কড লিভার অয়েল খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সর্তকতা
কড লিভার অয়েল খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সর্তকতা সম্পর্কে আজকে আর্টিকেলটি লেখা। ধৈর্য সহকারে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে কড লিভার অয়েল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ঔষধের দোকানে গেলে আপনারা দেখতে পাবেন ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই কড লিভার অয়েল বিক্রি হচ্ছে। এই কড লিভার অয়েল কড মাছের তেল কিন্তু একটি ঔষধ। যেহেতু এটি একটি ঔষুধ তাই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত না খাওয়াই উত্তম।
পেজ সুচিপত্র
কড লিভার অয়েল কি
কড লিভার অয়েল ( Cod Liver Oil ) হলো সামদ্রিক কড মাছের তেল যা এক ধরনের ঔষধ বা মেডিসিন। এই ঔষধগুলো সফট জিলেটিন ক্যাপসুল আকারে ঔষধের দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধগুলো খেতে পারবেন।
প্রতিটি সফট জিলেটিন ক্যাপসুলে আছে কড লিভার অয়েল বিপি ০.৩০ এম এল। যাতে আছে -
- ভিটামিন এ ৬০০ আই ইউ।
- ভিটামিন ডি৩-৮৫ আই ইউ।
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং
- ভিটামিন ই ০.৩০ আই ইউ (সহায়ক উপাদান)।
কড লিভার অয়েল গর্ভাবস্থায় ও স্তনদানকারী মহিলাদের জন্য নিরাপদ কি না
কড লিভার অয়েল খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সর্তকতা আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো কড লিভার অয়েল গর্ভাবস্থায় ও স্তনদানকারী মহিলাদের খাওয়ার জন্য নিরাপদ কিনা সে সম্পর্কে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ
স্বাভাবিকভাবে ভিটামিন এ গ্রহণের সর্বোচ্চ মাত্রা হলো ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার আই ইউ। কড লিভার অয়েলে আছে মাত্র ৬০০ আই ইউ ভিটামিন এ।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে কড লিভার অয়েল গর্ভবতী মা ও দুগ্ধদানকারী মা উভয়ের জন্য নিরাপদ।
কড লিভার অয়েল এর উপকারীতা
কড লিভার অয়েল খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সর্তকতা শিরোনামে আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো এই ঔষধটির উপকারিতা বা কোন কোন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে বা কোন কোন রোগে নির্দেশিত সে সম্পর্কে। কড লিভার অয়েল যে রোগগুলোর বিরুদ্ধে নির্দেশিত নিম্নে সেগুলো নাম উল্লেখ করা হলো।
কড লিভার অয়েল এর উপকারীতা -
- ভিটামিন এ এর অভাব পূরণ করে। চোখের দৃষ্টি ঠিক রাখে।
- ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করে। রিকেট রোগ সারাতে সহায়তায় করে।
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন ডি, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে বয়স জনিত কারণে স্মৃতিভ্রম দূর করে।
- কড লিভার অয়েলে বিদ্যমান ফ্যাটি আসিড শ্বেতরক্ত কণিকা বৃদ্ধি করে,,ত্বক ভালো রাখে।
- শরীরের বাত ব্যথা ও জয়েন্টের ব্যথা দূর করে এবং স্টাফিনেস রিমুভ করে।
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, দাঁতের গঠন মজবুত করে, হাড়ের গঠন শক্ত করে ও কোষ, কলা, ও পেশির গঠন ঠিক রাখে।
- সর্দি, কাশি ও অন্যান্য সংকামণ ব্যাধির বিরুদ্ধে কাজ করে।
- গর্ভবতী মা, নবজাতক, শিশুদের ও বয়স্ক রোগীদের খাবারের ঘাটতি পূরণ করে।
- নবজাতকের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র গঠনে সহায়তা করে।
- সুস্থ, সবল ও শক্ত শরীর গঠনে সহায়তা করে।
- কড লিভার অয়েল হার্ট সুস্থ রাখে, ট্রাইগ্লিসাইড কমায়,এইচ ডি এল (HDL) বাড়ায় ও রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা কমায়।
- একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে কড লিভার অয়েল কানের ইনফেকশনের অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে খেলে দ্রুত আরোগ্য লাভ হয়।
- স্বাভাবিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
- রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিস, বিষন্নতা ও সিজোফ্রেনিয়ার উপসর্গ কমাতে সহায়তা করে।
- একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যক্ষা রোগ বা টিউবারক্লোসিস ব্যাকটেরিয়াম বা টিবি রোগে অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে কড লিভার অয়েল খেলে অপেক্ষাকৃত কম সময়ে যক্ষা রোগ ভালো হয়।
- এছাড়াও কড লিভার অয়েল এর এন্টিথ্রোম্বটিক, এন্টিএরিথমেটিক, এন্ট্রিইনফ্লামেটরি ও এট্রিহাইপারটেনসিভ কার্যক্ষমতা রয়েছে।
রেজিস্টার্ড ফিজিশিয়ানের পরামর্শে সেবন করুন।
কড লিভার অয়েল খাওয়ার নিয়ম বা সেবনমাত্রা ও সেবনবিধি
কড লিভার অয়েল খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সর্তকতা শীর্ষক আলোচনায় এখন আমরা জানবো কড লিভার অয়েল খাওয়ার নিয়ম বা সেবনমাত্রা ও সেবনবিধি সম্পর্কে। যেহেতু এটি একটি ঔষধ তাই বিভিন্ন বয়সের জন্য খাওয়ার নিয়মটাও একটু ভিন্ন ভিন্ন। নিম্নে কড লিভার অয়েল খাওয়ার নিয়ম প্রদান করা হলো।
বয়স্ক ও ৬ বছরের বেশি শিশুদের জন্যঃ এক থেকে দুইটি কড লিভার অয়েল ক্যাপসুল দিনে তিনবার খাবারের সাথে অথবা খাবারের পরে সেব্য।
শিশু ছয় বছরের নিচেঃ রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সব্য।
গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মহিলাদের জন্যঃ একটি করে ক্যাপসুল দিনে তিনবার খাবারের সাথে বা খাবারের পরে সেব্য।
কড লিভার অয়েল এর সাইড ইফেক্ট বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
কড লিভার অয়েল খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সর্তকতা আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো কড লিভার অয়েল খাওয়ার সাইড ইফেক্ট বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে। আমরা জানি কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়।
আরো পড়ুনঃ টাফনিল এর কাজ খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা
কড লিভার অয়েল সামুদ্রিক কড মাছের তেল, মাছ হিসেবেই খান আর ঔষধ হিসেবেই খান, যেটাই করুন না কেন অতিরিক্ত খেলে নিম্নোক্ত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
- বেশি পরিমাণে খেলে হাইপারভিটামিনোসিস হতে পারে।
- ত্বক অমসৃণ ও খসখসে হতে পারে।
- জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধি ফুলে যেতে পার।
- ক্লান্তি বোধ হতে পারে।
- ওজন কমে যেতে পারে।
- হার্টবিট বেড়ে যেতে পারে।
- অ্যানোরেক্সিয়া বা ক্ষুদামন্দা হতে পারে।
- বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
- বেশি বেশি পিপাসা লাগতে পারে।
- তলপেটে ব্যথা হতে পারে।
- ঘন ঘন প্রস্তাব হতে পারে।
- মুখ শুকিয়ে যেতে পারে। ইত্যাদি।
- কড লিভার অয়েল অতিরিক্ত খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কড লিভার অয়েল খাওয়ার সতর্কতা
কড লিভার অয়েল খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সর্তকতা আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো কড লিভার অয়েল খাওয়ার সতর্কতা সম্পর্কে। কড লিভার অয়েল কড মাছের তেল যা কড মাছের লিভারে পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও ১০টি উপকারিতা
বর্তমান সময়ে আমাদের পরিবেশ তথা পানি দূষণের কারণে এই মাছগুলোতে পারদ, ডিটক্সিন, পলিক্লোরিনেটেড বিফেনাইল, ইত্যাদি বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া যায়। এই পদার্থগুলো মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
কড লিভার অয়েল খাওয়ার সময় নিম্নোক্ত সতর্কতা গুলো অবলম্বন করা উচিত।
- যাদের ওজন কম তাদের সর্তকতার সহিত খাওয়া উচিত। ওজন কমে যেতে পারে।
- হার্টের রোগীদের সতর্কতার সহিত খাওয়া উচিত, হার্টবিট বেড়ে যেতে পারে।
- যাদের আগে থেকেই ক্ষুধা কম তাদের সতর্কতার সহিত খেতে হবে, অ্যানোরেক্সিয়া বা ক্ষুদামন্দা হতে পারে।
- কিডনি রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শে সতর্কতার সহিত খাওয়া উচিত।
- কড লিভার অয়েল এর প্রতি সেনসিটিভ রোগীদের সতর্কতার সহিত খাওয়া উচিত।
কড লিভার অয়েল এর দাম বা মূল্য কত
কড লিভার অয়েল খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সর্তকতা আলোচনায় এখন আমরা জানবো কড লিভার অয়েল ঔষুধের দাম কত? এই ওষুধটি বাজারে সফট জিলেটিন ক্যাপসুল হিসেবে ঔষধের দোকানে কিনতে পাওয়া যায়।
এর প্রতিটি ক্যাসুলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বা দাম ৩.০০ (তিন) টাকা। একটা স্ট্রিপে ১৫ টি ক্যাপসুল থাকে যার মূল্য হল ৪৫.০০ টাকা। একটি বক্সে ৬০ টি ক্যাপসুল থাকে যার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বা দাম হলো ১৮০.০০ টাকা।
কোথায় পাওয়া যায়
কড লিভার অয়েল খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সর্তকতা আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো এই ঔষধটি কোথায় পাওয়া যায় সে সম্পর্কে। আগেই বলেছি এটি একটি ওষুধ সেজন্য এই ঔষধটি ঔষধের দোকানে পাওয়া যায়।
সরকার অনুমোদিত সকল ফার্মেসিতে বা ঔষুধের দোকানে এই ওষুধটি বিক্রয় করা হয়। ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র বা প্রেসক্রিপশনা দেখিয়ে ঔষুধের দোকানে ঔষুধটি কিনতে পারবেন।
কড লিভার অয়েল এর বিকল্প ব্র্যান্ড
কড লিভার অয়েল খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সর্তকতা শিরোনাম আলোচনায় এখন আমরা জানবো কড লিভার অয়েল এর বিকল্প ব্রান্ড বা সমতুল্য আর কি কি ব্র্যান্ড বাজারে পাওয়া যায় সে সম্পর্কে।
কড লিভার অয়েল ক্যাপসুলটি ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি মার্কেটিং করে। এর বিকল্প ব্র্যান্ড অর্থাৎ আর কোন কোন কোম্পানি কি নামে মার্কেটিং করে সেগুলো নিম্নে প্রদান করা হলো।
ব্র্যান্ডের নাম - কোম্পানির নাম
- কড অয়েল - Cod Oil - Range ফার্মাসিটিক্যালস।
- কডভিট - Codvit - Opsonin ফার্মাসিউটিক্যালস।
- কডক্যাপ - Codcap - Incepta ফার্মাসিটিক্যালস।
- কডলিভ এসজি - Codliv SG - প্যাসিফিক ফার্মাসিটিক্যালস।
উপসংহার
আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা কড লিভার অয়েল সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন। কড মাছের তেল আবার বাজারে ওষুধ আকারেও কিনতে পাওয়া যায়।
অনেক উপকারী এই কড লিভার অয়েল নিয়মিত প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে ডাক্তারের পরামর্শে খাওয়া উচিত। এতে করে শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকে। সবার রোগ মুক্ত সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। ধন্যবাদ।
Thank you so much