চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ উপকারিতা খাওয়ার নিয়ম ও দাম
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ উপকারিতা খাওয়ার নিয়ম ও দাম সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলটি লেখা। চিয়া সিড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য এই আর্টিকেলটি পুরোপুরি পড়ুন। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রাচীন অ্যাজটেক জাতির খাদ্য তালিকার প্রধান খাদ্য হিসেবে এই চিয়া সিড অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে জানা যায়।
প্রাচীনকাল থেকেই আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশ ও মেক্সিকোতে চিয়া সিড পাওয়া যায়। বহু পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এক ধরনের বীজ এই চিয়া সিড। এই চিয়া সিডের গাছগুলো সাধারণত শস্যজাতীয় উদ্ভিদ হিসেবে মরুভূমিতেই বেশি জন্মায়। অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে চিয়া সিডকে সুপারফুড বলা হয়।
পেজ সুচিপত্র
চিয়া সিড কি
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ উপকারিতা খাওয়ার নিয়ম ও দাম সম্পর্কে আলোচনায়, আমাদের প্রথমে জানা দরকার চিয়া সিড কি? চিয়া সিড (Chia Seeds) এর বাংলা নাম হলো চিয়া বীজ। নাম শুনে বুঝতেই পারছেন এক ধরনের চিযা গাছের বিচি বা বীজ, যাকে চিয়া সিড বা চিয়া বীজ বলে।
এইটি মূলত: সালভিয়া হিসপানিকা নামক মিন্ট প্রজাতির উদ্ভিদের বীজ বা বিচি যাকে চিয়া বীজ বা চিযা সিড বলা হয়ে থাকে। এই চিয়া সিডগুলো দেখতে কালো রংয়ের হয়ে থাকে কখনো কখনো সাদা রঙের দেখা যায়। এগুলো সরিষা বা তিলের দানার মত ছোট ছোট আকারের হয়ে থাকে।
চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ উপকারিতা খাওয়ার নিয়ম ও দাম সম্পর্কে আলোচনায় এখন আমরা জানবো চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। বিভিন্ন পুষ্টিবিজ্ঞানীদের গবেষণালব্ধ ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পুষ্টি বিজ্ঞানীরা চিযা সিড কে সুপারফুড নামে
আরো পড়ুন: লটকন ফল খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা
আখ্যায়িত করেছেন। এই চিয়া সিডে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান যার পুষ্টিমান মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। চিয়া সিড এর এই পুষ্টি উপাদান ও পুষ্টিমানগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।
চিয়া সিডে রয়েছে -
- কলার চেয়ে ২ গুণ বেশি পটাশিয়াম।
- কমলা লেবুর চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি।
- দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম।
- স্যামন মাছের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ওমেগা - 3 ফাটি এসিড।
- মুরগির ডিমের চেয়ে তিনগুণ বেশি প্রোটিন।
- পালং শাকের চেয়ে তিনগুণ বেশি আয়রণ।
- চিয়া সিডে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৬ ও ভিটামিন ই।
এছাড়াও রয়েছে কয়েরসেটিন, ক্যামফেরাল, ক্যাফিক এসিড ও ক্লোরোজেনিক এসিডের মতো এন্ট্রিঅক্সিডেন্ট, জিংক। দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফুড ফাইবার বা খাদ্য আঁশ এর মতো প্রয়োজনীয় উপাদান।
তথ্য সূত্র: USDA এর ন্যাশনাল নিউট্রিয়েনট ডাটাবেজ।
চিয়া সিডের উপকারিতা
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ উপকারিতা খাওয়ার নিয়ম ও দাম শিরোনাম আলোচনায় এখন আমরা জানবো চিয়া সিড এর উপকারিতা অর্থাৎ সিয়া সিড খেলে মানব শরীরে কি ধরনের উপকার করে সে সম্পর্কে। নিম্নে চিয়া সিডের উপকারিতা গুলো ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো।
চিয়া সিড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ চিয়া সিডে বিদ্যমান এনটিঅক্সিডেন্ট, জিংক ও ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ফলে শরীর সংক্রমণ ব্যাধি থেকে রক্ষা পায়।
হৃদপিণ্ড ভালো রাখে সিয়া সিড: চিয়া সিডে বিদ্যমান ফ্যাটি এসিড খ্যাত ওমেগা - 3 হৃৎপিন্ডের জন্য ভালো। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
আরো পড়ুন: রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্ঠীগুণ
ওজন কমাতে সহায়তা করে: চিয়া সিড ফাইবার জাতীয় খাদ্য, একবার খেলে অনেক সময় ধরে পেটে থাকে ও পেট ভরা ভরা আছে মনে হয়। এতে করে পূণরায় খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছা বা প্রবণতা কম হয়। যার কারণে খাওয়া কম
লাগে ও ওজন কমতে সহায়তা করে। এছাড়াও ক্ষুদা মন্দা দূর করে এই চিয়া সিড। কুসুম গরম পানিতে চিয়া সিড ২০-২৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে তার সাথে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে নিয়মিত খেলে ওজন কমে।
মস্তিষ্কের জন্য উপকারী: চিয়া সিডে বিদ্যমান ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড ব্রেন বা মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কে বাড়িয়ে দেয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করে: চিয়া সিড ইনসুলিনের কার্যকারী ক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে,ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ত্বক ও চুলের যত্নে: ত্বক ও চুলের যত্নে চিয়া সিড অনেক কার্যকরী। এতে বিদ্যমান বিভিন্ন এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড ত্বকের শুষ্কতা রোধ করে ও ত্বকের বুড়িয়া যাওয়া ভাব দূর করে ফলে ত্বকের লাবণ্য ফিরে আসে। চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে ও চুল ঝরে পড়া রোধ করে ফলে চুল আরও সুন্দর হয়।
খাবারের রুচি বাড়ায়: চিয়া সিডে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও জিংক যেগুলো আমাদের পাকস্থলীর গাস্টিন লেভেল বৃদ্ধি করার মাধ্যমে খাবারের রুচি বাড়ায়্গভ
গর্ভবতী মাদের জন্যঃ অতিরিক্ত কোষ্ঠকাঠিন্য হলে গর্ভবতী মায়েরা বিশেষ প্রয়োজনে চিয়া সিড খেতে পারবেন। তবে চিয়া সিড খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া ভালো।
হজমে সহায়তা করে: চিয়া সিডে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার যা খাদ্যদ্রব্য হজমে সহায়তা করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং নিয়মিত পরিপূর্ণ মলত্যাগে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম
হাড় ও দাঁত এর স্বাস্থ্য ভালো রাখে: চিয়া সিডে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি হাড় ও দাঁত এর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। হাড় ও দাঁতের মজবুত অংশ ক্যালসিয়াম দ্বারা তৈরি। মাড়ির স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে ভিটামিন সি।
রক্তশূন্যতা দূর করে: চিয়া সিডে বিদ্যমান পর্যাপ্ত আয়রন রক্তশূন্যতা দূরীকরণ সহায়তা করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে: চিয়া সিডে বিদ্যমান এন্ট্রিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের অবাঞ্ছিত ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি প্রতিহত করতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি শরীরের প্রদাহ রোধ করে।
চিয়া সিড কোথায় পাওয়া যায়
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ উপকারিতা খাওয়ার নিয়ম ও দাম আলোচনায করতে গিয়ে এখন আমরা আলোচনা করবো চিয়া সিড কোথায়ই বা কোন দোকানে পাওয়া যায়। পুষ্টিগুণে ভরপুর
আরো পড়ুন: কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সতর্কতাগুলো কি কি
সুপারফুড খ্যাত এই চিয়া সিড স্বনামধন্য সকল মুদিখানার দোকানে ও সুপারসোপ গুলোতে পাওয়া যায়। স্বনামধন্য অনেক ফলের দোকানেও পাওয়া যায়।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ উপকারিতা খাওয়ার নিয়ম ও দাম সম্পর্কে আলোচনায় এখন আমরা জানবো চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম। চিয়া সিডের নিজস্ব কোন স্বাদ বা গন্ধ নেই তাই এটি যে কোন খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে বা শুধু পানিতে ভিজিয়েও খাওয়া যেতে পারে। এটা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়, খাওয়ার নিয়মগুলো নিম্নে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হলো
- স্বাভাবিক পানি বা কুসুম গরম এক গ্লাস পানিতে দুই চামচ চিয়া সিড ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে অথবা রাত্রে ঘুমানোর আগে খেতে পারেন।
- সকালের নাস্তার সাথে, স্ন্যাকস অথবা ডেজার্ট হিসেবেও খেতে পারেন।
- টক দই এর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
- রান্না করা সবজি বা সালাদের উপর ছিটিয়েও খাওয়া যায়।
- আপনি চাইলে ওটস, স্মুদি, পুডিং, জুস ইত্যাদি খাবারের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।
- চিয়া সিডের টেস্ট বাড়ানোর জন্য এর সাথে লেবুর রস, ফলের রস অথবা মধু মিশিয়েও খেতে পারেন।
চিয়া সিড এর অপকারিতা
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ উপকারিতা খাওয়ার নিয়ম ও দাম সম্পর্কে আলোচনায় এবার আমরা আলোচনা করবো এর অপকারিতা সমূহ। বহু পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ চিয়া সিড আমাদের অনেক উপকার করে থাকে। কিন্তু যদি পরিমাণে বেশি খাওয়া হয় বা নিয়ম-নীতি না মানা হয় তাহলে কিছু অপকারিতা দেখা দিতে পারে। অপকারিতা বলল নিম্নে আলোচনা করা হলো।
এলার্জি: চিয়া সিড খেলে এলার্জির ভাব বেড়ে যেতে পারে। যাদের আগে থেকে অ্যালার্জি আছে তাদের চিয়া সিড খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে নইলে ফুসকুড়ি, চুলকানি, স্কিনরাস বা শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে।আরো পড়ুন: স্মার্টফোন ব্যবহারে শিশুদের কি কি ক্ষতি করে
বদহজম: চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। বেশি পরিমাণে চিয়া সিড খেলে অনেক সময় বদহজম, বমি বমি ভাব বা ডাইরিয়া হতে পারে।
ওজন কমে যেতে পারে: অতিরিক্ত পরিমাণের চিয়া সিড খেলে ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে।
ক্যান্সার: বিজ্ঞানীদের গবেষণা লব্ধ ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যাদের প্রোস্টেট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার আছে এই সমস্ত রোগীরা বেশি পরিমাণে চিয়া সিড খেলে এই ক্যান্সার বেড়ে যেতে পারে।
চিয়া সিড এর দাম
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ উপকারিতা খাওয়ার নিয়ম ও দাম সম্পর্কে আলোচনায় এখন আমরা জানবো চিয়া সিডের দাম কত? বাজার অনুসন্ধান করে দেখা গেছে যে চিয়া সিডের দুই রকমের দাম রয়েছে। যেগুলো প্যাকেট আকারে বিক্রি হয় তার দাম একটু বেশি।
পাকেটের গুলো ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। আর যেগুলো খোলা আকারে বিক্রি করা হয় সেগুলো একটুঁ কম অর্থাৎ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়ে থাকে।
উপসংহার
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ উপকারিতা খাওয়ার নিয়ম ও দাম সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলটিতে নির্ভুলভাবে সব আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। ইতোমধ্যে আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা চিয়া সিড সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এর পুষ্টিগুণ বেশি হলেও, বেশি খাওয়া উচিৎ নয়।
আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের ভালো লেগেছে ও উপকৃত হয়েছেন। আপনাদের ভালো লাগাটা সবার মধ্যে শেয়ার করে দিতে ভুলবেন না। পরিমাণ মতো পুষ্টিগুণ সম্পন্ন চিয়া সিড খাবেন, সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url