এডিস মশা ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয় কি
এডিস মশা ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয় কি? পড়ুন, এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব আমাদের বাংলাদেশে বেড়েই চলেছে। ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব এতটাই তীব্র হয়েছে যে দেশের প্রতিটি মানুষ চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। এই ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাবে অনেকই শক সিনড্রোমে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ তীব্র জ্বালা-যন্ত্রনা ও কষ্ট অনুভব করে বেঁচে ফিরছেন আবার অনেকেই জীবন যুদ্ধে ডেঙ্গুর কাছে পরাজিত হয়ে মারাও যাচ্ছেন।
যারা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পরে সুস্থ হয়ে ফিরছেন, তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে অনেক সময় লাগছে। শরীরের উপরে রয়ে যাচ্ছে মানসিক ও শারীরিক দুর্বলতা। আজকের এই লেখাগুলো বা আর্টিকেলটি যদি আপনি পুরোপুরি পড়েন তাহলে ডেঙ্গু সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানতে পারবেন। তাই ধৈর্য সহকারে এই আর্টিকেলটি বা লেখাগুলো পড়ার অনুরোধ রইলো। এডিস মশা ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধের এখনই সময়।পেজ সূচিপত্র
এডিস মশার পরিচিতি
এডিস মশা ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয় কি এ আলোচনায় প্রথমেই এডিস মশার পরিচিতি সম্পর্কে জানা দরকার। এডিস মশার পরিচিতি সম্পর্কে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে সেই অনুসারে বলা যায় এডিস মশা খালি চোখে সনাক্ত করা যায়। এডিস মশার দেহ সাদা-কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে।
ডোরাকাটা দাগ থাকার কারণে ডেঙ্গু জীবাণু বহনকারী এডিস মশাকে টাইগার মশা বলা হয়। এই জাতীয় মশা দেখতে মাঝারি আকারের হয়ে থাকে।এডিস মশার অ্যন্টেনায় অনেকটা দাড়ির মতো থাকে। পুরুষ এডিস মশার অ্যান্টেনা দেখতে স্ত্রী এডিস মশার এন্টেনার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি লোমশ হয়।
দেহের এই গঠনগুলো দেখে এডিস মশা চেনা সম্ভব বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। এডিস মশা দুই ধরনের জীবাণু বা ভাইরাস বহন করা যা মানব শরীরে ডেঙ্গু ও পীতজ্বরের মত ভয়ংকর দুইটি রোগ সৃষ্টি করে।
এডিস মশার প্রকারভেদ
এডিস মশা ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয় কি? এই শিরোনামটির এই অংশে এডিস মশার রকম ভেদ নিয়ে আমরা আলোচনা করব। বাসা-বাড়ির আনাচে-কানাচে, ঝোঁপে-জঙ্গলে, নোংরা- নর্দমায় ও বনে কিম্বা বাজারে বিভিন্ন রকমের প্রচুর মশা দেখা যায়। যে কোন মশাতে কামড়ালেই কোন না কোন সিমটম দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ স্মার্ট ফোন কেনার সময় যে ১৩ টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন সবগুলো মশার মধ্যে মাত্র চার প্রজাতির এডিস মশা কামড় দিলে কেবল ডেঙ্গু ফিভার বা জ্বর হতে পারে। অর্থাৎ এডিস মশা চার প্রকার। নামগুলো নিম্নরূপ
- এডিস ইজিপ্টাই
- এডিস এ্যালবোপিকটাস
- এডিস পলিনেসিয়েনসিস
- এডিস নিভেনাস
এডিস মশা কখন কামড়ায়
এডিস মশা ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয় কি? এই শিরোনামটি আলোচনার এ অংশে আমরা জানবো এডিস মশা কখন কামড়ায় সে সম্পর্কে। এডিস মশা দিনের বেলায় যে কোন সময় কামড়াতে পারে। বিভিন্ন গবেষণালব্ধ ফলাফল বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ডাঃ এম এম আখতারুজ্জামান কর্তৃক স্বাক্ষরিত
আরো পড়ুনঃ সৌদি আরবে কোন কাজে চাহিদা ও বেতন বেশি।
যে পরিপত্র প্রকাশ করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে এডিস মশা সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কামড়াতে পারে। তবে কামড়ানোর হারটা সবচেয়ে বেশি সূর্যোদয়ের পরে দুই-তিন ঘন্টা এবং সূর্যাস্তের পূর্বে কয়েক ঘন্টা। ডাঃ আখতারুজ্জামান নিশ্চিত করেছেন যে এডিস মশা রাতের বেলা কামড়ায় না।
এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে করণীয়
এডিস মশাই মূল কালপিট যে আমাদের শরীরে ডেঙ্গু জ্বর ঘটায়। এডিস মশা ধ্বংস করতে পারলেই আমরা ডেঙ্গু জ্বর থেকে মুক্তি পেতে পারি। এডিস মশার আবাসস্থল ধ্বংস করার মাধ্যমেই এর বংশ বিস্তার রোধ করতে হবে। এডিস মশা যে সমস্ত জায়গায় ডিম পেড়ে লার্ভার মাধ্যমে বংশবিধার করে,
ঐ সমস্ত জায়গায়গুলো ধ্বংস করতে পারলে আমরা এডিস মশার বংশবিস্তার রোধ করতে পারবো ও ডেঙ্গু জ্বর থেকে মুক্তি পাবো। এডিস মশা, তিন দিনের বেশি সময় ধরে জমে থাকা স্বচ্ছ ও পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে। এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে হবে।
- আমাদের চারপাশের পরিবেশ বা জায়গাগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- নোংরা জায়গাগুলোতে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে জীবনমুক্ত রাখতে হবে।
- ফুলের টব, এসি, ফ্রিজের নিচেসহ বাসা বাড়িতে যেকোন স্থানে জমে থাকা পানি প্রতিনিয়ত ফেলে দিতে হবে।
- বাসা বাড়িতে ব্যবহার্য পাতিল,থালা, বাটিসহ যে সমস্ত পাত্রে পানি জমে থাকতে পারে ওই সমস্ত পাত্রগুলো উল্টিয়ে রাখতে হবে যেন পানি জমে থাকতে না পারে।
- পানি জমে থাকতে পারে এমন পরিত্যক্ত জিনিস যেমন ডাব বা নারকেলের খোসা, ড্রাম বা ব্যারেল, ঢাকনা বিহীন পানির ট্যাংকি বা চৌবাচ্চা, পোষা প্রাণীর পানির পাত্র, টায়ার, বাড়ি আশেপাশে পড়ে থাকা পাত্রে জমা থাকা পানি ও প্লাস্টিকের বোতলসহ সকল পাত্রে জমে থাকা পানি তিন দিনের মধ্যে ফেলে দিতে হবে যেন মশা ডিম পেড়ে বংশ বিস্তার করতে না পারে।
- যদি কোন কারনে পানি ফেলে দেওয়া সম্ভব না হয় বা পানি সংকট দেখা দিতে পারে সেই ক্ষেত্রে ওই সমস্ত বড় বড় জায়গাগুলোতে মশক নিধোন ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।
- বাড়ির আশেপাশে যে সমস্ত নোংরা জায়গাগুলোতে মশা বংশবিস্তার করে এমন জায়গাতে নিয়মিত বিরোতিতে মশক নিধোন ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে
- মশার বংশবিস্তার রোধ মনেই মশার কামড় বন্ধ ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ।
ডেঙ্গু জ্বর কি
এডিস মশা ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয় কি? এই শিরোনামটি আলোচনার এই অংশে আমরা ডেঙ্গু জ্বর কি বা কাকে বলে ডেঙ্গু জ্বর সে সম্পর্কে জানব। ডেঙ্গু হলো এক ধরনের ভাইরাস। এই ভাইরাস বহন করে এডিস ইজিপ্টাই নামক এক ধরনের মশা।
আরো পড়ুনঃ গর্ভে বাচ্চার সুস্থতা ও ত্রুটি কিভাবে বুঝবেন?
ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়ে জ্বর হলে সেই জ্বরকে ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু জ্বর বলে। ডেঙ্গু জ্বরের জীবনু বহনকারী এডিস মশা কাউকে কামড়ানোর চার থেকে ছয় দিন ( ০৩ - ১৩ ক্ষেত্রে ) এর মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের প্রকারভেদ
এডিস মশা ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয় কি? এ শিরোনামটি আলোচনার এই অংশে আমরা জানবো ডেঙ্গু জ্বরের প্রকারভেদ সম্পর্কে। ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশার কামড়ে হয় এটা আমরা আগেই জেনেছি।
এই ডেঙ্গু জ্বর হালকা অবস্থা থেকে শুরু করে তীব্র থেকে তীব্রতর অবস্থার সৃষ্টি করে। জ্বরের প্রকোপ বা তীব্রতার উপর ভিত্তি করে গবেষকরা ডেঙ্গু জ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যেমন ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর ও হিমোরেজিক ডেঙ্গু ( ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ) জ্বর।
ক্লাসিকাল ডেঙ্গু ফিভার বা জ্বর
সাধারণত শরীর প্রচন্ড ব্যথাসহ তীব্র জ্বর হয়। এই জ্বর ১০৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বিশেষ করে কোমর, হাড়, পিঠসহ অস্থি সন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র থেকে তীব্রতার ব্যথা হয়। এছাড়াও মাথা ব্যথা ও চোখের পিছনে ব্যথা অনুভূত হতে। এই জ্বর হলে মনে হয় হাড়গুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ স্মার্টফোন ব্যবহারে শিশুদের কি কি ক্ষতি করে
তাই এই জ্বরের আরেক নাম হলো 'ব্রেক বন ফিভার '।এই জ্বরে আক্রান্ত হওয়া থেকে চার-পাঁচ দিনের সময় সারা শরীর জুড়ে লাল দানা দেখা যায়, যাকে বলা হয় স্কিন রেস যা দেখতে ঘামাচি বা এলার্জির মত। সাথে বমি বমি ভাব এমনকি বমিও হতে পারে।রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ করে এবং অরুচি হয়।
হেমোরেজিক ডেঙ্গু ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত চিকিৎসাতেই সেরে যায়। হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম অত্যন্ত মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বরে অনেক সময় রোগী মারাও যেতে পারে। হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর হলে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলোর সাথে আরও কিছু অতিরিক্ত লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেয়।
- রুগির শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়।
- অনেক সময় বুকে বা পেটে পানি জমার মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
- লিভার আক্রান্ত হয়ে জন্ডিস হতে পারে।
- কিডনি আক্রান্ত হয়ে কিডনি ফেলিওরের মত জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম
রোগীর অবস্থা আরো ভয়াবহ হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের এই অবস্থায় উপরোক্ত লক্ষণ গুলোর সাথে সারকুলেটরি ফেলিওর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। ডেঙ্গু জ্বরের এই অবস্থার লক্ষণ বা উপসর্গগুলো নিম্নরূপ
- রক্তচাপ হঠাৎ কমে যায়
- নাড়ির স্পন্দন বা পালস্ অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হয়
- হাত-পা ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ ঠান্ডা হয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ মিষ্টি আলুর পুষ্টিগুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- প্রস্রাব কমে যায়।
- হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে।
- এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
- চিকিৎসকদের মতে, এবারে ডেঙ্গু জ্বর হলে তীব্র জ্বর, মাথা-ব্যথা, গায়ে রাশ বা বমির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এখন ডেঙ্গু জ্বর হলে হার্ট, কিডনি ও ব্রেইন আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই মানুষই ডেঙ্গু ঝুকিতে আছেন। এবারে গ্রামের চেয়ে শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি।
এডিস মশা মানব শরীরের কোন অংশ কামড়ায়
এডিস মশা ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয় কি? এই আলোচনায় এখন জানুন এডিস মশা শরীরের কোন অংশে কামড়ায় সে সম্পর্কে। ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা শরীরের যে কোন অংশেই কামড়াতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক হারে ডেঙ্গু বিস্তার লাভ করায় এ বিষয়টি নিয়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সাধারণত আমাদের পুরো শরীরে কাপড় দিয়ে আবৃত থাকে তাই যে অংশটুকু অনাবৃত বা বাঁকা থাকে সেই অংশে এডিস মশা কামড়ায় সেই হিসেবে শুধু পাই কামড়ায় এমন ধারণাটি ঠিক নয়। পায়ের নিম্নাংশ অনাবৃত থাকে তাই সুযোগ বুঝে এডিস মশা পা এর ফাঁকা অংশে কামড় দেয়।
ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো ইতোমধ্যেই ডেঙ্গু জ্বরের প্রকারভেদের মধ্যে আলোচনা করা হয়েছে। আপনারা যারা ডেঙ্গু জ্বরে প্রকারভেদ পড়েছেন তারা ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষনগুলো জানতে পেরেছেন। উল্লেখিত লক্ষনগুলো ছাড়াও আরো কিছু সাধারণ লক্ষণ আছে, যেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।
- মাথা ব্যথাসহ হঠাৎ ১০২-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট জ্বর হওয়া।
- খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া।
- চোখ ও চোখের পিছনে ব্যথা।
- আলোর দিকে তাকাতে অস্বস্তি।
- বমি বমি ভাব হওয়া।
আরও পড়ুনঃ লটকন ফল খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা
- কখনও কখনও বমি হয়ে যাওয়া।
- মাংসপেশীতে প্রচণ্ড ব্যথা।
- হাড়ের সংযোগস্থলে প্রচন্ড ব্যথা।
- শরীরের চামড়ায় লালচে ছোব বা রাশ হওয়া।
- মুখ ও দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত পড়া।
- নাক দিয়ে রক্ত পড়া।
- পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হওয়া।
- প্ল্যাটিলেট কমে যায়।
- ৪-৫ দিনের মধ্যে জ্বর ভালো হয়ে যাওয়া।
উল্লেখ্য যে উপরোক্ত লক্ষণগুলো পুরোপুরি না থাকলেও ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। জ্বর হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
জ্বর বা ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয়
ডেঙ্গু জ্বর হলো এক ধরনের ভাইরাল ফিভার যা মশার কামড়ে মানবদেহে সংক্রমিত হয়। তাই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থেকে নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে হবে
- জ্বর হওয়ার সাথে সাথেই যতছত্র ভাবে প্যারাসিটামল ব্যতিত অন্য কোন ঔষধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- জ্বর হলে নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা করতে হবে।
- ডেঙ্গু জ্বর ভালো হওয়ার পরেও ডেঙ্গু জনিত মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে তাই এমন কোন সমস্যা দেখা দিলে সতর্ক থেকে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
- জ্বর তথা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে যায় তাই স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি অতিরিক্ত তরল খাবার হিসেবে স্যালাইন পানি, ডাবের পানি, ফলের রস, গ্লুকোজের শরবত, লেবুর শরবত, স্যুপ ও রুগির রুচি সম্মত অন্যান্য খাবার খেতে দিতে হবে।
- জ্বর হলে অন্যান্য লক্ষণ যদি নাও থাকে সেক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া ভালো।
ডেঙ্গু জ্বর পরবর্তী বিশেষ সর্তকতা
এডিস মশা ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয় কি? এই শিরোনামটি আলোচনা এই অংশে আমরা জানবো ডেঙ্গু জ্বর পরবর্তী বিশেষ সর্তকতা সম্পর্কে। ডেঙ্গু জ্বর ভালো হয়ে যাওয়ার পরে ডেঙ্গু জ্বর পরবর্তী কিছু দিন সময় ডেঙ্গু রোগীর জন্য খুবই ভয়ংকর হতে পারে।
এ সময় পাতলা পায়খানা বা শরীরের যেকোনো অংশ দিয়ে রক্তক্ষরণ, হাত-পায়ে ব্যথা, পেট ব্যথা, বমি করা, কিছু খেতে না পারা, হাঁটা চলাফেরা করতে না পারা ব দুর্বল বোধ করা ও হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার মত উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা দিলে খুব দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর বা এডিস মশার কামড় থেকে বাঁচার উপায়
ডেঙ্গু জ্বর, এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানবদেহে ছড়ায়। তাই এই মশা যেন আমাদেরকে কামড়াতে না পারে সেজন্য সচেতন থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মশার কামড় তথা ডেঙ্গু জ্বর থেকে বাঁচার জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করতে হবে।
- এডিস মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে।
- মশা নিধনের ঔষধ, স্প্রে বা কয়েল ব্যবহার করতে হবে।
- পাতলা বা ঢিলা পোশাক পরিধান থেকে বিরত থাকতে হবে।
- সকল বয়সের সকলেই ফুল হাতা জামা কাপড় ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- বাচ্চাদের হাফপ্যান্টের পরিবর্তে ফুলপ্যান্ট ও হাফসার্টের পরিবর্তে ফুলসার্ট পরিয়ে রাখুন।
- মশা যেন ঘরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য জানালা ও দরজাতে মশা প্রবেশরোধক নেট ব্যবহার করতে হবে।
- মশা যেন বাসা-বাড়িতে বা ঘরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সকালে ও সন্ধ্যায় দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হবে।
- শরীরের যে অংশ অনাবৃত থাকে প্রয়োজনে ওই অংশে মশা প্রতিরোধক ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।
- বাচ্চা ও বৃদ্ধদের বিশেষ যত্নে নিরাপদে রাখতে হবে।
এডিস মশা কামড় দিলেই কি ডেঙ্গু হয়
এডিস মশা কামড় দিলেই ডেঙ্গু হবে বিষয়টি এমন নয়। আমরা আগেই আলোচনা করেছি ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী চারটি প্রজাতির এডিস মশার যে কোনটি কামড় দিলেই ডেঙ্গু হতে পারে। আবার যে ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত তাকে যদি কোন এডিস মশা কামড় দেয় ও পরবর্তীতে অন্য কাউকে কামড় দেয় তাহলে ঔ পরবর্তী ব্যক্তিরও ডেঙ্গু হতে পারে। কোন ব্যক্তিকে যদি চারটি প্রজাতির এডিস মশা পরপর কামড়ায় তাহলে ওই ব্যক্তি একাধিকবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে।
কোন সময়কালে ডেঙ্গু জ্বর বেশি হয়
এডিস মশা ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয় কি? এ আলোচনার এ অংশে আমরা জানবো কোন সময়কালে ডেঙ্গু জ্বর বেশি হয় সে সম্পর্কে। ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত এডিস মশার বংশবিস্তারের উপর নির্ভর কর।
সাধারণভাবে বলা যায় জুলাই মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত অর্থাৎ বর্ষাকালেই ডেঙ্গু জ্বর বেশি হয়। কারণ বর্ষাকালে যেখানে সেখানে পানি জমে থাকার কারণে এডিস মশা ডিম দেওয়ার অনুকূল পরিবেশ পায় ও বংশ বিস্তার বেশি হয় এবং ডেঙ্গু জ্বর ছড়ায়।
ডেঙ্গু জ্বর বনাম এন্টিবায়োটিক এর ব্যবহার
ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে ডেঙ্গু জ্বর হয়। যেহেতু এটি একটি ভাইরাল ফিভার তাই এখানে এন্টিবায়োটিকের তেমন কোন রোল নেই। তবে ডেঙ্গু জ্বরের পাশাপাশি যদি অন্য কোন ইনফেকশন থাকে বা টাইফয়েড ফিভার থাকে সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসক যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার করতে পারেন। ডেঙ্গু ফিভার ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রেও এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
ডেঙ্গু জ্বর হলে যেসব ঔষধ খাওয়া উচিত নয়
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ খাওয়া উচিত নয়। অধ্যাপক ডাক্তার তাহমিনা বলেন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে স্বাভাবিক ওজনের একজন মানুষ সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেতে পারবেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষকরা বলছেন প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ দিনে চার গ্রাম। প্রতি ডোজের ব্যবধান হবে ছয় ঘন্টা। অর্থাৎ এক গ্রাম করে প্রতি ছয় ঘণ্টা পরপর এভাবে চব্বিশ ঘণ্টায় চার বার প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে।
যে সমস্ত ব্যক্তির কিডনি, লিভার ও হার্ট এর জটিলতা আছে তারা প্যারাসিটামল সেবনের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরের সময় হাতে-পায়ে বা শরীরে ব্যথা হলেই এসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না। এতে করে ডেঙ্গুর সময় রক্তক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর ভালো হতে কত দিন সময় লাগে
ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বা অনেক দুর্বল হয়ে যায় । ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর ভালো হতে সাত থেকে দশ দিন সময় লাগে। হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর ভালো হতে সময় লেগে যায় প্রায় পনের থেকে কুড়ি দিন। ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দিলে ডেঙ্গু জ্বর পুরোপুরি সেরে উঠেতে এক মাসের বেশি সময় লেগে যেতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরে বিশ্রাম নিতে হবে
ডেঙ্গু জ্বর মানেই শারীরিক দুর্বলতা। দুর্বলতা কাটিয়ে না ওঠা পর্যন্ত পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। সরকারের সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ বিভাগ থেকে ডেঙ্গু রোগির বিশ্রাম নেয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু জ্বর হলে এখানে সেখানে দৌড়াদৌড়ি বা ঘোরাঘুরি বা ভারী কাজকর্ম না করে বিশ্রামে থাকা উচিত। এতে করে দ্রুত আরোগ্য লাভের সুবিধা পাওয়া যায়। সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী ডেঙ্গু রোগীর পূর্ণ বিশ্রামে থাকা প্রয়োজন।
ডেঙ্গু জ্বর ছোঁয়াচে কি না
ডেঙ্গু জ্বর এক ধরনের ভাইরাস ফিভার । এই জ্বর শুধুমাত্র এডিস মশার কামড়ে বিস্তার লাভ করে। ডেঙ্গু জ্বর কোন অবস্থাতেই ছোঁয়াচে রোগ নয়। কোন ব্যক্তি যদি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় ও তার সংস্পর্শে অন্য কোন ব্যক্তি আসে তাহলে ঐ ব্যক্তির ডেঙ্গু জ্বর হয় না।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়াতে কোন বিধি-নিষেধ নেই বরং ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি সাথে থেকে তাকে মানসিকভাবে সাহস যোগাতে হবে। অনেকেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে আলাদা ঘরে , আলাদা বিছানায় ও আলাদা থালা বাটি করে দিয়েছেন, এটা খুবি অমানবিক কাজ।
কেমন খাবার খাওয়া উচিত
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা মানসিক ও দোহিকভাবে মারাত্মক দুর্বল হয়ে যায়। তাই স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি অতিরিক্ত তরল খাবার হিসেবে স্যালাইন পানি, ডাবের পানি, ফলের রস, গ্লুকোজের শরবত, লেবুর শরবত, স্যুপ ও রুগির রুচি সম্মত অন্যান্য
এনার্জেটিক খাবার খেতে দিতে হবে। ডেঙ্গু রোগীদেরকে প্রোটিন ও আয়রন জাতীয় খাবার বেশি বেশি দিতে হবে যেমন কচি মুরগির মাংস, কবুতরের মাংস, বিভিন্ন চর্বিবিহীন মাছ ও দেশীয় বিভিন্ন ফল। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের মানসিকভাবে চাঙ্গা করার জন্য পজিটিভ মটিভেশন দিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর ও হাসপাতালে ভর্তি
ডেঙ্গু জ্বর নিশ্চিত হওয়ার পরেই কেবলমাত্র চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেন রুগি হাসপাতালে ভর্তি হবে না বাসায় চিকিৎসা নেবে। ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে, ক্যাটাগরি 'এ', ক্যাটাগরি 'বি' ও ক্যাটাগরি 'সি' ।
ক্যাটাগরি 'এ'
ডেঙ্গু জ্বরের প্রথম ক্যাটাগরি অর্থাৎ 'এ' ক্যাটাগরির বেশিরভাগ রোগী নরমাল বা স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী 'এ' ক্যাটাগরির। এই সমস্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই বলে চিকিৎসকরা মনে করেন। এই ধরনের ডেঙ্গু রোগীরা বাসাতেই চিকিৎসা নিতে পারেন।
ক্যাটাগরি 'বি'
ডেঙ্গু জ্বরের দ্বিতীয় ক্যাটাগরি অর্থাৎ 'বি' ক্যাটাগরির রোগীদের সবই স্বাভাবিক থাকে তবে পেট ব্যাথা হতে পারে, কিংবা খাবারের অরুচি হতে পারে,শরীর
আরো পড়ুনঃ অর্থসহ ছেলে শিশুর ইসলামিক নামের তালিকা।
ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে ও বমির ভাব বা বমি হতে পারে। 'বি' ক্যাটাগরির রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়া ভালো বলে চিকিৎসকরা মনে করেন।
ক্যাটাগরি 'সি'
ডেঙ্গু জ্বরের তৃতীয় ধাপ বা 'সি' ক্যাটাগরির রোগিদের অবস্থা মারাত্মক খারাপ হতে পারে। 'সি' ক্যাটাগরির রোগীদের সবসময় হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। প্রয়োজনে রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ তে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
এডিস মশা কেমন পরিবেশে ডিম পাড়ে
এডিস মশাকে ভদ্র মশা বললেও ভুল হবে না কারণ এডিস মশা সবসময় পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ পানিতে ডিম পেড়ে লার্ভা ফুটিয়ে বংশ বিস্তার করে। তিন দিনের অধিক সময় ধরে পানি জমে থাকে এরকম যে কোন জায়গাতেই এডিস মশা ডিম দিতে পারে। কখনো কখনো লোনা পানিতেও এডিস মশাকে ডিম দিতে দেখা গেছে।
পানি জমে থাকতে পারে এমন পরিত্যক্ত জিনিস যেমন ডাব বা নারকেলের খোসা, ড্রাম বা ব্যারেল, ঢাকনা বিহীন পানির ট্যাংকি বা চৌবাচ্চা, পোষা প্রাণীর পানির পাত্র, বাসের ফাটল বা গাছের গুঁড়িতে, টায়ার, বাড়ি আশেপাশে পড়ে থাকা পাত্রে জমা থাকা পানি ও প্লাস্টিকের বোতলসহ সকল পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়াতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
ডেঙ্গু জ্বর হলে আতংকিত না হয়ে সচেতন থেকে এই জ্বর মোকাবেলা করতে হবে। এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ করে ও এই মশার কামড় থেকে বেঁচে নিজেদেরকে ডেঙ্গু জ্বর থেকে রক্ষা করতে হবে।ডেঙ্গু জ্বর মোকাবেলায় সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি আমাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে, পারিবারিকভাবে ও সামাজিকভাবে এই এডিস মশা তথা ডেঙ্গু জ্বরের বিস্তার রোধে সোচ্চার হতে হবে বা সচেতন থাকতে হবে।
আসছে বর্ষাকাল বাড়তে পারে এডিস মশা তথা ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব। তাই আতংকিত না হয়ে সবাইকে সচেতন থেকে এডিস মশা ও ডেঙ্গু জ্বর মোকাবেলার আহ্বান জানাচ্ছি। সচেতন থাকুন ডেঙ্গু প্রতিরোধ করুণ। সবারই ডেঙ্গু মুক্ত সুন্দর ও সুস্বাস্থ্যে থাকবেন। উপরের লেখাগুলো পড়ে ডেঙ্গু সম্পর্কে জানার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url