আদর্শ চালকের কি কি গুণাবলী থাকা উচিত
আদর্শ চালকের কি কি গুণাবলী থাকা উচিত আজকের আর্টিকেলে আমরা এ বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করব। যে সমস্ত চালক ভাইয়েরা গাড়ি চালান তাদের বেশিরভাগই স্টিয়ারিং বা হুইল এর পিছনে ড্রাইভিং সিটে বসে দাবি করতে পারেন না যে তারা নিখুঁতভাবে গাড়ি চালান। আবার কিছু সংখ্যক চালক আছেন যারা সত্যিই নিরাপদে ও নিখুঁতভাবে আদর্শ চালকের মতো গাড়ি ড্রাইভ করে থাকেন।
আদর্শ চালকের কি কি গুণাবলী থাকা উচিত সেগুলো জানার জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি পুরোপুরি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আপনি শখ করে অথবা পেশা হিসেবে ড্রাইভিং করতে পারেন। শখ করে গাড়ি চালান বা পেশা হিসেবেই গাড়ি চালান, যেটাই করুন না কেন আপনাকে মনে রাখতে হবে গাড়ি চালানো মানে আপনি রাস্তায়। তাই রাস্তার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে এবং ট্রাফিকের সমস্ত নিয়মগুলো মেনে সতর্কতার সহিত নিরাপদে গাড়ি চালাতে হবে।
একজন আদর্শ চালকের যে সকল গুণাবলী থাকা উচিত সেগুলো নিম্নে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হলো। এগুলো পড়ে আপনিও মিলিয়ে নিন আপনার মধ্যে আদর্শ চালকের কি কি গুণাবলী আছে বা কি কি গুণাবলীর ঘাটতি আছে ? ঘাটতি গুলো পূরণ করে নিন আদর্শ চালকের খাতায় নাম দিন।
সূচীপত্র
শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে
আদর্শ চালকের কি কি গুণাবলী থাকা উচিত এখানে পড়ুন। আদর্শ চালক হওয়ার জন্য যে যোগ্যতাগুলো লাগে তার মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষাগত যোগ্যতা। ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য একজন ব্যক্তির মুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা দরকার হয় অষ্টম শ্রেণী পাস।
ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণী পাস না হলে ড্রাইভিং এর ক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলো হয় সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- রাস্তার পাশে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক লেখা পড়তে না পারা,
- সাইনবোর্ড পড়তে না পারা,
- ব্যানার পড়তে না পারা,
- রাস্তার উপরে সাদা কালিতে লেখা বুঝতে না পারা,
- বিভিন্ন রকমের সাংকেতিক চিহ্ন থাকে বুঝতে না পারা,
- দিকনির্দেশনামূলক বাংলা বা ইংরেজি লেখা পড়তে না পারা।
উপরের আলোচনা গুলো বুঝতে না পারার অর্থ হলো দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়। একটা পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে সকল চালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ভালো তাদের ড্রাইভিং দক্ষতাও ভালো। শিক্ষাগত যোগ্যতা গাড়ি চালানো পেশার জন্য একটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সততা ও নৈতিকতা মেনে চলতে হবে
আদর্শ চালকের কি কি গুণাবলী থাকা উচিত পড়ে নিন। সততা ও নৈতিকতাে একজন আদর্শ চালকের একটি অন্যতম গুণ। প্রত্যেক মানুষেরই তার নিজ নিজ অবস্থানে সততা ও নৈতিকতায় পরিপূর্ণ থাকা উচিত।
আরো পড়ুনঃ কি কি ক্ষতি হতে পারে গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বললে
একজন আদর্শ চালক কখনোই চারিত্রিক গুণাবলী, সততা ও নৈতিকতার পরিপন্থী কাজ করেন না। একজন ভালো বা আদর্শ চালক সব সময় নিজস্ব সততা ও নৈতিকতার আলোয় আলোকিত। একজন আদর্শ চালকের সততা ও নৈতিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
দায়িত্ববোধ জ্ঞান থাকতে হবে
আদর্শ চালকের কি কি গুণাবলী থাকা উচিত এখানে দেখে নিব। দায়িত্ববোধ জ্ঞান একজন আদর্শ চালকের গুণাবলীর অন্যতম একটি। আদর্শ চালকের সেই রকম পর্যায়ের দায়িত্ববোধ জ্ঞান থাকতে হবে। একজন ড্রাইভার যখন গাড়ি চালান, গাড়িতে আরোহনকারী যাত্রী, পথযাত্রীসহ নিজের জীবনের নিরাপত্তা সম্পর্কে
আরো পড়ুনঃ স্মার্টফোন ব্যবহারে শিশুদের কি কি ক্ষতি করে
দায়িত্ববোধ জ্ঞান থাকতে হবে। চালকের সামান্যতম ভুলের কারণে নিজের জীবনসহ যাত্রী ও পথযাত্রীর জীবন বিপন্ন হতে পারে। তাড়াহুড়া না করে দায়িত্বের সাথে সঠিক সময় দেখ - শুনে নিরাপদে গাড়ি চালিয়ে গন্তব্যে যেতে হবে।
আদর্শ চালকের সচেতন ও সতর্কতামূলক জ্ঞান থাকতে হবে
আদর্শ চালকের কি কি গুণাবলী থাকা উচিত এখানে জেনে নিব। আদর্শ চালক সব সময় সচেতন ও সতর্ক থেকে ড্রাইভ করেন। সব সময় গাড়ির খুঁটিনাটি বিষয় যেমন - গাড়ির চাকা বা টাযার ঠিক আছে কি না, স্টিয়ারিং ঠিক আছে কিনা, গাড়ির ব্রেক ঠিকমতো কাজ করছে কিনা, গাড়িতে কোন মাদক দ্রব্য বহন করছে কি না বা নিষিদ্ধ কোন কিছু গাড়িতে আছে কি না।
এইসব বিষয়গুলো সতর্ক ও সচেতন থেকে গাড়ি ড্রাইভ করেন। মনে রাখতে হবে গাড়িতে যখন যাত্রী পরিবহন করেন এর সকল দায়-দায়িত্ব ড্রাইভার এর উপরেই বর্তায়। একজন ভালো চালক সব সময় রাস্তার ওপর নজর রেখে সতর্কতার সহিত রাস্তার উপরে অন্যান্য যানবাহনগুলোকে দেখভাল করে থাকেন।
ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে থাকেন
আদর্শ চালকের কি কি গুণাবলী থাকা উচিত এই আলোচনায় এখন আমরা দেখব একজন ড্রাইভারের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে কি ধরনের শ্রদ্ধাশীট থাকতে হয়। ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বা আইন মেনে চলেন মূলতঃ আদর্শ চালকরাই। আদর্শ চালকরা নীতি-নৈতিকতা, সতর্কতা - সচেতনতা ও ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই নিরাপদ গতিতে নির্বিঘ্ন গাড়ি চালিয়ে গন্তব্য পৌঁছান।
আরো পড়ুনঃ দ্রুত ওজন কমানোর ১০টি সহজ উপায়
আদর্শ চালকরা আইন মেনে চলেন ও অন্যকে আইন মেনে চলার জন্য উৎসাহিত করেন। অনেকে মনে করেন চালকরা গাড়ি দ্রুত চালালেই ভালো ড্রাইভার। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা আদর্শ গাড়ি চালক হিসেবে অবশ্যই আপনাকে সড়কের ব্যবহার বিধি ও ট্রাফিক সম্পর্কিত সকল আইন ভালো ভাবে জানতে হবে।
ধৈর্য থাকতে হবে
আদর্শ চালকের কি কি গুণাবলী থাকা উচিত দেখুন। ধৈর্যশীলকে আল্লাহ পছন্দ করেন, ধৈর্য একটি মহৎ গুণ, একজন আদর্শ চালক কখনই অধৈর্যশীল আচরণ প্রদর্শন করে না। ধরুন আপনার সামনে একটা গাড়ি আছে ওই গাড়ির চালকের কাছে আপনি সাইড চাইলেন, সে আপনাকে সাইড দিলো না।
আরো পড়ুনঃ অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম
তার মানে এই নয় যে আপনি অধৈর্য হয়ে তাকে ভূল পথে ওভারটেক করবেন। আদর্শ চালকরা কখনোই কোন অবস্থাতেই প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা প্রদর্শন করে গাড়ি চালায় না। সব সময় ধৈর্য সহকারে গাড়ি চালান। আদর্শ চালকেরা আদর্শতা বজায় রাখেন।
যান্ত্রিক জ্ঞান থাকতে হবে
আদর্শ চালকের কি কি গুণাবলী থাকা উচিৎ জানুন। আদর্শ চালকের ইঞ্জিন সম্পর্কে মৌলিক ধারণা থাকতে হবে। আসলে এ ধারণা গুলো সব চালকেরই থাকা উচিত তবে আদর্শ চালকের আরো ভালো করে এই জ্ঞানগুলো থাকা দরকার। ইঞ্জিনের লুব্রিক্যান্ট সিস্টেম, ফুয়েল সিস্টেম ও ব্রেক সিস্টেমের
সাথে সম্পর্কযুক্ত পার্টসগুলো কি কি সে সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা থাকতে হবে। ইঞ্জিনের ভেপার লক, এয়ার লক সমস্যা ও এগুলো কিভাবে প্রতিকার করা যায় তা সম্পর্কে একটা সম্মুখ ধারণা থাকতে হবে। সর্বোপরি আদর্শ চালকের ইঞ্জিনের ছোটখাট ত্রুটি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা উচিৎ।
আত্মবিশ্বাস
আত্মবিশ্বাস আদর্শ চালকের অন্যরকম একটি মানসিক শক্তি। অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাসের সমন্বয় করে রোডে গাড়ি চালাতে হবে। মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস আবার একেবারে কম আত্মবিশ্বাস উভয়ই দুর্ঘটনা কারণ হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ ক্যালেন্ডারের পাতায় বিজয়ের মাস ডিসেম্বর 2024
সড়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়ক নিরাপত্তার প্রধান চাবিকাঠি হল অতি বেশি আত্মবিশ্বাসী না হওয়া। অতি আত্মবিশ্বাসী হলে নিজের ভুলগুলো সম্পর্কে নিজের সচেতনতা থাকে না। সুতরাং একজন আদর্শ চালক অতি আত্মবিশ্বাসী না হয়ে সতর্কতার সহিত নিরাপদে গাড়ি চালাবেন।
ক্ষিপ্ত আচরণ প্রদর্শন বা সমর্থন না করা
আদর্শ চালকের আরও একটি বিশেষ গুণ হলো কারো প্রতি ক্ষিপ্ত আচরণ প্রদর্শন না করা আবার কারো ক্ষিপ্ত আচরণের প্রতি সমর্থন না করা। গাড়ি চালাতে গিয়ে অনেক সময় বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ট্রাফিক জ্যামে অন্যান্য ড্রাইভাররা, যাত্রীরা,
এমনকি ট্রাফিক পুলিশরা সবাই ক্ষিপ্ত বা অসহিষ্ণু আচরণ প্রদর্শন করে থাকেন, এই ক্ষেত্রে নিজেকে শান্ত রেখে পরিস্থিতির মোকাবেলা করা। মনে রাখতে হবে, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। ক্ষিপ্ত হলে আদর্শ চালকের আদর্শ নষ্ট হবে।
শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও বিপদে পাশে দাঁড়ানোর প্রবনতা থাকতে হবে
আদর্শ চালকরা সবসময় অন্যের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। বিশেষ করে যখন গাড়িতে নারী যাত্রী, শিশু, বয়স্ক বা প্রতিবন্ধী কেউ ওঠেন তখন তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহানুভূতিশীল আচরণ প্রদর্শন করেন। রোডে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে বা লোকজন পারাপারের
সময় তাদেরকে সহায়তা প্রদান করার মন - মানসিকতা রাখেন। গাড়িতে যেন নারী যাত্রীরা হেনস্থার স্বীকার না হয় সেই জন্য একজন আদর্শ চালক সব সময় শ্রদ্ধাশীল হয়ে খেয়াল রাখেন। এছাড়াও আদর্শ চালক গাড়ির সকল যাত্রীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ প্রদর্শন করেন।
মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা
আদর্শ চালকরা গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। আদর্শ চালকরা গাড়িতে উচ্চস্বরে গান-বাজনা, ভিডিও দেখা, হেডফোন ব্যবহার করা বা মোবাইল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকেন। মোবাইলে কথা বলতে গেলে মনোযোগ নষ্ট হয় ও দুর্ঘটনার প্রবণতা বাড়ে। একটা পরিসংখ্যানে দেখা গেছে মোবাইলে কথা বলা অবস্থায় গাড়ি চালালে দুর্ঘটনার প্রবনতা চারগুন বেড়ে যায়।
লেখকের কথা
আদর্শ চালক সব সময় ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে, দায়িত্ববোধ জ্ঞান নিয়ে, ধৈর্য সহকারে, সততা ও সতর্কতার সহিত রাস্তার দিকে খেয়াল রেখে নিরাপদ গতিতে গাড়ি চালাবেন। আপনি যদি একজন পেশাদার আদর্শ চালক হন তাহলে আপনাকে দেখে নতুন চালকরা শিখতে পারবে।
আদর্শ চালকের কি কি গুণাবলী থাকা উচিত তা আজকের আর্টিকেলটি পড়েই আপনারা জানতে পেরেছেন। তাই আসুন সকলে মিলে আদর্শ চালকের গুণাবলী অর্জন করি। নিরাপদে গাড়ি চালাই, নিজে নিরাপদ থাকি অন্যকে নিরাপদে থাকতে সহায়তা করি। নিরাপদে গাড়ি চালাবেন, সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url