দুবাই ভ্রমনঃ ঘুরে আসুন বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক শহর দুবাই থেকে
দুবাই ভ্রমনঃ ঘুরে আসুন বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক শহর দুবাই থেকে এই শিরোনামে আজকের আর্টিকেলটি লেখা। আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা জানতে পারবেন বিশ্বের অন্যতম ও মধ্যপ্রাচ্যের বিলাস বহুল শহর দুবাইয়ের সব অবিশ্বাস্য ও অবাক করা দর্শনীয় স্থান ও ভ্রমণ কাহিনী সম্পর্কে। যেগুলো শুনলে বা পড়লেই আপনার দুবাই যেতে ইচ্ছা করবে।
বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। ছোট্ট এই ছোট্ট দ্বীপ রাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানীর নাম দুবাই। বিশ্বের অন্যতম, মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ধনী, আধুনিক ও আভিজাত্য সম্পন্ন শহর এই দুবাই। দুবাই ভ্রমণে যেতে চান ? আজকের আর্টিকেলটিতে পেয়ে যাবেন দুবাইয়ের সকল তথ্য। কিভাবে যাবেন? কোথায় থাকবেন? কোথায় ঘুরবেন? ইত্যাদি ইত্যাদি।
পেজ সূচিপত্র
দুবাই ভ্রমনঃ দুবাই পরিচিত
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি আমিরাতের মধ্যে একটি হলো দুবাই। এটি পারস্য উপসাগরের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত।উনি শতকের গোড়ার দিকেও এই দুবাই মাছ ধরা একটি গ্রাম বা দ্বীপ নামে পরিচিত ছিল। এখানকার জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১২০০ জন, যাদের পেশা ছিল মৎস্য শিকার। দুবাইয়ের আয়তন মাত্র ১৫৮৮ বর্গমাইল। বর্তমান জনসংখ্যা ৩.৭ মিলিয়ন (২০২৩ সান)।
বিশ শতকের প্রথম দিকে দুবাইয়ের উত্থান শুরু হয়ে ধীরে ধীরে উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সময়ে বিশ্বের অর্থনীতি, বাণিজ্য, পর্যটন, বিমান চালনা, রিয়েল এস্টেট, তেল, গ্যাস ও আর্থিক পরিষেবাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্বের প্রথম সারির দিকে অবস্থান করছে এই দুবাই। এই খাতগুলো থেকেই দুবাইয়ের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় হয়।
দুবাইতে কি নেই? বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং 'বুর্জ খলিফা', বিশ্বের একমাত্র সাত তারকা হোটেল 'বুর্জ আল আরব, দুবাই ক্রিক, পাম জুমেরা, গ্র্যান্ড মসজিদ, দিব্বা, বিশ্বাস সবচেয়ে বড় গার্ডেন ও দুবাই মরুভূমি সহ বিশ্বে অবাক করা সব দর্শনীয় স্থান, স্থাপনা ও নিদর্শন এই সবই এখানে অবস্থিত।
সাগরকে শাসন করে গড় ওঠা অপূর্ব সুন্দর এই নির্মাণ কার্য।যেগুলো আপনার মনকে আকৃষ্ট করবেই। তাই বলা যায় আলোক ঝকমকে, সবচেয়ে আধুনিক, অভিজাত্যের ও স্বপ্নের শহর এই দুবাই, এতো গুলো সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য চলুন ঘুরে আসি দুবাই থেকে।
আটলান্টিস হোটেল - পাম জুমেইরাহ
আরো পড়ুনঃ ভিসা আবেদন কিভাবে করতে হয় ও কি কি কাগজপত্র লাগে
দুবাই মল
আরো পড়ুনঃ পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে ভিসা চেক
বুর্জ খলিফা বা দুবাই টাওয়ার
দুবাই ভ্রমনঃ এর সর্বপ্রথম আকর্ষণ হল বুর্জ খলিফা। বুর্জ খলিফা দুবাইয়ের গৌরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ও বেশি তলা বিশিষ্ট নির্মাণ স্থাপনা বা বিল্ডিং বা ভবন বা দালাল-কোঠা যা গ্রিনিজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড-এ নাম লিখেছে। বুর্জ খলিফা দুবাই টাওয়ার নামেও পরিচিত। ১৬৩ তলা বিশিষ্ট বুর্জ খলিফার উচ্চতা ৮২৮ মিটার বা ২৭১৭ ফুট। এই ভবনে রয়েছে এপার্টমেন্ট ১০৪৪ টি ও আবাসিক হোটেলের ১৬০ কক্ষ। এয়ারপোর্ট থেকে গাড়িতে ১৫-২০ মিনিটের পথ পাড়ি দিলেই বুর্জ খলিফায় যাওয়া যায়।
বুর্জ খলিফার নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০৪ সালে শেষ হয় ২০০৯ সালে। ১২ হাজার শ্রমিক টানা ৬ বছরের নিরলস পরিশ্রমের ফলে এর নির্মাণ শেষ হলে ২০১০ সালের ৪ জানুয়ারি উদ্বোধন করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এই ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ১. ৫ মার্কিন ডলার যা টাকার হিসেবে ১২ হাজার ৪৬৯ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা। এই দালান-কোঠার ভিতরে-বাহিরে ও চারিপাশে এত সুন্দর সাজানো গোছানো যা দেখলে আপনার আনন্দে মন ভরে উঠবে।
এই স্থাপনাটির ১২৪ তলায় রয়েছে পর্যটকদের জন্য অবজারভেশন ডেক বা প্রকৃতি দর্শনের দারুন সুব্যবস্থা। যেখান থেকে প্রায় ৯৪ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ৩৬০ ডিগ্রি এঙ্গেলে প্রকৃতি উপভোগ করা যায়। এই ভবনটির মধ্যে আরও রয়েছে বাসস্থান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, বিনোদন চর্চা, স্কাই লবি, সুইমিং পুল, সিনেমা-থিয়েটার, জিম, শপিং সেন্টার সহ অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা। এই সুউচ্চ ভবনের নিচ তলা থেকে উপর তলার সময়ের ব্যবধান ৬ থেকে ৭ মিনিট আর তাপমাত্রার ব্যবধান থাকে প্রায় ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উল্লেখ্য অবজারভেশন ডেকে প্রবেশের মূল্য ২৯০০ টাকা থেকে ৩৮০০ টাকা
বুর্জ খলিফা স্থাপনাটিতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম লিফট যাতে করে গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে টপ ফ্লোরে যেতে আপনার সময় লাগবে মাত্র ২ মিনিট। এই টপ ফ্লোরে রয়েছে বিশ্বের উচ্চতম রেস্টুরেন্ট। গোল্ড প্লেটেড কফি এখানে পাওয়া যায়। এটমোসফেয়ার রেস্টুরেন্ট যেখানে বসে চা খেতে খেতে আপনি উপভোগ করতে পারবেন আশেপাশের অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নিচে ঘুরে বেড়ানো ছোট ছোট পিঁপড়ার মত গাড়ি বহর ও মানুষ জন যা আপনার কাছে বিস্ময়কর মনে হবে।
দুবাই ফাউন্টেন
দুবাই ভ্রমনঃ এর অন্যতম আকর্ষণ হলো ডুবাই ফাউন্টেন যা ওয়াটার ড্যান্স বা পানি নাচ। দুবাই ফাউন্টেন নামে পরিচিত এই ওয়াটার ড্যান্স সূর্য ওঠার পর থেকে শুরু করে রাত্রি এগারোটা পর্যন্ত প্রতি ২৫ থেকে ৩০ মিনিট পরপর ৪-৫ মিনিট ধরে দেখা যায়। এই পানি নাচে পানি স্পিড এত বেশি থাকে যা ১৫০ মিটার বা ৪৯২ ফুট পর্যন্ত উপরে উঠে।
আরো পড়ুনঃ ঘরে বসে অনলাইনে ইনকাম করার ১০টি সহজ উপায়
বিভিন্ন মিউজিক ও আলোর ঝলকানিতে এর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয়। এই দুবাই ফাউন্টেন দেখার জন্য ৫০০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে ভিতরে পানির কাছাকাছি প্ল্যাটফর্মে অবস্থান করে দেখতে পারেন অথবা যেকোন রেস্টুরেন্টে বসে এই পানির নাচ উপভোগ করতে পারেন। যা দেখলে আপনার ভ্রমণের ক্লান্তি দূর হবে মন-প্রাণ আনন্দে ভরে উঠবে।
দুবাই মরুভূমি
দুবাই ভ্রমনঃ এর অন্যতম আকর্ষণীয় সাইট সিয়িং হলো দুবাই মরুভূমি। দুবাই শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে আরব মরুভূমির ২২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত এই দুবাই মরুভূমি। পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় একটি জায়গা। দুবাই মরুভূমিতে ঘোরাঘুরি করার জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ পাওয়া যায়।এই প্যাকেজগুলো ৯ হাজার টাক থেকে ৯০ হাজার টাকার মধ্যে কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ টাফনিলের কাজ খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা
এই প্যাকেজের মধ্যে পাবেন কোমল পানীয়, লাঞ্চ বা ডিনার (সময় বুঝে), উটের পিঠে চড়ে মরুভূমিতে ঘোরাঘুরি। রাত্রে থাকার সু-ব্যবস্থা। আপনার সুবিধা অনুসারে এই প্যাকেজের সেবা বাড়াতে কমাতে পারবেন। দুবাই মরুভূমিতে পর্যটকরা গাড়ি ভাড়া করে মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ায় এটাকেই বলা হয় ডেজার্ট সাফারি। দুবাই যাবেন মরুভূমিতে মরুভূমির জাহাজ নামে খ্যাত উটের পিঠে চড়ে ঘুরবেন। আহ্ কি মজা!
কোরআন পার্ক
ভ্রমণে সৌন্দর্যা প্রিয় মানুষদের জন্য আরো একটি আনন্দের জায়গা হল দুবাইয়ের কোরআন পার্ক। এই পার্কটি মূলত বিশ্বের সকল ধর্মাবলম্বী ও সংস্কৃতিমনা মানুষদের জন্য কোরআনের অলৌকিকতা ও সৌন্দর্য তুলে ধরার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। এই পার্কটিতে গেলে আপনার মন স্বগৌরবে ভরে যাবে। সৃষ্টি জগত সম্পর্কে আরও ভাবতে ইচ্ছে করবে।
আরো পড়ুনঃ মহররমের তাৎপর্য ও আশুরার মাহাত্এম্য এবং ১০ মোহররমের ২০ ঘটনা
দুবাইয়ের আল খাওনিজ এলাকায় ষাট হেক্টর জমি বা ছয় হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এই পার্কটি গড়ে তোলা হয়েছে। কোরআনে বর্ণিত যে সকল গাছ গাছালি আছে তার সবই অনুকরণ করা হয়েছে এই পার্কটিতে। এই পার্কটির নির্মাণ শৈলীতে কোরআনে বর্ণিত বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনাগুলো চিত্রাকর্ষক ভাবে চিত্রায়ন করা হয়েছে।
দুবাই মিরাকেল গার্ডেন
দুবাই ভ্রমণের আরেকটি আনন্দের জায়গা হল দুবাই মিরাকেল গার্ডেন। যেখানে শুধু বালু আর বালু! গানের ভাষায় বলতে হয় 'আমি পাথরে ফুটাবো ফুল শুধু ভালোবাসা দিয়ে' আর কবির ভাষায় বাক্যটি হল 'ভালবাসা আর যত্ন দিয়ে মরুভূমিতেও ফুল ফোটানো যায়'। কবির এই বিখ্যাত উক্তিটি আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে দুবাইতে। মরুভূমির তপ্ত বালুকারাশিতে যেখানে গাছ খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর।
এই তপ্ত বালুর মধ্যেই তৈরি করা হয়েছে ৭২ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ১৫০ টিরও বেশি প্রজাতির ছোট-বড় ফুলের গাছ নিয়ে দৃষ্টি নন্দিত ফুলের বাগান। এই ফুলের বাগান টির নাম দেওয়া হয়েছে দুবাই মিরাকেল গার্ডেন। এই ফুলের বাগানে ফুলের গন্ধে ও সৌন্দর্যে মন ভরিয়ে দেয়। অক্টোবর মাসে ফুল ফোটা সাপেক্ষে এই বাগানের গেট খোলা হয়। যার প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা মাত্র। বিনোদন ও রিফ্রেশমেন্ট এর সব ব্যবস্থাই রয়েছে এই পার্কে।
দুবাই মেরিনা
দুবাই ভ্রমণে এসে পর্যটকদের আরেকটি আকর্ষণীয় জায়গা হল দুবাই মেলিনা। এই দুবাই মেরিনা হল দুবাইয়ের সবচেয়ে দামি আবাসিক এলাকা। এই দুবাই মেরিনাতেই দুবাইয়ের সবচেয়ে নামি-দামি, ধনী ও বিত্তবান শ্রেণীর মানুষের বসবাস। দুবাই মেরিনার সুউচ্চ বিল্ডিং গুলোর পিছনে সূর্যাস্তের সিনারি দেখতে অপূর্ব সুন্দর লাগে।
এই দৃশ্য যেকোনো পর্যটকের নজর কাড়ে। এই দুবাই মেরিনা গিয়ে থাকার তেমন একটা প্রয়োজন হয় না আবার হোটেলগুলো বেশ ব্যয়বহুল। ওখানে গিয়ে পড়ন্ত বিকালে সি-বীচে ঘোরাফেরা করে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখে আবার রাতেই আবাসিক হোটেল ফিরে আসতে পারবেন।
গ্র্যান্ড মসজিদ
দুবাই ভ্রমণের আরও একটি আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় জায়গার মধ্যে স্থান পেয়েছে দুবাইয়ের গ্র্যান্ড মসজিদ। এই গ্র্যান্ড মসজিদটি ১৯০০ সালে নির্মিত হয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে। এই মসজিদের ২৩০ ফুট উঁচু মিনারটি দুবাইয়ের সর্বোচ্চ মিনার ও বাতিঘরের প্রতিনিধিত্ব করে। মসজিদটিতে ৪৫ টি ছোট ও ৯ টি বৃহৎ গম্বুজসহ সুউচচ মিনারটি মসজিদের ছাঁদ ঘিরে রেখেছে।
আরো পড়ুনঃ কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত
মসজিদের দেয়াল, জানালা ও দরজার সব অপূর্ব কারুকার্য সকল দর্শকদের আকৃষ্ট করে। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী এই মসজিদটি দেখতে আসেন এবং আকৃষ্ট হন। এই মসজিদে ঢুকতে রক্ষণশীল পোশাক পরিধান করতে হয়। অমুসলিমদের এই মসজিদের মিনার অবদি প্রবেশের অনুমতি রয়েছে। সর্বোপরি এই গ্র্যান্ড মসজিদটি দুবাইয়ের বড় মক্তব ও ধর্মীয় সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্রবিন্দু যা ইসলাম ধর্ম অন্যতম নিদর্শন।
মিউজিয়াম অফ দ্য ফিউচার
ভ্রমণ প্রিয়াসুদের আরো একটি সুন্দরতম দর্শনীয় স্থান হলো দুবাইয়ের 'মিউজিয়াম অফ দ্য ফিউচার' ভবনটি। পাঁচটি ভাগে বিভক্ত এই ভবনটি বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরতম স্থাপনা হিসেবে কল্পনা করা হয়। এই ভবনটিতে প্রদর্শিত হয় বিশ্বের ভবিষ্যৎবাদি ধারণা, পণ্য ও সেবা। মিউজিয়াম অফ দি ফিউচার দুবাই সরকার প্রণীত প্রযুক্তির ব্যবহার ও দূরদর্শিতাকে প্রতিনিধিত্ব করে যা দুবাইয়ের মানুষের জীবনযাত্রা মান বদলে দিয়েছে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও রোবোটিক ধারণাকে প্রাধান্য দিয়ে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে উদ্বোধন হওয়া জাদুঘরটি সকলের জন্য উন্মুক্ত। এই জাদুঘরটি প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকলে চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন এই যাদুঘরটি। মিউজিয়াম অফ দ্যা ফিউচার এর প্রবেশ মূল্য জন প্রতি মাত্র ৩৮০০ টাকা।
দুবাই ফ্রেম
বিখ্যাত স্থাপত্য শৈলীর একটি অনন্য উদাহরণ হলো দুবাই প্রেম। বিখ্যাত দুবাই ফ্রেমটি দুবাইয়ের জাবিল পার্কে অবস্থিত। এই দুবাই ফ্রেমের বিশেষত্ব হলো এর এক সাইডে দেখতে পাবেন দুবাইয়ের পুরাতন অংশকে যা দুবাইয়ের পুরাতন অতীতকে প্রতিনিধিত্ব করে। আর অন্য সাইডে দেখতে পাবেন আধুনিক দুবাইয়ের প্রতিনিধিত্বকারী বড় বড় নির্মাণ স্থাপনা গুলোকে।দুবাইয়ের অ্যামিউজমেন্ট পার্ক
দুবাই ভ্রমন পিয়াসূদের জন্য আরেকটি আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্থান হল দুবাইয়ের অ্যামিউজমেন্ট পার্ক। দুবাইয়ের সবচেয়ে বিখ্যাত ও রোমাঞ্চকর পার্ক হলো এই এমাউন্সমেন্ট পার্ক। এই পার্ক গুলোতে রয়েছে বিখ্যাত বিখ্যাত রাইডস যা ছেলে-বুড়ো, নারী-বৃদ্ধা সবাইকে আকৃষ্ট করে ও এনে দেয় বাড়তি আনন্দ।
লা মের
দুবাই ভ্রমন এর উল্লেখযোগ্য আনন্দময় স্থান হল না মের।লা মের দুবাইয়ের সবচেয়ে বিখ্যাত সমুদ্র সৈকত। লা মের সমুদ্র সৈকতে রয়েছে বিশ্ব বিখ্যাত রক্সি সিনেমা হল, অসংখ্য ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, দোকানপাট, একটি ওয়াটার পার্ক ও একটি টেম্পোলিং পার্ক।
দুবাইয়ের জনসাধারণ ও বাহিরের পর্যটকদের জন্য সমান জনপ্রিয় লা মের সি বীচ। সন্ধ্যাবেলা সবাই এই সমুদ্র সৈকতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে যায়। এর পাশেই রয়েছে একটি স্কেটবোর্ড পার্ক ও লাগুনা ওয়াটার পার্ক যা টুরিস্টদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
বুর্জ আল আরব
দুবাইয়ের সবচেয়ে নামি-দামি, বিলাসবহুল ও বিশ্বের একমাত্র সাত তারকা হোটেল 'বুর্জ আল আরব' এই দুবাই শহরে অবস্থিত। এই হোটেলে এক রাত থাকতে গেলে আপনাকে গুনতে হবে মাত্র ১ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা। জাহাজের পাল আকৃতির এই হোটেলটি কৃত্রিম দ্বীপের ওপর অবস্থিত।
এই হোটেলটিতে সাধারণত নন-গেস্টরা ঢোকার অনুমোদন পায় না। তার জন্য আগে থেকেই রিজার্ভেশন করা থাকলে সর্বনিম্ন মূল্যের এক কাপ চা খেতে পারবেন হোটেলের লবিতে বসে ও হোটেলে ঘুরে দেখতে পারবেন। বুর্জ আল আরাব পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি স্থাপনা।
দুবাই গোল্ড স্যুক
দুবাই পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও ঐতিহ্যবাহী এই দুবাই গোল্ড স্যুক মার্কেট যা সোনার গহনার দোকান বা মার্কেট নামে পরিচিত। এই মার্কেটে ৩৮০ টিরও বেশি খুচরা স্বর্ণ ব্যবসায়ী দোকান রয়েছে। দুবাই গোল্ড স্যুকে মূলত স্বর্ণ, ডায়মন্ড, প্লাটিনাম ও রুপার গহনার পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ কানের দুলের রকমারি ডিজাইন ছবি ২০২৪
দুবাই গোল্ড স্যুক এর বিশেষত্ব হল এখানে স্বর্ণের দাম অত্যন্ত কম। টুরিস্টদের জন্য ৫% ভ্যাট মওকুপ রয়েছে। ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের দাম মাত্র ৬ হাজার টাকা। এই গোল্ড স্যুক মার্কেট থেকে স্বর্ণ ক্রয় লাভজনক বলে টুরিস্টরা এখান থেকে স্বর্ণ ক্রয় করেন।
দুবাই কিভাবে যাবেন
দুবাই যাওয়ার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে পাসপোর্ট, ভিসা ও এয়ার ফ্লাইটের টিকিট। এখন আমরা আলোচনা করবো এয়ার টিকেট নিয়ে। ঢাকা থেকে বিমানে দুবাই যেতে আপনাকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছার জন্য একটি বিমানের টিকিট নিতে হবে। এজন্য আপনাকে অনলাইনে টিকিট সার্চ করতে হবে।
পিক সিজন ও অপ পিক সিজন বা সময়ের উপর নির্ভর করে বিমানের টিকিটের দাম কম বেশি হতে পারে। এই জন্য ভ্রমণের তারিখে হতে কমপক্ষে দু-এক মাস আগে টিকিট কাটলে খরচ কম হতে পারে। মাঝেমধ্যেই ঢাকা টু দুবাই রুটে ফ্লাইট এর টিকিটের অফার করে থাকে।
যদি অফারের টিকিট পেয়ে যান তাহলে আপনার টাকা আরো কম লাগবে। এই রুটে অফার করে এমন কিছু এয়ারলাইন্স এর মধ্যে রয়েছে এমিরেটস এয়ার লাইন্স, তুর্কি এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারওয়েজ ইত্যাদি। টিকিট পাইলেন তো টেনশন মুক্ত হলেন। দুবাই ভ্রমণের আনন্দ বেড়ে গেল।
দুবাই ভ্রমনের ভিসা নিন
দুবাই ভ্রমণের জন্য একটি বৈধ ভিসা প্রয়োজন। ভিসা প্রক্রিয়াকরণের জন্য নিজে প্রক্রিয়াকরণ সেন্টারে গিয়ে ভালো মতো নির্ভুল ভাবে সকল তথ্যাদি দিয়ে ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ জমা দিন। এই প্রকৃয়াটি পুরোপুরি কমপ্লিট হয়ে
ভিসা পেতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। ভিসা হাতে পেয়ে গেলে আপনার ভ্রমণের আনন্দ আরো একটু বেড়ে যাবে। ভিসা হাতে পেয়ে গেলে দুবাই ভিসার সকল রিকোয়ারমেন্টসগুলো ভালো করে চেক করে নিন।
দুবাই গিয়ে কোথায় থাকবেন
দুবাই ভ্রমণে গিয়ে কোথায় থাকবেন এটা নির্ভর করে আপনার রুচি ও বাজেটের উপর। যদি রুচি উন্নত হয় আর বাজেট ভালো থাকে তাহলে অবশ্যই ভালো মানের একটা হোটেলে বুকিং দিবেন। যেখানে থাকলে আপনি স্বাচ্ছন্দ বোধ করবেন, নিরাপদ ও নিরাপত্তায় থাকতে পারবেন ।
হোটেল বুকিং এর ক্ষেত্রেও পিক সিজন জেন ও অফ পিক সিজনের উপর নির্ভর করে হোটেল রেন্ট কম বেশি হতে পারে। আবার দুবাইতে হোটেলের অবস্থান, সুযোগ সুবিধার উপর নির্ভর করেও হোটেলের রেন্ট কম বেশি হতে পারে।
দুবাইতে অবস্থান করার জন্য ও ভালো হোটেল পাওয়ার জন্য আগে থেকেই অনলাইনে বুকিং এর চেষ্টা করুন। সাশ্রয়ী রেন্টের কিছু হোটেলের নাম নিম্নে প্রদান করা হলো।
- HOLIDAY INN EXPRESS DUBAI AIRPORT
- TRYP BY WYNDHAM DUBAI.
- FIVE JUMERIAH VILLAGE.
- WHNDHAM DUBAI MARINA
- PRIMIER INN DUBAI INTERNATIONAL AIRPORT
দুবাই যেতে কত খরচ হয়
দুবাই ভ্রমণে যাওয়ার আগের সবাই চিন্তা করে কত বাজেট লাগবে বা কত খরচ হবে। ঢাকা থেকে দুবাই ভ্রমণে যেতে খরচের বিষয়টা নির্ভর করে ভ্রমনের তারিখ, এয়ার লাইন্স, দুবাই গিয়ে আপনি কি মানের হোটেলে থাকবেন, কি মানের খাবার খাবেন, সাইড সিয়িং বা দর্শনীয় স্থানে প্রবেশের ফি কত হবে এই ধরনের বিষয়গুলোর উপরে। ভ্রমণকারীর বোঝার সুবিধার জন্য নিম্নে খরচের আনুমানিক একটা ধারণা প্রদান করা হলো।
ফ্লাইট ভাড়া
ঢাকা থেকে দুবাই গামী ফ্লাইটের ভাড়া কম বেশি হতে পারে। আপনি কোন সিজনে যাবেন ও কত আগে টিকিট বুক করেছেন তার ওপর নির্ভর করে টিকিটের দাম পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারণত ঢাকা থেকে দুবাই রাউন্ড টিপ রাউন্ড-ট্রিপ এয়ার টিকিটের মূল্য ৬৫ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়। খরচ কমলে ভ্রমণের আনন্দ বাড়ে।
হোটেল ভাড়া
দুবাই ভ্রমণে গিয়ে হোটেল ভাড়া কত খরচ করবেন তা অনেকটাই নির্ভর করে আপনার ইচ্ছা, রুচি ও বাজেটের উপরে। দুবাইতে মাঝারি মান থেকে শুরু করে বিলাসবহুল হোটেলের রুম পাবেন।
- মোটামুটি মানের হোটেলগুলোতে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা প্রতি রাতে খরচ হবে।
- মধ্যম মানের হোটেলগুলোতে ৬ থেকে ১৪ হাজার টাকা প্রতি রাতে খরচ হবে।
- বিলাসবহুল হোটেলগুলোতে প্রতি রাতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হবে প্রতি রাতে।
খাদ্য ও পানীয়
দুবাই ভ্রমণে গিয়ে খাদ্য ও পানীয় বাবদ আপনি কেমন খরচ করবেন তা নির্ভর করে আপনারই রুচির উপরে। এখানে মোটামুটি মানের হোটেল থেকে শুরু করে আভিজাত্য সম্পন্ন খাবার হোটেল রয়েছে। হোটেলের মানের উপর নির্ভর করে খাবারেরও কমবেশি হয়ে থাকে। যেমন-
- স্ট্রিট ফুড বা স্থানীয় ক্যাফেতে জনপ্রতি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা খাবার খরচ হতে পারে।
- মধ্যম মানের রেস্তোরাঁয় বা হোটেলগলোতে জন প্রতি ১৭০০ থেকে ২৫০০ টাকা খাওয়া খরচ হতে পারে।
- বিলাসবহুল হোটেলগুলোতে জনপ্রতি ৫০০০ টাকার বেশি খাবার খরচ হতে পারে।
পরিবহন খরচ
দুবাই ভ্রমণে খরচের তালিকায় এবার আলোচনা করবো পরিবহন খরচ সম্পর্কে অর্থাৎ দুবাইতে পৌঁছাক করে হোটেল থেকে আপনি যে যে জায়গা গুলো দেখতে যাবেন বা দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনে যাবেন সেই জায়গার দূরত্বের বিবেচনায় ও পরিবহনের আধুনিকতার উপর নির্ভর করে এর ভাড়া বা খরচ কত হবে।
যদি আপনি ট্যাক্সি নিয়ে ঘোরাফেরা করেন তাহলে খরন বেশি হবে আর যদি আপনি বাস, ট্রাম ও মেট্রোর মতো পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলাচল করেন তাহলে একজনের সিঙ্গেল যাত্রায় ৮০ টাকা ১৫০ টাকা খরচ হতে পারে।
সকল খরচ বিবেচনায় ঢাকা থেকে দুবাই ভ্রমণ করে ঘুরে আসতে সাত দিনের ট্যুরে আপনার খরচ হতে পারে ১,৬০,০০০ টাকা থেকে ২,৫০,০০০ টাকা। আপনার পছন্দ, হোটেল চয়েস, ইচ্ছা-অনিচ্ছার, খাওয়া-দাওয়া ও ঘোরাফেরার উপর নির্ভর করে খরচ কম বেশি হতে পারে।
শেষ কথা
দুবাই ভ্রমণঃ ঘুরে আসুন বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক শহর দুবাই থেকে এই সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা ডুবাই ভ্রমন টিপস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন ও উপকৃত হয়েছেন। এই দুবাই ট্যুরে কত খরচ হতে পারে, কোথায় থাকবেন, কি করবেন সবকিছু আলোচনা করেছি আর্টিকেলটিতে।
আপনার এই অজানা তথ্যগুলো জানার জন্য আর্টিকেলটি ভ্রমন পিয়াসূ পর্যটকদের শেয়ার করতে ভুলবেন না। চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথেই থাকুন আরো আপডেট তথ্য পাওয়ার জন্য। সামর্থ্য থাকলে সবাই দেশ ভ্রমন করা উচিত। সবাইকে ধন্যবাদ।
Nice post, tank u sir