ই ক্যাপসুলের তেল রাতে সরাসরি ব্রণের উপর লাগিয়ে রেখে সকালে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ভিটামিন ই এর এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রপার্টি এই ক্ষত পূরণে সহায়তা করে।
এভাবে তিন-চার সপ্তাহ ভিটামিন ই ক্যাপসুলের তেল নিয়মিত ব্রণে বাবহার করলে ব্রণ ও ব্রণের ক্ষতঁ ভালো হয়ে ত্বক হবে মসৃন ,সুন্দর, উজ্জ্বল ও লাবণ্যময়।
নখের যত্নে ভিটামিন ই এর ব্যবহার
ভিটামিন ই ক্যাপসুল মুখে ব্যবহারের নিয়ম আলোচনায় এখন জানবো ভিটামিন ই ক্যাপসুল আমাদের হাত ও পায়ের নখের যত্নে কার্যকারিতা সম্পর্কে। পারিবারিক কাজকর্ম করার সময় আমাদের নখগুলো সব সময় পানিতে ভিজে থাকে, ফলে এই নখগুলো হয়ে যায় ভঙ্গুর, লালচে বা হলদেটে। সেজন্য নখের যত্ন নেওয়া জরুরি।
সারাদিন কাজকর্ম করার পরে রাত্রে ঘুমানোর সময় ভিটামিন ই ক্যাপসুল থেকে তেল বের করে নখের উপরে লাগিয়ে রাখতে হবে। সারা রাতে নখগুলোর লালচে ও হলদেটে ভাব দূর করে এবং নখগুলো দেখতে সুন্দর হয়।
রোদে পোড়া কালো দাগ দূর করতে ভিটামিন ই এর ব্যবহার
ভিটামিন ই ক্যাপসুল মুখে ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে আলোচনায় এখন জানবো ভিটামিন ই ক্যাপসুল রোদে পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া ত্বক উজ্জ্বল করতে এর কার্যকারীতা সম্পর্কে। আমরা সাধারণত রোদে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করে থাকি।
আরো পড়ুনঃ বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ত
সানস্ক্রিন ক্রিম এর পরিবর্তে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করলে সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মির প্রভাবে ত্বক পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। যাদের ত্বক আগে থেকেই পুড়ে কালো দাগ পড়েছে তারা যদি নিয়মিত ভিটামিন ই ক্যাপসুলের তেল
কালো দাগের উপর লাগতে থাকেন তাহলে ঐ কালো দাগ উঠে যাবে। যাদের ত্বক জ্বালা-পোড়া করে বা চুলকায় তারা ভিটামিন ই ক্যাপসুলের নির্যাস কুলিং ক্রিমের সাথে ব্যবহার করেন তাহলে ত্বকের জ্বালাপোড়া ও চুলকানি ভাব দূর হয়ে যাবে।
গলা হাঁটু কুনই এর কালো দাগ দূর করতে ভিটামিন এর ব্যবহার
ভিটামিন ই ক্যাপসুল মুখে ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে অ্যারও বলা যায় ভিটামিন ই মুখের রং ফর্সা করার পাশাপাশি হাঁটু, কুনই ও গলার কালো দাগ দূর করার জন্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। হাঁটু, কুনই ও গলার মোটা কালো দাগগুলো দূর করার জন্য এক চা-চামচ পরিমাণ ভিটামিন ই ক্যাপসুলের তেল,
আরো পড়ুনঃ সজিনা পাতার উপকারিতা, সজনে পাতার পুষ্টিগুণ
দুই চা-চামচ দই, ৩-৪ ফোঁটা লেবুর রস ও এক চা-চামচ মধু এক সাথে মিশিয়ে কালো দাগের উপরে ভালো করে লাগিয়ে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা রাখার পরে পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে নিয়মিত ৩-৪ সপ্তাহ ব্যবহার করলে কালো দাগগুলো উঠে যাবে, ত্বক স্বাভাবিক রং ফিরে পাবে ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি হবে।
মুখের বলিরেখা দূর করতে ভিটামিন ই এর ব্যবহার
ভিটামিন ই ক্যাপসুল মুখে ব্যবহারের নিয়ম আলোচনায় এখন জানবো ভিটামিন ই ক্যাপসুল মুখের বলিরেখা দূর করে ও এন্টি এজিং প্রপার্টি শো করে সে সম্পর্কে। ভিটামিন ই ক্যাপসুলে থাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বককে বুড়িয়ে দেওয়া থেকে রক্ষা করে। এক চামচ দুধের সর ও
এক চামচ মধুর সাথে দুই তিনটে ভিটামিম ই ক্যাপসুলের তেল এক সাথে মিশিয়ে পেষ্ট করে বলিরেখার উপর লাগিয়ে রাখতে হবে। ২০-২৫ মিনিট লাগিয়ে রাখার পরে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত দু-তিন সপ্তাহ ব্যবহার করলে মুখের বলিরেখা দূর হয়ে যাবে। আপনি হবেন প্রাণবন্ত।
চোখের নিচে কালো দাগ দূর করতে ভিটামিন ই এর ব্যবহার
ভিটামিন ই ক্যাপসুল মুখে ব্যবহারের নিয়ম শিরোনাম আলোচনায় এখন জানবো ভিটামিন ই ক্যাপসুল চোখের নিচে কালো দাগ দূর করে ত্বকগুলোকে করে তুলে আরো সুন্দর ও উজ্জ্বল সম্পর্কে। ভিটামিন ই ক্যাপসুল চোখের কালো দাগ দূর করার পাশাপাক
আরো পডুনঃ দ্রুত ওজন কমানোর ১০টি উপায়
ত্বকে পুষ্টি যোগান দেয় এবং মৃত কোষ দূর করে জীবন্ত কোষ তৈরি করে, ফলে ত্বক হয় ওঠে আরো প্রাণবন্ত ও ফর্সা। চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার জন্য একটি বা দুইটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল থেকে ওর তেল বা নির্যাস বের করে চোখের নিচের কালো অংশে
লাগিয়ে হালকা করে মেসেজ করতে হবে। এভাবে ২০-২৫ মিনিট রাখার পরে ধুয়ে ফেলতে পারেন। ভিটামিন ই ক্যাপসুল নিয়মিত ব্যবহার করলে চোখের নিচের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।
ঠোঁটের যত্নে ভিটামিন ই এর ব্যবহার
ভিটামিন ই ক্যাপসুল মুখে ব্যবহারের নিয়ম আলচনায়া এখন আলোচনা করবো ভিটামিন ই ক্যাপসুল কালচে, ফাটা ও অমসৃণ ঠোঁটকে সুন্দর করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে সে সম্পর্কে। শুধু শীতের সময় নয় কারো কারো ঠোঁট সারা বছর ফাটে বা কালচে রং ধারণ করে।
এ ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য ভিটামিন ই ক্যাপসুল থেকে তেল বের করে দু-এক ফোঁটা তেল রাতে ঘুমানোর সময় ঠোঁটে লাগিয়ে রেখে ঘুমিয়ে পড়ুন।.সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ঠোঁট পরিস্কার পানি দিয়া ধুয়ে ফেলুন।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের অন্য আর একটি উপায় আছে। সেটি হলো আপনি যে লিফজেল বা ভেজলিন ব্যবহার করেন তার সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুলের তেল মিশিয়ে নিন, প্রয়োজন মতো ব্যবহার করুন।
এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করতে থাকলে একপর্যায়ে ঠোটের কালো দাগ চলে যাবে, ঠোট ফাটা বন্ধ হবে, ঠোঁট হবে মলিন, মসৃণ ও সুন্দর। শীতে আর ঠোঁটও ফাটবেনা চোটও লাগবে না। আপনি থাকবেন আরো হাস্যজ্জোল।
ভিটামিন ই এর অভাব জনিত রোগ সমুহ
ভিটামিন ই ক্যাপসুল অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি ভিটামিন যা মানব শরীরে জন্য খুবই দরকার। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের সারা দিয়ে ১৫ মাইক্রগ্রাম ভিটামিন ই এর প্রয়োজন হয়। মুখে ব্যবহারের পাশাপাশি মুখে খাওয়াও যায়। যদি কোন কারনে ভিটামিন ই এর অভাব দেখা দেয় তাহলে মানব শরীরে নিন্নোক্ত রোগ গুলো হতে পারে যাকে বলে ভিটামিন ই এর অভাব জনিত রোগ।
- দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
- রক্ত জমাট না বাধতে পারে।
- পেশির ক্ষয় বেড়ে যেতে পারে।
- পেশির অসাড় ভাব বা চলাফেরা সমস্যা হতে পারে।
- পেশিশক্তি কমে যেতে পারে।
- কোষের ক্ষয় বেড়ে যেতে পারে।
- ত্বকের কোষগুলো দুর্বল হয়ে যেতে পারে ( মুখের কোষ, চুলের কোষ, নখের কোষ ইত্যাদি কোষসমুহ)
- যৌন ক্রিয়া কমে যেতে পারে।
ভিটামিন ই যেসব খাদ্যে পাওয়া যায় বা উৎস সমূহ
বিভিন্ন রকমের খাবারের মাধ্যমে শরীরে ভিটামিন ই চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাদ্যগুলোর মধ্যে উল্লেখ খাদ্যগুলো আলোচনা করা হলো। ভিটামিন ই এর উৎস বা ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাদ্যসমুহ নিম্নরূপ -
- বিভিন্ন রকমের সবুজ শাকসবজি।
- সূর্য্যমুখীর তেল ও সূর্যমুখীর বীজ।
- গম, সয়াবিন ও সাফলোয়ার।
- চিনাবাদাম, বাদাম বা কাজু বাদাম।
- বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ তেল।
- ডিমের কুসুম।
- আখরোটসহ নানারকমের খাদ্যসমুহ।
লেখক এর মন্তব্য
ভিটামিন ই আমাদের শারীরিক ঘঠনে খুবই কম পরিমাণে প্রয়োজন হয় কিন্তু খুবই কার্যকরী। তাই ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাদ্য বেশি বেশি খেতে হবে। নিয়ম-কানুন মেনে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। প্রথমেই বাজারে বিক্রিত ভিটামিন ই ক্যাপসুল না কিনে খাদ্য- খানার মাধ্যমে ভিটামিন ই এর চাহিদা পূরণের চেষ্টা করতে হবে।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল নিয়ম মেনে মুখে ব্যবহার করলে আপনিও হতে পারেন সুন্দর ,ফর্সা ও লাবণ্যময়ী। আজকের এ লেখার উদ্দেশ্য ছিল ভিটামিন ই সম্পর্কে জানা, মুখে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় ও ব্যবহারের নিয়ম কানুন। আশা করছি এই লেখাটি পড়ে আপনি ভিটামিন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন ও উপকৃত হয়েছেন। ধন্যবাদ।
Good information