গর্ভে বাচ্চার সুস্থতা ও ত্রুটি কিভাবে বুঝবেন

গর্ভে বাচ্চার সুস্থতা ও ত্রুটি কিভাবে বুঝবেন এ সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলটি লেখা। আজকের আর্টিকেলটি পড়লে জানতে পারবেন কি কি লক্ষণ প্রকাশ পেলে বুঝবেন গর্ভে বাচ্চা সুস্থ ও স্বাভাবিক আছে বা  ত্রুটি আছে। গর্ভকালীন সময় মেয়েদের জীবনের সুন্দরতম ও আনন্দময় লম্বা জার্নি।

গর্ভে বাচ্চার সুস্থতা ও ত্রুটি কিভাবে বুঝবেন

মেয়েদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও পরিপূর্ণ অধ্যায় হল মা হওয়া। মা হতে গিয়ে গর্ভে সন্তান ধারণ,  সুস্থ, স্বাভাবিক ও ত্রুটিমুক্ত বাচ্চা প্রসব হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ত্রুটিমুক্ত সুস্থ ও স্বাভাবিক বাচ্চা সবারই কাম্য। সেজন্য গর্ভকালীন সময়ে মাদের বিশেষ যত্নের পাশাপাশি গর্ভের বাচ্চারও যত্ন নিতে হয়।

পেজ সুচিপত্র

কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে সন্তান ধারণ

গর্ভে বাচ্চার সুস্থতা ও ত্রুটি কিভাবে বুঝবেন এই শিরোনামটি আলোচনার পূর্বে আমাদের জানা দরকার একজন মেয়ে মা হওয়ার আগে, গর্ভে সন্তান ধারণের জন্য কতটুকু ফিট বা উপযুক্ত, সেই বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়া। বলা যেতে পারে যে সকল সমস্যা বা ত্রুটি থাকলে একজন মেয়ে মা হওয়ার জন্য নিরাপদ নয় বা গর্ভে বাচ্চার ত্রুটি হতে পারে।

সেজন্য  কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ঔ বিষয়গুলো নিশ্চিত হয়ে  চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার পরে বাচ্চা নিলে, মা ও গর্ভের বাচ্চা উভয়ই ত্রুটিমুক্ত ও সুস্থ থাকে। নিম্নোক্ত পরীক্ষা গুলোর মাধ্যমে গর্ভবতী মা ও গর্বের সন্তানের সুস্থতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

ভিটামিন লেভেল পরীক্ষা ঃ স্বাস্থ্য সচেতন মেয়ের জন্য সন্তান ধারণের পূর্বে বিশেষ করে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর লেভেল পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর লেভেল কম হলে গর্ভবতী মা ও গর্ভের সন্তান উভয়ের ত্রুটি দেখা দিতে পারে।

আরো পড়ুনঃ বাচ্চার ওজন কত হলে সিজার করা যায় ও নরমাল ডেলিভারির গুরুত্ব

সুগার লেভেল পরীক্ষা ঃ সন্তান ধারণের পূর্বে সুগার বা গ্লুকোজ লেভেল পরীক্ষা করে নেওয়া উচিনা। সুগার লেভেলবেশি হলে গর্ভবতী মা ও গর্ভের সন্তান উভয়েরই স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে।

সি বি সি পরীক্ষা ঃ গর্ভধারণের পূর্বে গর্ভবতী মায়ের সিবিসি পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। এই পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তের সকল প্রকার কণিকার গঠন, ক্রিয়া কর্ম ও রক্তের পরিমাণ সম্পর্কে জানা যায়। এছাড়াও ফলিক এসিডের ঘাটতি সম্পর্কেও জানতে পারা যায় এই পরীক্ষার মাধ্যমে। এই সবগুলো ঠিকঠাক মতো না থাকলে গর্ভের বাচ্চা ও গর্ভবতী মায়ের সমস্যা হতে পারে।

জেনেটিক স্ক্রিনিং পরীক্ষা ঃগর্ভধারণের পূর্বে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই জেনেটিক জিনগত পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। গর্ভধারণ করবে এমন মেয়ের বয়স যদি বেশি হয় অর্থাৎ ৩৬-৩৭ বছরের বেশি হয় তাহলেও জেনেটিক পরীক্ষা করা উচিত। এই পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় তাদের জেনেটিক কোন সমস্যা আছে কিনা স্বামী স্ত্রীর জেনেটিক সমস্যা থাকলে সেই সমস্যাটিও বাচ্চার দেহ রুপান্তরিত হতে পারে।

উপরে উল্লেখিত গুলো ছাড়াও বাচ্চা ধরনের পূর্বে একজন ভালো গাইনোকোলজিস্টের কাছে স্বামী স্ত্রী উভয়ে গিয়ে বাচ্চা ধারন সম্পর্কে সুপরামর্শ নেওয়া উচিত। এতে করে বাচ্চা ও গর্ভবতী মা এর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হয়।

গর্ভধারণের সাধারণ লক্ষণ

গর্ভে বাচ্চার সুস্থতা ও ত্রুটি কিভাবে বুঝবেন এ সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো গর্ভধারণ করলে একজন মহিলার গর্ভধারণের প্রথম দিন থেকে প্রসবের দিন পর্যন্ত যে সমস্ত লক্ষণ গুলি প্রকাশ পায়। লক্ষণ গুলি নিম্নরূপ।

আরো পড়ুনঃ সিজার কখন করাতে হয় ও নরমাল ডেলিভারির গুরুত্ব

  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
  • ঘন ঘন প্রসাব হওয়া।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
  • হাত ও পায়ের আঙ্গুল অবোশ অবোশ ভাব ও যন্ত্রণা হয়া।
  • মেজাজের চরম পরিবর্তন হওয়া।
  • মুখে গাঁড় সোপ সোপ দাগ পড়া।
  • স্তন নরম হয়ে যাওয়া।
  • ওজন কম বা বেশি হওয়া।
  • কিছু কিছু খাবার ভালো লাগা না লাগা।
  • পিঠের পিছন দিকে ব্যথা হওয়া।
  • স্তনবৃন্ত কালো হওয়া।
  • স্তন, পেট,  নিতম্ব ও উরুতে প্রসারিত দাগ পড়ে যাওয়া।
  • আঙ্গুল, মুখ ও পায়ের গোড়ালি ফুলে যেতে পারে
  • ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
  • নাভি বিস্তৃত হয়ে যেতে পারে।
  • শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হতে পারে।
  • রক্তক্ষরণ বা সাদা স্রাব হতে পারে।
  • বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে।

উপরোক্ত লক্ষণগুলো যদি স্বাভাবিক মাত্রায় বা সহ্য ক্ষমতা মধ্যে থাকে তাহলে ভালো। সহ্য ক্ষমতার বাহিরে গেলে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

আল্ট্রাসনোগ্রাম স্ক্যান ও বাচ্চার ত্রুটি নির্ণয়

গর্ভে বাচ্চার সুস্থতা ও ত্রুটি কিভাবে বুঝবেন এই শিরোনাম আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো বাচ্চা ধারণের পরে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও আলট্রাসনোগ্রাম এর মাধ্যমে বাচ্চা সুস্থতা বা ত্রুটি সম্পর্কে কি কি জানা যায় সে সম্পর্কে। গর্ভাবস্থার সেকেন্ড টাইমস্টার বা ১৩ থেকে ২৭ সপ্তাহ পরে বিশেষ ধরনের এই আলট্রাসনোগ্রাম স্ক্যান এর মাধ্যমে গর্ভে বাচ্চার অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়।

আল্ট্রাসনোগ্রাম স্ক্যান ও বাচ্চার ত্রুটি নির্ণয়

এই বিশেষ ধরনের আল্ট্রাসনোগ্রাম স্ক্যানকে অ্যানোমেলি স্ক্যান বা ২০ উইক স্ক্যান বা মিড প্রেগন্যান্সি স্ক্যান বা অ্যানাটমি স্ক্যান বলা হয়। গর্ভধারণের ১৮ থেকে ২৪ সপ্তাহের মধ্যে এই স্ক্যান করা উচিত। এই স্ক্যান এর মাধ্যমে মাতৃগর্ভে বাচ্চার কোন ত্রুটি আছে কিনা তা খুঁজে বের করতে সহায়তা করে, সেইসঙ্গে বাচ্চার শারীরিক বৃদ্ধি ঠিক মাপে হচ্ছে কিনা তাও দেখা যায়।

এই বিশেষ আলট্রাসনোগ্রাম স্ক্যানের মাধ্যমে গর্ভে বাচ্চার যে সুস্থতা বা ত্রুটিগুলো জানা যায়। সে গুলো নিম্নরূপ।

  • এই বিশেষ ধরনের স্ক্যানের মাধ্যমে জরায়ুতে ভ্রূণের অবস্থান ও সংখ্যা, প্ল্যাসেনটা বা গর্ভফুলের অবস্থান, গর্ভে পানির পরিমাণ, বাচ্চার পাল্স বা হার্ট রেট, গর্ভাবস্থার বয়স ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। সম্ভাব্য ডেলিভারি তারিখ বা ইডিডি নির্ধারণ করা হয় এই স্ক্যানের মাধ্যমে।
  • এই স্ক্যানার মাধ্যমে বাচ্চার কিডনি দুটি, পাকস্থলী ও মূত্রথলি ঠিকভাবে গঠন হয়েছে কি না, কিডনি দুইটি জায়গা মত আছে কি না এবং কোনো ত্রুটি আছে কি না তাও দেখা যায়।
  • এই আলট্রাগ্রামের মাধ্যমে জানা যায় মাতৃগর্ভে বাচ্চার নিউরাল টিউব বা স্পাইনাল কর্ডের গঠন, মাথার গঠন, হাড়ের গঠন, চোখের গঠন ও মস্তিষ্কের গঠন ঠিকমতো হয়েছে কি না। উক্ত অঙ্গগুলো গঠনে কোন ত্রুটি থাকলে সেটিও এই বিশেষ স্ক্যানের মাধ্যমে জানা যায়।
  • এই বিশেষ ধরনের আলট্রাসনোগ্রাম স্ক্যানের মাধ্যমে গর্ভে বাচ্চার হৃদপিণ্ডের গঠন, ভাল্বের গঠন, হৃদপিন্ডের রক্ত চলাচল ঠিক আছে কিনা সবকিছু জানা যায়।
  • এই আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে আরো জানা যায় গর্ভে বাচ্চার পেটের মাংস পেশী ও চামড়া আবরণ, হাত পায়ের গঠন, হাড়ের বিকৃতি, নাকের হাড্ডির গঠন ঠিক আছে কি না, বাচ্চা ঠোঁট কাটা না ঠোঁট ভালো এসব বিষয়গুলো এখানে জানা যায়।

গর্ভবতী মায়ের যত্ন

গর্ভে বাচ্চার সুস্থতা ও ত্রুটি কিভাবে বুঝবেন এ সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো গর্ভবতী মায়ের যত্ন সম্পর্কে। বলা যায় গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে গর্ভে বাচ্চার স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তাই গর্ভবতী মায়ের যথেষ্ট যত্ন নেওয়া উচিত এই সময়। গর্ভবতী মা ফিট তো বাচ্চা হিট।

গর্ভকালীন সময়ের প্রথম দিন থেকে ডেলিভারির দিন পর্যন্ত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এর প্রথম তিন মাস কে বলা হয় ফার্স্ট টাইম স্টার, দ্বিতীয় তিন বলা হয় সেকেন্ড টাইম স্টার ও সেকেন্ড বা দ্বিতীয় তিন মাসকে বলা হয় সেকেন্ড টাইম স্টার ও তৃতীয় তিন মাসকে বলা হয় থার্ড টাইম স্টার। এই সময় যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে আপনার ডাক্তার সাথে পরামর্শ করুন।

আরো পড়ুনঃ অর্থসহ মেয়ে বাচ্চাদের ইসলামিক নামের তালিকা ও ইংরেজী বানান

এই তিন ভাগে বিভক্ত প্রতিটি সময় গর্ভবতী মা ও বাচ্চার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে দ্বিতীয় তিন মাসে বাচ্চার সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠন হওয়া শুরু হয়। এই সময় বাচ্চার মা যত সুস্থ থাকে, খাওয়া-দাওয়া ভালো থাকে স্বাস্থ্যগতভাবে নিরাপদ থাকে বাচ্চা গঠন তত স্ট্রং হয়। গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত এলার্জি বজায় রাখার জন্য আমিষ, ভিটামিন, দেশীয় ফল ও খনিজ জাতীয় খাদ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

প্রেগনেন্সির পুরো সময়টা জুড়েই বাচ্চার গঠন যেন ভালো হয় সেজন্য গর্ভবতী মাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন,আমিষ, খনিজ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। ডাক্তারি পরামর্শক্রমে যদি প্রয়োজন হয় ক্যালসিয়াম ও আয়রন সাপ্লিমেন্ট হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে এই ক্যালসিয়াম বাচ্চার হাড়ের গঠন মজবুত করে আর আয়রন রক্ত তৈরি করতে সহায়তা করে।

গর্ভে বাচ্চার স্বাভাবিক বৃদ্ধি

গর্ভে বাচ্চার সুস্থতা ও ত্রুটি কিভাবে বুঝবেন এ বিষয়ে আলোচনা এখন আমরা আলোচনা করবো গর্ভে বাচ্চার স্বাভাবিক বৃদ্ধি সম্পর্কে। প্রথম তিন মাসে বাচ্চার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আকার নিতে শুরু করে। এই শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলো হলো।

আরো পড়ুনঃ অর্থসহ ছেলে শিশুর ইসলামিক নামের তালিকা

  •  মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের আকার শুরু হয়।
  • কানের ভেতরের অংশে র আকার শুরু হয়।
  • কার্ডিয়াক টিস্যুর আকার শুরু হয়।
  • যৌনাঙ্গের আকার শুরু হয়।
  • হাতে-পায়ের আঙ্গুল, কার্টিলেজ ও নখ।
  • যকৃত, অগ্নাশয়, কিডনির আকার শুরু হয়।
  • মুখ, চোখ, নাকের পেশি ও চোখের পাতা।
দ্বিতীয় তিন মাসে গর্ভের বাচ্চার অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলো আরো সুগঠিত ভাবে বিকশিত হতে থাকে। এই তিন মাসের সময়কালে প্রথম তিন মাসের যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলো আকার ধারণ করেছিল সেই অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো আরো বিকশিত হয়। সেগুলো নিম্নরূপ।

  • হাড় শক্ত হতে শুরু করে।
  • ত্বক শক্ত হতে শুরু করে।
  • পায়ের গোড়ালি গঠিত হয়।
  • স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ শুরু হয়।
  • শ্রবণ হতে শুরু হয়।
  • চোখের পাতা খুলতে ও বন্ধ করতে শুরু করে।
  • লাথি জোরালো হতে পারে।
  • হজম কাজ শুরু হয়।
  • ফুসফুস সম্পূর্ণরূপে বিকশিত হয়।

তৃতীয় তিন মাসে বাচ্চা পুরোপুরি প্রস্তুত হয় পৃথিবীর আলো দেখার জন্য অর্থাৎ আগের ৬ মাসে যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলো গঠিত হয়েছে সেগুলো পুরোপুরি বিকশিত হয় তৃতীয় তিন মাসে। তৃতীয় তিন মাসে গর্ভের সুস্থ ও ত্রুটিমুক্ত বাচ্চার যে জিনিসগুলো লক্ষ্যনীয় সেগুলো নিম্নরূপ।

  • চোখ আলোর পরিবর্তন বুঝতে পারে।
  • মাথায় কিছু চুল গজাতে শুরু করে।
  • ফুসফুস, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের পুরোপুরি বিকাশ ঘটে।
  • একটু জোরে লাথি মারতে পারে।
  • কোন কিছু ধরতে ও শরীর প্রসারিত করতে পারে
  • বিভিন্ন অঙ্গ পুষ্ট হতে শুরু করে।
  • বিভিন্ন অঙ্গ সঠিক আকৃতি পেতে শুরু করে।
  • হাড় শক্ত হতে শুরু করে।
  • সংবহনতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে গঠিত হয়।
  • পেশীগুলো পরিপূর্ণ ভাবে গঠিত হয়।
  • অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে চর্বিযুক্ত হতে থাকে।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ  ভূলের বৃদ্ধি বিভিন্ন কারণে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত বা কম-বেশি হতে পারে। যখন আপনি প্রসব করবেন, তখন গর্ভে পুর্ন্য মেয়াদের, পরিপূর্ণ সুস্থ ও ত্রুটিমুক্ত বাচ্চার ওজন আড়াই থেকে তিন কেজি হয় এবং নবজাতক দৈর্ঘ্যে ৪৫ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়।

যেসব বিষয় গর্ভবতীর খেয়াল রাখতে হবে

গর্ভে বাচ্চার সুস্থতা ও ত্রুটি কিভাবে বুঝবেন এই আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো গর্ভবতী মায়ের গর্ভের বাচ্চার সুস্থতার জন্য যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। প্রত্যেক গর্ভবতীর গর্ভাবস্থার অভিজ্ঞতা ভিন্ন ভিন্ন। সেজন্য একজনের সঙ্গে আরেকজনের অভিজ্ঞতার মিল নাও হতে পারে। নিম্নোক্ত উপসর্গগুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

আরো পড়ুনঃ মধুর পুষ্টিগুণ খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

  • অত্যধিক বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
  • মাসিকের রাস্তায় অত্যধিক রক্তক্ষরণ হলে।
  • প্রস্রাবে জ্বালা যন্ত্রণা হলে
  • জ্বর ও তাপমাত্রা যদি ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়।
  •  বুকে-পিটে মারাত্মক খিল
  • ধরা দুর্গন্ধ স্রাব হলে।

গর্ভে বাচ্চার সুস্থতার লক্ষণ

গর্ভে বাচ্চার সুস্থতা ও ত্রুটি কিভাবে বুঝবেন এই শিরোনামে আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব গর্ভে সুস্থ বাচ্চার লক্ষণ সম্পর্কে। গর্ভে বাচ্চা সুস্থ থাকলে কি কি লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় বা অন্তঃসত্ত্বা মা কিভাবে বুঝতে পারবেন বাচ্চা সুস্থ আছে। গর্ভে বাচ্চা সুস্থ থাকলে যে লক্ষ্য গুলো প্রকাশ পায় সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।

বাচ্চা সুস্থ থাকলে গর্ভধারণের পরে ডেলিভারির ১১ থেকে ১৩ সপ্তাহ আগে থেকেই বাচ্চা নড়াচড়া শুরু করে কিন্তু এই নড়াচড়া বাচ্চার মা (প্রথম বাচ্চার মা) সহজে বুঝতে পারেন না তবে যারা দ্বিতীয়বার বা দ্বিতীয়বার মা হচ্ছেন তারা অতি সহজেই এই নড়াচড়া বুঝতে পারেন।

গর্ভে বাচ্চার সুস্থতার লক্ষণ

যারা প্রথমবার বাচ্চার মা হচ্ছেন তারা  বাচ্চার এই নড়াচড়া বুঝতে পারেন বা গুনতে পারেন গর্ভাবস্থার ২৬ থেকে ২৭ সপ্তাহ পরে। দ্বিতীয়বার বা তৃতীয়বার যারা মা হচ্ছেন তারা এই নড়াচড়া  গুনতে পারেন গর্ভবতী হওয়ার কমপক্ষে পাঁচ মাস পরে।

গর্ভে বাচ্চা নড়া করছে কি করছে না? কতবার নড়ছে? এই বিষয়গুলো লক্ষ্য করতে হবে গর্ভবতী মাকে। মেডিকেল সাইন্সের ভাষায় ২৮ সপ্তাহ পর থেকে একজন অন্তঃসত্ত্বা মা তার গর্ভের বাচ্চার নড়াচড়া গননা শুরু করবেন। একটা সুস্থ স্বাভাবিক ও ত্রুটিমুক্ত বাচ্চা গর্ভে সকালে থেকে রাত্রে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় কমপক্ষে ১০ বার নাড়াচড়া করে।

গর্ভে বাচ্চা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করেও নড়াচড়া আগে পরে হতে পারে। গর্ভে বাচ্চারা ঘুমায় ফলে ঘুমানোর সময় নড়াচড়া করে না।গাইনি বিশেষজ্ঞদের মতে একেজন অন্তঃসত্ত মা সকালে, দুপুরে ও রাতে খাবার পরে একটু শুয়ে রেস্ট নিলে ওই সময় বাচ্চার নড়াচড়া বুঝতে ও গুনতে সহজ হয়।

অন্তঃসত্ত্বা মায়ের সকালে খাওয়ার পরে বাচ্চা নড়াচড়া ৩ বার, দুপুরে খাওয়ার পরে বাচ্চার নড়াচড়া ৩ বার ও রাতে খাওয়ার পরে বাচ্চার নড়াচড়া ৩ বার এবং সারাদিনে অন্য সময় অন্তত ১ বার এই মোট ১০ বার বাচ্চা নড়াচড়া করে তাহলে বুঝতে হবে গর্ভে বাচ্চা সুস্থ, স্বাভাবিক ও ত্রুটিমুক্ত আছে। বাচ্চার এই নড়াচড়া যদি ১০ বারের কম হয় তাহলে বুঝতে হবে বাচ্চার ত্রুটি আছে।

বাচ্চা নড়াচড়া গননার ব্যাপারে একটু খেয়াল রাখতে হবে। বাচ্চা নড়াচড়া শুরু করলে অনেক সময় ধরে নড়াচড়া করে এই পুরোটাকে এক গুনতে হবে। থেমে গিয়ে আবার নড়াচড়া শুরু করলে নড়াচড়া থামা পর্যন্ত দুই গুনতে হবে, এইভাবে বাচ্চার নড়াচড়া গুনতে হয়। যদি কোন বাচ্চা গর্ভে ১০ বারের কম বা ৫ থেকে ৬ বার নড়াচড়া করে তাহলে কোন কালক্ষেপণ না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। গর্ভে বাচ্চার ত্রুটি থাকলে নড়াচড়া কম করে।

বাচ্চা নাড়াচড়া কম করার অর্থ হলো বাচ্চার কোন ত্রুটি আছে। অনেকেই অনেক কথা বলে, কেউ বলে আজকে কম নড়চ্ছে কাল বেশি নড়বে, অনেকেই বলে এরকম একটু হয়। তবে কারো কথায় কান না দিয়ে ডাক্তার পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই অবস্থা বেশি সময় ধরে চলতে থাকলে বাচ্চা বাঁচানো কঠিন হয়।

গর্ভে বাচ্চা নড়াচড়া কম করার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো অক্সিজেন সাপ্লাই কমে যাওয়া। অনেক সময় বাচ্চা নড়াচাড়া করতে গিয়ে নাড়ি গলার সাথে পেঁচিয়ে যায় ফলে বাচ্চার দেহে রক্তের  সরবরাহ কমে যায় ও অক্সিজেন কম পায়।

ফলে বাচ্চার নড়াচড়া কমে যায় আবার বাচ্চার মায়ের রক্তশূন্যতার কারনেও রক্তের সাপ্লাই কমে  যায় ফলে অক্সিজেন কমে যায়। বাচ্চার নড়াচড়া কমে যায়। বাচ্চার নড়াচড়া কম মানে হলো বাচ্চা ভালো নেই। এমতবস্থায় খুব দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হয়।

উপসংহার

গর্ভে বাচ্চার সুস্থতা ও ত্রুটি কিভাবে বুঝবেন এ সম্পর্কিত আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা সুস্থ বা ত্রুটিমুক্ত বাচ্চা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন। আজকের আর্টিকেলটি আপনার যদি ভালো লেগে থাকে

তাহলে শেয়ার করে দিতে ভুলবেন না, যাতে করে অন্যান্য গর্ভবতী মায়েরা বাচ্চা  সম্পর্কিত তথ্যগুলো জানতে পারে। সব মেয়েরা যেন সুস্থ ও সবল বাচ্চার মা হতে পারেন এই কামনা রইল। সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url