রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগুণ

রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগুণ   জানার জন্য যে সকল বিষয়গুলো জানা দরকার সেগুলো নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি লেখা। খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের দেশে যে সমস্ত মসলা ব্যবহার করা হয় রসুন তার মধ্যে অন্যতম। রান্নায় মসলা হিসেবে রসুনের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।

রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগুণ

প্রাচীনকাল থেকেই ভেষজ ঔষধ হিসেবে রসুনের ঔষধি ব্যবহাররে ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। আমরা সকলেই রসুন খাই কিন্তু এর পুষ্টিমান, উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সকলেই ভালোমতো জানার আগ্রহ রয়েছে। এ সকল বিষয়গুলো ভালো করে জানার জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি পুরোপুরি পড়ুন।

আজকের আর্টিকেলে যে অংশে পড়তে চান 

রসুন কি বা রসুনের পরিচিতি

রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগুণ জানার আগে আমাদের রসুনের  পরিচিতি সম্পর্কে জানা দরকার। সুন এর ইংরেজি নাম গার্লিক ( Garlic ) ও বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালিয়াম স্যাটিভাম (allium sativam ). রসুন হলো সাদা বর্ণের, কোয়াযুক্ত ও ঝাঁঝালো গন্ধের একটি মসলা জাতীয় সবজি।

রসুন, পিঁয়াজ জাতীয় পরিবারের অন্তর্ভুক্ত উদ্ভিদ। পেঁয়াজের সঙ্গে রসুনের প্রধান পার্থক্য হল রসুন সাদা রঙের ও অনেক কোয়ার গুচ্ছ।সাধারণত: সবজি ও মসলা হিসেবে খাবার রান্নাতে ব্যবহার হয়ে থাকে।বিভিন্ন মুখরোচক খাবার যেমন-আচার তৈরিতে রসুন ব্যাপক জনপ্রিয়।

এছাড়াও ঔষধ হিসেবে রসুনের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। মহৌষধ হিসেবে রসুনের কার্যকরী গুনের জন্য রসুনকে গরিবের পেনিসিলিন বলা হয়ে থাকে। নাটোর জেলা বাংলাদেশের সবচাইতে বেশি রসুন উৎপাদনকারি জেলা। বাংলাদেশের রসুনের চাহিদার শতকরা ৩০ ভাগ পূরণ করে নাটোর জেলায়  উৎপাদিত রসুন।

রসুন চাষের উপযুক্ত জমি ও জাত 

রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগুণ জানতে গিয়ে এখন জানবো জাত সম্পর্কে। রসুনের অনুমোদিত কোন জাত নেই। স্থানীয় কৃষকরা স্থানীয় জাতের রসুন চাষ করে থাকেন।

আরো পড়ুনঃ ঝালমুড়ি বিক্রি করে মাসে 60 হাজার টাকা ইনকাম।

জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ ও সহজেই গুঁড়ো হয় এমন মাটি রসুন চাষের উপযোগী। মাটিতে রসের অভাব দেখা দিলে মাঝে মাঝে সেচ দিতে হয়। প্রতিবার সেচ দেওয়ার পরে মাটি কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে দিতে হয় যেন রসুন সহজে বড় হতে পারে।

রসুনের পুষ্টিগুণ ও ভিটামিন

রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগুণ এই শিরোনাম আলোচনায় এখন আলোচনা করব সম্পর্কে। রসুন রান্নার উপকরণ হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এর জুড়ি মেলা ভার। গরিবের পেনিসিলিন খ্যাত এই রসুনে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ, ভিটামিন ও মিনারেলস। বহু গুনে-গুণান্বিত এই রসুন প্রাচীনকাল থেকেই

আরো পড়ুনঃ সিজার কখন করাতে হয় ও নরমাল ডেলিভারির গুরুত্ব।

মানবকল্যাণে বিভিন্নভাবে (কখনো মসলা হিসেবে কখনো ভেজষ ওষুধ হিসেবে) ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে রসুনের উপকারিতা ও কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা চলছে। USDA এর তথ্য অনুযায়ী ৩ গ্রাম পরিমাণের একটি কাঁচা রসুনে যে পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা নিম্নে প্রদান করা হলো.

উপাদানের নাম

পরিমাণ 

 

 

ক্যালরি

৪.৫ গ্রাম

  ভিটামিন বি২

 ০.১১ মিলিগ্রাম

চর্বি

০ গ্রাম

 

 

সোডিয়াম

০.৫ গ্রাম

 

 

কার্বোহাইড্রেট

১ গ্রাম

 

 

ফাইবার

০.১ গ্রাম

 

 

সুগার

০ গ্রাম

 

 

প্রোটিন

০.২ গ্রাম

 

 

ভিতামিন সি

০.৯ মিলিগ্রাম

 

 

জিংক

০.০৪ মিলিগ্রাম 



প্যানটোথেনিক (বি৫)

 ০.০১৭ মিলিগ্রাম 

 

 

 ভিটামিন বি৬

 ০.০৩৭ মিলিগ্রাম

 

 

 ফোলেট ( বি৯)

 ০.০৯ মাইক্রোগ্রাম

 

 

 ক্যাসিয়াম 

 ৫.৪৩ মিলিগ্রাম 

 

 

 লৌহ 

 ০.০৫ মিলিগ্রাম 

 

 

 ম্যাগনেসিয়াম 

 ০.৭৫ মিলিগ্রাম

 

 

 ফসফরাস

 ৪.৫৯ মিলিগ্রাম 

 

 

 পটাশিয়াম

 ১২.০৩ মিলিগ্রাম 

 

 

 সেলেনিয়াম

 ০.৪২৬ মাইক্রো গ্রাম

 

 

 ম্যাগানিজ

 ০.০৫ মিলিগ্রাম

 

 

সূত্রঃ ইউএসডিএ

রসুন খাওয়ার উপকারিতা

রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগুণ এই শিরোনামটি আলোচনায় এখন আমরা জানবো রসুন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। রসুন সাধারণত মসলা হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। রসুন বিভিন্ন পুষ্টিমান ও গুনাগুন সমৃদ্ধ হওয়ায় খাওয়ার পাশাপাশি ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রসুনে বিদ্যমান বিভিন্ন যৌগগুলোর কারণেই রসুন ওষুধ হিসেবে মানব শরীরে উপকার করে থাকে।

রসুন খাওয়ার উপকারিতাবিশদভাবে জানতে এখানে পড়ুন

প্রাচীনকালে ঔষধ হিসেবে রসুল ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া যায়। আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে রসুনের বহুবিধ ঔষধিগুণের কারণে, রসুনকে বিস্ময়কর ঔষধ নামে অভিহিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। রসুন খাওয়ার উপকারিতাগুলো পর্যাযক্রমে নিম্নে আলোচনা করা হলো। 

রসুন ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ায়

রসুন ব্লাড সার্কুলেশন বা রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যদি কেউ নিয়মিত প্রতিদিন রসুন সেবন করে তাহলে ব্লাড ভেসেলগুলো শিথিল হয়, যার কারণে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। রসুনের বিদ্যমান বিভিন্ন এন্ট্রিঅক্সিডেন্টের

আরো পড়ুনঃ টাফনিল এর কাজ খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা।

প্রভাবেই মূলত ব্লাড সার্কুলেশন বা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। ব্লাড সার্কুলেশন বৃদ্ধি পাওয়ার মানেই হল মানবদেহে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়া। এর ফলে বডির পেরিফেরাল অংশে এটিপি  সরবরাহ বৃদ্ধি করে শরীরকে সুস্থ রাখে।

রসুন হৃৎপিণ্ডের শক্তিবর্ধক

রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব রসুন হৃদপিন্ডের শক্তিবর্ধন করে সে সম্পর্কে। রসুন নিয়মিত খেলে হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ে। যে সমস্ত ব্যক্তিরা খুব সহজেই বুকের ব্যথা অনুভব করেন অথবা হাঁপিয়ে যান ঐ সমস্ত ব্যক্তিরা যদি নিয়মিত রসুন খান তাহলে তাদের এই ধরনের সমস্যা গুলো থাকে না এবং হার্টের মাশুলগুলো মজবুত হয় ও কর্ম ক্ষমতা বাড়ে। রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধির করে। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় রসুন

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আদিম কাল থেকেই রসুনের ব্যবহার পরিলক্ষিত  হয়। এন্ট্রিফাঙ্গাল এন্ট্রিমাইক্রোবিয়াল, এন্ট্রিব্যাকটেরিয়াল,  এন্ট্রিইনফ্লমেটরি ও এন্ট্রিভাইরাল গুণগুলো রসুনকে ভেজষ ঔষধে পরিণত করেছে। ২০১৬ সালের গবেষণার ফলাফল পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে,

আরো পড়ূণঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল মুখের ব্যবহারের নিয়ম।

একটি রসুনের নির্যাস খাওয়ার ফলে সর্দি ও ফ্ল (Flu) জাতীয় রোগের তীব্রতা কমে যায়। আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রতিদিন নিয়মিত দুই-তিন কোয়া করে রসুন খাওয়া ভালো। উল্লেখ্য যে খালি পেটে রসুন খেলে শরীরে রক্ত প্রবাহ ক্ষমতা বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।

পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে রসুন

পুরুষের যৌন ক্ষমতা বা  সেক্স পাওয়ার বাড়াতে রসুন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। পুরুষের যৌন ক্ষমতা বিভিন্ন কারনে ধীরে ধীরে কমতে পারে। এই কমে যাওয়া যৌন ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করার জন্য রসুন বেশ কার্যকরী। প্রতিদিন নিয়মিত রসুন খেলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।

আরো পড়ুনঃ কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও অপকারিতা।

ফলে পেনিসে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে এরিয়াক্টাল ফাংশন কে সক্রিয় করে রাখে। যার ফলশ্রুতিতে বীর্যপাত ও লিঙ্গ পতন ডিলে বা দেরিতে হয় ও পেনিস শক্ত থাকে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে রসুন সেবনে টেস্টেরণ হরমোনের মাত্রা বাড়ায়। এভাবেই পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে

রসুন উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার কমাতে সহায়তা করে। রক্তের সিরামে লোডেনসিটি অফ লাইপ্রোটিন (এল ডি এল) ও লেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে সাধারণত হাই ব্লাড প্রেসার হয়। ব্লাড ভেসেল প্রসারনের মাধ্যমেও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়মিত প্রতিদিন সকালে দুই কোয়া রসুন খেলে এল ডি এল বা লিপিড ও কোলেস্টেরল কমনোর মাধ্যমে হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে। প্রেসারের অন্যান্য ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি এভাবে রসুন খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

রসুন ওজন কমাতে সহায়তা করে

রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আমরা জানবো রসুন কিভাবে ওজন কমাতে সহায়তা করে সে সম্পর্কে। রসুন ওজন কমাতে সহায়তা করে। খাবার-দাবার নিয়ন্ত্রণ করে কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করার পাশাপাশি যদি

কেউ নিয়মিত প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে ২-৩ কোয়া কাঁচা রসুন ভিজিয়ে তার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পান করেন তাহলে ওজন কমে। এভাবে কয়েক সপ্তাহ রসুন ও লেবুর রস মিশ্রিত পানি পান করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

ত্বক ভালো রাখে ও ব্রণ দূর করে

রসুন ত্বকের যত্নে ও ব্রন ভালো করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। রসুনে বিদ্যমান এন্ট্রিঅক্সিডেন্ট ও অন্যান্য জৈবিক উপাদান গুলো ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ও এন্ট্রিএজিং ভাব ফুটিয়ে তুলে। সোরিয়াসিস, এলোপেসিয়া, ফাংগাছের ইনফেকশন ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যা গুলো নিরাময়ে রসুনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও ব্রণের ক্ষত সারাতে রসুনের বহুবিধ ব্যবহার হয়েছে।

শরীরের অবাঞ্ছিত ফোলা বা গোটা রোধ করে রসুন

রসুন নিয়মিত খেলে শরীরের অবাঞ্ছিত ফোলা বা গোটা কমে যেতে পারে। যাদের শরীরে এরকম অবাঞ্চিত ফোলা পিণ্ড বা গোটা রয়েছে যেগুলো শরীরের কোন ক্ষতি করে না বা ব্যথা করে না, বড় হয় না বা ছোট হয় না কিন্তু দেখতে কেমন জানি অসুন্দর লাগে।

এই সমস্ত গোটা মুছে ফেলতে প্রতিদিন নিয়মিত চার থেকে ছয় কোয়া রসুন খেলে আস্তে আস্তে ঐ অবাঞ্চিত গোটা বা ফোলা কমে যেতে পারে। সকালে খালি পেটে দুই কোয়া, দুপুরে ও রাতে ভাত খাবার পরে দুই কোয়া রসুন খাওয়া যেতে পারে।

রসুন ডায়াবেটিস নিয়োন্ত্রণে সহায়তা করে 

রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগুণ এই শিরোনামটি আলোচনায় এখন আমরা জানবো রসুন কিভাবে ডায়াবেটিস নিয়োন্ত্রণ করে ষে সম্পর্কে। রসুন নিয়মিত সেবন করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হয়। এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয় ও লিভারের

গ্লুকোজ উৎপাদন কমায় ফলে সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডায়াবেটিসের রোগীদের দীর্ঘদিন ইনসুলিন ব্যবহার করার কারণে ইনসুলিন রেজিস্টেন্স বেড়ে যেতে পারে, তাই নিয়মিত রসুন সেবনে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে ইনসুলিনের রেজিস্টেন্স কমিয়ে দেয়।

হাড় বা বোনসের শক্তি বাড়ায় রসুন

হাড় বা বোনসের শক্তি বাড়ায় রসুন। হাড়ের ক্ষয়জনিত সমস্যা বেশি হয় মেয়েদের। একটা বয়স পরে মেয়েদের এই হাড়ের সমস্যা বেড়ে যায়। রসুন মেয়েদের শরীরে ইস্টোজেন হরমোনের সিক্রেশন বাড়ায় ও হাড়ের ক্ষয়জনিত সমস্যা রোধ করা। তাই নিয়মিত রসুন সেবন করলে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। শুধু মহিলাদেরই নয় পুরুষদেরও হাড় ক্ষয়জনিত সমস্যা হতে পারে। প্রতিদিন ২ গ্রাম পরিমাণ রসুন বেটে রস করে খেলে নারী-পুরুষ উভয়ের হাড়ের সমস্যা দূর হয়।

টিসু বা কোষের ক্ষতি রোধ করে রসুন

টিসু বা কোষের ক্ষতি রোধ করতে রসুন যথেষ্ট উপকারী। রসুনে বিদ্যমান পর্যাপ্ত পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট, মিনারেলস ও ভিটামিন যা সেল ড্যামেজ  ও এজিং ফ্যাক্টর কে রোধ করে। সেল ড্যামেজ প্রতিরোধের মাধ্যমে টিস্যুগুলোকে সক্রিয় রাখে। রসুনের বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো রক্তের ফ্রি রেডিকেল গুলোকে বাধাগ্রস্ত করে সেলের ক্ষতি প্রতিরোধ করে। নিয়মিত সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেলে আপনি থাকবেন প্রাণবন্ত।

ফুসফুসের ইনফেকশন বা সংক্রমণ প্রতিরোধ করে

রসুন ফুসফুসের সংক্রমণ বা ইনফেকশন রোধ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কারণে ফুসফুসের ইনফেকশন হতে পারে। ধুলাবলির কারণে সংক্রমণ হতে পারে, নিউমোনিয়ার কারণে সংক্রমণ হতে পারে বা ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণে ফুসফুসের ইনফেকশান হতে পারে। প্রতিদিন দুই থেকে তিন কোয়া রসুন কাঁচা অথবা বেটে খেলে এই সমস্যাগুলো থেকে পরিত্রান পাওয়া যেতে পারে ও ফুসফুসে স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

রসুন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

রসুন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। রসুনে বিদ্যমান  অ্যালিসিন ক্যান্সার কোষগুলোর কার্যকরী ভূমিকাতে বাধা প্রদান করে। গবেষণা লব্ধ ফলাফল স্টাডি করে দেখা যায় যে রসুনের মধ্যে ক্যান্সার বিরোধী বা ক্যান্সার প্রতিরোধমূলক প্রভাব রয়েছ। কোলন ক্যান্সার, পাকস্থলির ক্যান্সার, পিত্তথলির ক্যান্সার ও ফুসফুসে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে রসুনের কার্যকরী ভূমিকা লক্ষণীয়।

  • রসুনে এমন কোনো যৌগ রয়েছে যা কার্সিনোজেন সক্রিয়করণকে বাধা দেয় ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
  • কারসিনজেন নিষ্ক্রিয়কারী এনজাইমগুলোর সিক্রেশন বৃদ্ধি করে।
  • ক্যান্সাসারের বিকাশের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে এমন  প্রদাহ রোধ করে।
  • ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হলে রিপিয়ারে সহায়তা করে।

কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমায়

কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে রসুন। রসুনের বিদ্যমান পুষ্টি ও ফাইটোকেমিকেলস্ গুলো কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। মেডিকেল সাইন্স এর এক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত রসুন খেলে উল্লেখযোগ্যভাবে এথেরোস্কেরোসিস, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাইপার লিপিডিমিয়া, মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন, ইসকেমিক স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে।

রসুনের অন্যান্য উপকারিতা

রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগুণ আলোচনায় এখন জানবো রসুনের অন্যান্য উপকারিতা সম্পর্কে। রসুন খেলে উপরোক্ত উপকার গুলো ছাড়াও আরো কিছু উপকার পাওয়া যায়, সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো - 

  • রসুন কৃমিনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • রসুন খেলে এ্যাজমা রোগের উপশম করে।
  • রসুন শ্বাসকষ্ট কমায়।
  • চুল পাকা কমায় রসুন।
  • শারীরিক মিলনের আগ্রহ বাড়ায় রসুন।
  • রসুন হজমে সহায়তা করে।
  • প্রসাবে বেগ বাড়ায় রসুন।
  • সহবাসের সময় বাড়ে রসুন খেলে।
  • রসুন খেলে নারী পুরুষ উভয়ের সেক্সের ড্রাইভ বাড়ায়।
  • রসুন শ্বাসনালী মিউকাস বের করতে সহায়তা করে।
  • ঠান্ডা লাগা জ্বর-সর্দির উপশম করে রসুন।

রসুন সম্পর্কে কিছু সাধারণ জ্ঞান

রসুন আমাদের বাংলাদেশে মসলা হিসাবেই বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। পাশাপাশি এর কিছু ঔষধগুণ রয়েছে। বহুবিধ গুণের কারণে রসুনকে "সুপার ফুড" বলা হয়ে থাকে। রসুন সম্পর্কে কিছু সাধারণ জ্ঞান নিম্নে আলোচনা করা হলো।

  • বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রসুন উৎপাদন হয় চীনে, প্রায় ৬০%।
  • বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রসুন উৎপাদন হয় নাটোর জেলায়, প্রায় ৩০%।
  • ইউরোপের দেশগুলোতে "হোয়াইট ম্যাজিক" করতে রসুন ব্যবহার করা হতো।
  • বিভিন্ন দেশে মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরিতেও রসুন ব্যবহার করা হয। এর মধ্যে 'লাসুন কি ক্ষীর' অন্যতম।
  • ভ্যাম্পায়ার তাড়ানোর কাজে রসুন ব্যবহার করা হতো।
  • প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আহত সৈনিকদের গ্যাংগ্রিনের চিকিৎসায় সালফার সংকট দেখা দিলে রসুন ব্যবহার করা হয়েছিলো।
  • ১৯ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে 'রসুন দিবস' দিবস পালিত হয়।

রসুন কখন, কিভাবে খাবেন বা খাওয়ার নিয়ম

রসুন হলো ঝাঁঝালো ঘ্রাণযুক্ত একটি মসলা যা পিয়াজ ও মরিচের সাথে তরকারিতে রান্না করে খাওয়া যায়। বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায় রসুন,তবে কাঁচা খাওয়াতে উপকার বেশি পাওয়া যায়। রসুন সকালে খালি পেটেও খাওয়া যায় আবার দুপুরে বা রাতে ভাত খাওয়ার পরে ভরা পেটেও খাওয়া যায়। আপনি যে সময় খেলে স্বস্তি বোধ করবেন সে সময় খেতে পারবেন। নিম্নে রসুন খাওয়ার বিভিন্ন উপায়গুলি আলোচনা করা হলো।

রসুন কখন, কিভাবে খাবেন বা খাওয়ার নিয়ম
  • তরকারির সাথে রান্না করে রসুন খাওয়া যায়।
  • রসুন কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া যায়। 
  • রসুন ছিলে কয়েক কোয়া পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি খাওয়া যায়। 
  • কুসুম গরম পানির সাথে রসুনের কোয়া ও লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া যায়। 
  • রসুন সিদ্ধ করেও খাওয়া যায়। 
  • রসুনের আচার তৈরি করে খাওয়া যায়।
  • রসুন কুচিকুচি করে কেটে ধনেপাতার সাথে মিশিয়ে সালাদ বানিয়েও খেতে পারেন।

বিঃ দ্রঃ রসুন খাওয়ার পরে ভালো করে মুখ ও দাঁত পরিষ্কার করতে হবে। যাতে করে এর কটু গন্ধ অন্যের অসুবিধা সৃষ্টি না করে। ভালো করে দাঁত মেজে নিন, প্রয়োজনে মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।

কাঁচা রসুন খাওয়ার অপকারিতা

রসুন অনেক উপকারী, পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও ভেষজ ঔষধি গুণসম্পন্ন একটি মসলা জাতীয় সবজি, যা আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে থাকে। সবার শরীরে যে ভালো উপকারে আসবে তা কিন্তু নয় যাদের আগে থেকে কোন সমস্যা আছে তাদের ক্ষতিও করতে পারে। প্রত্যেকটি জিনিসেরই কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। তেমনি রসুলের কিছু অপকারিতা নিম্নে আলোচনা করা হলো। 

  • গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত মাত্রায় রসুন খেলে লিভারের বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
  • রসুনে বিদ্যমান সালফার পেটে গ্যাস তৈরি করতে পারে। তাই খালি পেটে রসুন খেলে অনেকেরই পাতলা পায়খানা হতে পারে।
  • রক্তের ঘনত্ব কমিয়ে দেয় রসুন, তাই এসপেরিন জাতীয় ওষুধের সাথে রসুন খাওয়া উচিত না। এতে করে রক্তের ঘনত্ব আরো কমে যেতে পারে।
  • গর্ভবতী মহিলাদের কাঁচা রসুন খাওয়া উচিত না। এতে করে প্রসব বেদনা বেড়ে রক্তক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে। 
  • দুগ্ধ দানকারী মাদের কাচা রসুন খাওয়া উচিত না, এতে করে দুধের স্বাদ পাল্টে যেতে পারে। বাচ্চা দুধ খেতে অনিহা করতে পারে।
  • বেশি পরিমাণে কাঁচা রসুন খেলে ত্বকে লাল লাল ফুসকুড়ি পড়তে পারে বা এলার্জি হতে পারে।
  • পরিমিত পরিমাণে রসুন খেতে হবে। বেশি করে রসুন খেলে বুক জ্বালাপোড়া  বা বমির ভাব হতে পারে।
  • বেশি পরিমাণে কাঁচা রসুন খেলে মাথা ব্যাথা হতে পারে।
  • রসুন খাওয়ার সময় এর ঝাঁঝালো গন্ধে চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে।

রসুন খাওয়ার সতর্কতা

রসুন আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন মসলা। রসুন খেলে দু-একটি অপকারিতা ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শরীরের উপকার হয়ে থাকে। তবে রসুন খাওয়ার সময় নিম্নোক্ত সতর্কতা গুলো মাথায় রাখতে হবে।

  • ইসলাম ধর্ম মতে রসুন খেয়ে মসজিদে বা ইবাদতে না যাওয়াই উত্তম। কারণ রসুনের গন্ধে আল্লাহর নাম করতে গিয়ে মন অন্যদিকে চলে যেতে পারে বা ইবাদতে মনযোগ নষ্ট হতে পারে।
  • সনাতন ধর্ম মতে অনেক হিন্দুরাই পূজা-অর্চনা করার সময় বা মন্দিরে যাওয়ার সময় রসুনকে এড়িয়ে চলেন। কারণ রসুনের গন্ধে মনের পবিত্রতা নষ্ট হয় বলে তারা মনে করেন।
  • রসুন খেয়ে যদি আপনার কোন রকম সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আপনি রসুন খাওয়া বাদ রাখবেন।
  • নিয়মিত রসুন খাওয়া শুরু করার পূর্বে আপনি অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিবেন।

পরিশেষ

রসুনের উপকারিতার কথা ভেবেই হয়তো বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন গরিবের "পেনিসিলিন" ও "সুপারফুড"। আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম মসলা হিসেবে রসুন ব্যবহারের পাশাপাশি এর অনেক পুষ্টিগুণ ও ভেষজ ঔষধিগুণ সম্পর্কে। রসুনের পুষ্টিগুণ ও ভেষজ ঔষধিগুণ  মানবদেহে আরো কার্যকরী করার জন্য বিশদ বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রয়োজন। বিশেষ করে খাবার নিয়ম (কখন কখন খেতে হবে, কি মাত্রায় বা পরিমানে খেতে হবে, কত দিন ধরে খেতে হবে ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া)।

আশা করি আজকের এ আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা রসুন খাওয়ার উপকারিতা,অপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। রসুন সম্পর্কে আজকের এই লেখাটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করে দিবেন, যেন সবাই রসুন সম্পর্কে জানতে পারে। আজকের আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url