লটকন ফল খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা

লটকন ফল খাওয়ার কথা ভাবছেন? আপনি কি জানেন লটকন ফলের কত উপকারিতা? এই ফলটি ছোট হলেও পুষ্টিগুনে ভরপুর। বর্ষাকালে সাধারণত এ ফলগুলো বেশি হয়ে থাকে। টক মিষ্টি স্বাদের রসালো এ ফলটি অনেকের কাছেই খুব সুস্বাদু আবার কারো কারো কাছে একটু কম সুস্বাদু মনে হতে পারে।

লটকন ফল খাওয়ার ১০টি  উপকারিতা
লটকন ঔষধি গুণসম্পন্ন ও পুষ্টি সমৃদ্ধ রসালো মৌসুমী ফল।আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পুরোপুরি পড়লে আপনি জানতে পারবেন লটকনের পুষ্টিগুণ,খাওয়ার উপকারিতা,গর্ভবতী মাদের খাওয়া যাবে কিনা এইসব বিষয়গুলো সম্পর্কে। চলুন আর দেরি না করে মজা মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

সুচিপত্র 

লটকন ফলের পরিচিতি

হালকা হলুদ বর্ণের ছোট ছোট গোলাকার ফলের নাম লটকন যা দেখতেও অনেক সুন্দর। এই ফলগুলো আঙ্গুরের মতো গুচ্ছাকারে থোকায় থোকায় ধরে থাকে। বাইরের হলুদ শক্ত আবরণ খুলে ভিতরে তিন-চারটি দানাদার

রসালো বিচি থাকে। এই বিচির দানাদার অংশই খাদ্য উপাদান যা আমরা খাই। বুনোফল (জংগলের মধ্যে হয় এমন ফল) হিসেবে পরিচিত হলেও বর্তমানে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে।

আরো পড়ুন: ভিটামিন ই মুখে ব্যবহারের নিয়ম

অঞ্চলভেদে বিভিন্ন নামে এলাকার লোকজন এই লটকন ফলকে চিনে থাকেন। এই ফলের অনেকগুলো নামের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু নাম হলো বুবি, হাড়ফাটা, লটকাউ, লটকা, ডুবি,

কানাইজু, বুগি  ইত্যাদি। ইংরেজিতে এই ফলকে বলা হয় বার্মেজ গ্রেপ (Burmese Grape)। লবণ আর মরিচ গুড়ার সাথে মিশিয়ে এই ফলটি খেলে এর স্বাদ অনেকগুনে বেড়ে যায়।

লটকন ফলের পুষ্টিমান

প্রাচীনকাল থেকেই লটকন ফলগুলো ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। বর্তমানে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে ভারত, ইন্দোনেশিয়া,মালয়েশিয়াসহ বাংলাদেশে ফল হিসেবে এর ব্যাপক চাষ করা হয় হচ্ছে।

এই ফলগুলোর যেমনি রয়েছে ঔষধিগুন তেমনি আছে পুষ্টিমান। অনেকটা আঙ্গুরের মতো দেখতে এই ফলগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন খাদ্য উপাদান ও ক্যালরি যা আমাদের শরীরকে সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে।

আরো পড়ুন:বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা 

একটা গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি একশো গ্রাম লটকন ফলে যে পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে তা আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠালের তুলনার দ্বিগুণ।

প্রতি ১০০ গ্রাম লটকন ফলে যে পরিমাণে বিভিন্ন খাদ্য উপাদান বা ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে তা টেবিল আকারে নিম্নে তুলে ধরা হলো।

উপাদানের নাম                        

পরিমাণ

এনার্জি

৯২ কিলোক্যালরি

ভিতামিন সি

১৭৮ মিলিগ্রাম

শর্করা

১৩৭ মিলিগ্রাম

পটাশিয়াম

১৭৭ মিলিগ্রাম

ক্যালশিয়াম

১৬৯ মিলিগ্রাম

ভিতামিন বি১

১৪.০৪ মিলিগ্রাম

ভিতামিন ব২

০.২০ মিলিগ্রাম

ক্রমিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম  

৯ মিলিগ্রাম

প্রোটিন

১.৪২ গ্রাম

ফ্যাট

০.৪৫গ্রাম

আয়রন

৫.৩৪ মিলিগ্রাম

লটকন ফল খাওয়ার উপকারিতা

লটকন ফলগুলো আকারে ছোট ছোট হলেও এর পুষ্টিগুন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিভিন্ন পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে এই ফলে ক্ষতিকর কোন উপাদান নেই।

এই ফলটি যদিও স্বল্প সময়ের বর্ষাকালে ফল সেজন্য ওই সময় ছোট বড় সকলেই এই ফলটি দেহের উপকারের জন্য খেতে পারেন। নিম্নে এই ফলের উপকারিতা গুলো আলোচনা করা হলো 

মুখ ও দন্ত রোগ দূর করে লটকন 

মুখ ও দন্ত রোগ থেকে সুরক্ষা দেয় এই লটকম। এই ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি ও ডিটামিন বি২, যেগুলো আমাদের দাঁত বা মাড়ির স্কার্ভি রোগ এবং মুখের বেরিবেরি রোগ  প্রতিরোধে সহায়তা করে।

মুখ ও দন্ত রোগ দূর করে লটকনএই ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা দাঁতের এনামেল ঘটনে সহায়তা করে। এনামেল হলো দাঁতের সবচেয়ে শক্ত অংশ যা ক্যালসিয়াম দ্বারা তৈরি। তাই প্রতিদিন দু - একটি করে এই ফল খেতে পারেন।

ফ্লু  বা জ্বর,সর্দি,কাশি উপশম করে

বর্ষা মৌসুমে এই রোগ গুলো বেড়ে যায় তাই আমাদের শরীরের অতিরিক্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দরকার হয়। এই ফলে বিদ্যমান

এন্টিঅক্সিডেন্ট ও জিংক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও বিভিন্ন ধরনের ফ্লু, সর্দি, কাশি থেকে সুরক্ষা দেয় । প্রতিদিন লটকন ফল খেতে পারেন। 

খাবারের রুচি বাড়ায়

সাধারণভাবে দেখা যায় টক খেলে মুখের রুচি বাড়ে। যেহেতু ওই ফলটিতে ভিটামিন সি আছে আর স্বাদও টক-মিষ্টি তাই এ ফলটি খেলে মুখে খাওয়ার রুচি বাড়ে। এই ফলটির আরও একটি গুণ হলো বমির ভাব কমাতে সাহায়তা করে।

শরীরের শক্তির উৎস

লটকন ফলে রয়েছে যথেষ্ঠ পরিমাণে ক্যালরি, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, এমাইনো এসিড, এনজাইম ও জিংক যেগুলো আমাদের শরীরকে সচল রাখতে বা সক্রিয় করে প্রাণবন্ত করে তুলতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

আরো পড়ুন: অর্থসহ ছেলে শিশুর ইসলামী নামের তালিকা

এই ক্যালোরি শরীরকে শক্তির জোগান দেয় ও অন্যান্য উপাদান ও মিনারেলস গুলো শরীরের কোষ- কলা ও পেশীগুলোকে মজবুত করে।

হাড়ের ক্ষয় রোধ করে ও রক্তবৃদ্ধি করে

এই ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা হাড়ের ক্ষয় রোধ করে হাড়কে মজবুত ও শক্তিশালী করে এক কথায় হাড়কে সুরক্ষা দেয়। লটকন ফলে বিদ্যমান উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আয়রন রক্তে স্বল্পতা দূর করে রক্তশূন্যতা রোধ করে শরীরকে সতেজ রাখে। 

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ এর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে যে এই ফলে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।এই এন্টিঅক্সিডেন্টগুলো হলো এমন এক ধরনের  রাসায়নিক যৌগ যা আমাদের

আরো পড়ুন: গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ

শরীরের ফ্রিরেডিক্যালসগুলোকে ধ্বংস করার মাধ্যমে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও কোলন ক্যান্সার রোদে সহায়তা করা এই ফল।

ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা রোধ করে

লটকন একটি রসালো ফল।এই ফলে জলীয় অংশ বা পানির পরিমাণ অনেক বেশি। প্রচন্ড রোদ গরমের সময় তৃষ্ণা পেলে এই ফল খেলে তৃষ্ণা দূর হয় ও শরীরে পানি সল্পতা বা ডিহাইড্রেশন রোধ করে। রোধ গরমের সময় এই ফল প্রচুর পরিমাণে খাওয়া উচিত।

চর্মরোগ নিরাময় করে

লটকনের পুষ্টিগুণের পাশাপাশি রয়েছে কিছু ভেষজ বা ঔষধিগুণ। বিভিন্ন চর্মরোগ যেমন দাঁদ ,খোশ-পাঁচড়া, চুলকানি, পাণু বা গোটা রোগ সারাতে এই ফলটি অনেক কার্যকরী। চর্মরোগ ভালো করার জন্য এই ফলটি বেটে ওই চর্ম রোগের উপরে লাগিয়ে দিতে হয়।

আরো পড়ুন: ঢেঁকি ছাটা লাল চাউল খাওয়ার উপকারিতা

এইভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করলে চর্মরোগ থেকে উপশম পাওয়া যায়। লটকন ফলের পাশাপাশি এর পাতা ও শিকড় খেলে পেটে নানা রকমের পেটের পিড়া দূর হয় ও জ্বর থেকে আরোগ্য পাওয়া যায়। মেয়েদের গনোরিয়া রোগ দূর করতে লটকনের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

ডায়াবেটিস রোগীদের সুগার কন্ট্রোলে রাখে

এই ফলটিতে গ্লুকোজ বা সুগারের পরিমাণ নাই বললেই চলে। তাই এই ফল খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস বাড়ার সম্ভাবনা কম এছাড়াও এই ফলে বিদ্যমান বিভিন্ন

এনজাইমের কারণে ইন্সুলিনের সিক্রেশন বাড়তে পারে এত করে ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে থাকে। সেজন্য সুগার কন্ট্রোল এর জন্য পরিমাণ মতো লটকন ফল খেতে পারেন।

খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে

এই ফলগুলো অনেক রসালো ও ফাইবার বা তন্ত্র যুক্ত। পরিপাকতন্ত্রে খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে এই ফলগুলো। ফাইবার যুক্ত হওয়ায় এই ফলগুলো

অন্ত্র বা পাকস্থলির মত পরিপাক অঙ্গগুলোকে খুবই কার্যকারী ভূমিকা পালন করতে সহায়তা করে। এই ফলগুলো রসালো ও ফাইবার যুক্ত হওয়ায় কোষ্ঠ-কাঠিন্যটা দূর করা।

গর্ভাবস্থায় লটকন ফল খাওয়া যাবে কি না

গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়া যাবে কিনা এ বিষয়ে নিয়ে বিশদ আলাপ আলোচনা করা দরকার। আমরা আগেই জেনেছি পুষ্টিবিজ্ঞানদের মতে লটকন কোন ক্ষতিকর উপাদান নেই। লটকনে পর্যাপ্ত পরিমানে ক্যালোরি, জিংক, আয়রন, পটাশিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,ভিটামিন বি কমপ্লেক্স,

গর্ভাবস্থায় লটকন ফল খাওয়া যাবে কি নাঅ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যালসিয়ামসহ্ অন্যান্য উপকারী উপাদান। এই উপকারী উপাদানগুলো সবই গর্ভবতী মায়ের ও গর্ভের বাচ্চার উপকার করে থাকে। তাই গর্ভবতী মায়ের লটকন ফল খেতে কোন বিধি-নিষেধ নেই। তবে পরিমাণমতো খাওয়াই ভালো।

লটকন ফল খাওয়ার সতর্কতা

বহুগুনে গুণান্বিত লটকন ফল খাওয়ায় তেমন কোন অপকারিতা লক্ষ্য করা যায়নি। বিভিন্ন পুষ্টিবিজ্ঞানীদের পরীক্ষা লব্ধ ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে লটকন ফলের কোন

অপকারিতার কথা পাওয়া যায়নি ও কোন ক্ষতিকর উপাদানেরও অস্তিত্ব নেই। তবে এই ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সত্তর কথাগুলো নিম্নরূপ।

  • খালি পেটে এই ফল খেলে এসিডিটি হতে পারে তাই খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়। 
  • এই ফল বেশি পরিমাণে খেলে ক্ষুধা মন্দা হতে পারে ty বেশি খাওয়া উচিত নয়।
  • লটকন ফলে বেশি খেলে বমির ভাব বা বমি হতে পারে তাই সতর্কতার সাথে এই ফল খাওয়া উচিত।
  • এই ফল সকালে নাস্তা খাওয়ার আধা ঘন্টা পরে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। রাত্রে খেলে এসিডিটি বেড়ে যেতে পারে ।
  • যাদের কষ্ট্য-কাঠিন্য আছে তাদের এই ফল কম খাওয়া উচিত। কারণ এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন রয়েছে যা অনেক সময় কষ্ট্য-কাঠিন্য বাড়িয়ে দিতে পারে।

লেখকের কথা 

আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে লটকন ফল সম্পর্কে সকল অজানা তথ্যগুলো জানতে পেরেছেন বলে আমি মনে করছি। বিশেষ করে এই ফলের পরিচিতি, উপকারিতা, সতর্কতা ও  গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবে কিনা এ বিষয়গুলো সম্পর্কে। এই আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনার মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

এই আর্টিক্যালটি পড়ে আপনার যদি কোথাও বুঝতে কোন অসুবিধা হয় বা কোন ভুল ত্রুটি মনে হয় বা কোন জিজ্ঞাসা থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমার এই আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • MD Raihan Islam
    MD Raihan Islam September 1, 2024 at 5:25 PM

    Tank u for this post

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url