নেপাল ভ্রমণঃ ঘুরে আসুন হিমালয়কন্যা নেপাল থেকে

নেপাল ভ্রমণঃ ঘুরে আসুন হিমালয়কন্যা নেপাল থেকে অর্থাৎ নেপাল ভ্রমণ সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলটি লেখা। নেপালের বিভিন্ন প্রাকৃতিক সিনসিনারি, পাহাড় পর্বত ও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের কারণে পর্যটকদের কাছে নেপাল অনেক গুরুত্বপূর্ন টুরিস্ট স্পট। নেপালে অবস্থিত হিমালয় পর্বত চরিত্রের কাছে আরেকটি আকর্ষণীয় বিষয়।

নেপাল ভ্রমণঃ ঘুরে আসুন হিমালয়কন্যা নেপাল থেকে

আজকের এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা জানতে পারবেন নেপালের বিভিন্ন ধরনের টুরিস্ট স্পট সম্পর্কে। নেপালে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। যেমন - প্রাচীন মন্দির, বিভিন্ন বন্দ্যপ্রাণীর বিচরণ স্থান, কাঠমনডু, পোখারা, অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ইত্যাদি। যেগুলো দেখলে টুরিস্টদের মন এমনিতেই আনন্দ ভরে ওঠে।

পেজ সূচিপত্র

নেপাল পরিচিতি

নেপাল ভ্রমণঃ ঘুরে আসুন হিমালয়কন্যা নেপাল থেকে! যে কোন দেশে ভ্রমণে যাওয়ার আগে সে দেশ সম্পর্কে একটা সম্মুখ ধারণ থাকা দরকার। এখন আমরা নেপালে পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করবো। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ও ভারতের কোন ঘেঁষে হিমালয় পর্বতের পাদদেশে হিমালয়কন্যা খ্যাত নেপাল অবস্থিত। নেপালের রাজধানীর নাম কাঠমুন্ডু।

হিমালয় পর্বতের তথ্য বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট নেপালেই অবস্থিত। নেপালের মানুষ অত্যন্ত শান্ত, নম্র, ভদ্র ও স্থির প্রকৃতির। নেপালে বাংলা, হিন্দি, সংস্কৃত ভাষা চর্চা আছে। নেপালের প্রধান ভাষা হিন্দি। নেপালে অনেক মনমুগ্ধকর দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যেগুলো সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক বাংলাদেশ থেকে নেপালে ভ্রম করেন।

নেপাল ভ্রমণের পূর্ব প্রস্তুতি

নেপালে ভ্রমণে যাওয়ার পূর্বেই কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখা দরকার। যেগুলো যেকোনো সময় ভুলে যেতে পারেন অথবা যেকোন সময় কাজে লাগতে পারে। আসলে যে কোন ট্যুরে যাওয়ার আগেই এই পূর্ব প্রস্তুতিগুলো নিয়ে রাখা খুবই জরুরী।

আরো পড়ুনঃ দুবাই ভ্রমণঃ ঘুরে আসুন বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক শহর দুবাই থেকে

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টঃ নেপাল বাংলাদেশে পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি দেশ। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের মধ্যে অন্যতম হলো পাসপোর্ট। পাসপোর্টে মিনিমাম ছয় মাস বা তার বেশি মেয়াদ থাকতে হবে।

পোশাক পরিচ্ছদ ঃ আপনি যে সময় নেপালে ভ্রমণে যাবেন সেই সময়ের আবহাওয়া অনুসারে আপনি পোশাক পরিচ্ছদ আগে থেকেই লাগেজে রেডি করে রাখুন।

বাজেট নির্ধারণ ও মানি এক্সচেঞ্জঃ যে কোন ফরেন কান্ট্রিতে ট্যুরে গেলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার প্রয়োজন হয়। যেটা আপনি সেখানে গিয়ে স্বাচ্ছন্দে খরচ করতে পারবেন। সেজন্য আপনাকে একটি নির্দিষ্ট অ্যামাউন্টের টাকা এক্সচেঞ্জ করে নিতে হবে।

ট্রাভেল ইন্সুরেন্সঃ যদি আপনার  ট্রাভেল ইন্সুরেন্স থাকে তাহলে সেটি সঙ্গে নিয়ে নিতে পারেন। ট্রাভেন সংক্রান্ত যে কোন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা ভালো

কিভাবে নেপাল যাবেন

নেপালে ভ্রমণঃ নেপাল সার্কভুক্ত একটি দেশ এই দেশটির সৌন্দর্য সবাইকে বিমোহিত করে। এই দেশটি ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশ থেকে নেপাল যাওয়ার ২ টি উপায় আছে। একটি হলো এয়ার ফ্লাইটে আর অন্যটি হলো বাই রোডে। 

ফ্লাইট ঃ বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ নেপালে পৌঁছানোর জন্য সবচাইতে সহজ ও দ্রুততম মাধ্যম হলো ফ্লাইট। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন নেপালের কাঠমান্ডু ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর পর্যন্ত বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। ঢাকা থেকে কাটমুন্ডু যেতে ফ্লাইটে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘন্টা। খরচও হতে পারে ১৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা।

আরো পড়ুনঃ ভিসা আবেদন কিভাবে করতে হয় ও কি কি কাগজপত্র লাগে

বাই রোডঃ আপনি যদি বাই রোডে বাংলাদেশ থেকে নেপালে যেতে চান তাহলে আপনার ইন্ডিয়ান ট্রানজিট ভিসা থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে নেপালে যাওয়ার সময় এই বাসগুলো ভারত হয়ে নেপালে প্রবেশ করে। ট্রানজিট ও ইমিগ্রেশন কমপ্লিট করে বাসগুলো নেপালে পৌঁছাতে প্রায় ২০ ঘণ্টা থেকে ২৪ ঘন্টা সময় লেগে যায়। খরচ হতে পারে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ থেকে নেপালে ভিসা প্রাপ্তির উপায়

বাংলাদেশ থেকে দুই ধরনের ভিসায় নেপাল প্রবেশ করা যায়। সার্কভুক্ত দেশ হওয়ায় নেপাল সরকার বাংলাদেশীদের জন্য বিনামূল্যে অন এরাইভার ভিসা প্রদান করে থাকেন। অন্যটি হলো ট্যুরিস্ট ভিসা।

ট্যুরিস্ট ভিসা ঃ বাংলাদেশ থেকে নেপাল ভ্রমনের জন্য এক-দেড় মাস আগেই নির্দিষ্ট ফর্মে ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন করতে হয়। নেপালি দূতাবাস বা কনস্যুলেটে গিয়ে অথবা অনলাইনে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ও কাগজপত্রসহ ফরম পূরণ করতে পারেন। সবকিছু ঠিকঠাক মতো হয়ে গেলে ২-৩ সপ্তাহ পরে স্টিকারযুক্ত ভিসা হাতে পেতে পারেন।

বাংলাদেশ থেকে নেপালে ভিসা প্রাপ্তির উপায়

অন এরাইভাল ভিসা ঃ অন এরাইভাল ভিসা আবেদন দুই ভাবে করা যেতে পারে। বাংলাদেশে বসেই অনলাইনে ভিসার ফর্ম পূরণ করতে পারবেন আর অন্যটি হলো নেপালের কাঠমান্ডু ত্রিভুবন এয়ারপোর্টের সীমান্ত ক্রসিং পৌঁছানোর পরে ইমিগ্রেশন ডেস্কে বসে অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। ভিসা আবেদন করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে।

  • ছয় মাস মেয়াদ আছে এমন পাসপোর্ট।
  • জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম সনদ পত্র।
  • ভিসা ফি প্রদান করার মত নগদ টাকা।
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • সুপারিশপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
  • চাহিদা মোতাবেক অন্যান্য কাগজপত্র।

সফলভাবে ইমিগ্রেশন শেষ হওয়ার পরে সেদেশের একটা টেলিটক সিম কিনে নিতে পারেন। সিমের মূল্য ৫০০ রুপি নিতে পারে। উল্লেখ্য যে হোটেল থেকে যেখানে ঘুরতে যাবেন সব সময় নিম্নোক্ত কাগজগুলো সঙ্গে রাখা ভালো। 

  • রিটার্ন প্লেন টিকিট।
  • হোটেল বুকিং এর কাগজপত্র।
  • পাসপোর্ট-ভিসা।

নেপালে অনেকগুলো দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে থেকে উল্লেখযোগ্য গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো। এই স্থানগুলোতে আপনি ঘুরলে বা দেখলে অনেক ভালো লাগবে।

নেপালে কোথায় থাকবেন 

নেপালে পৌঁছার পরেই আপনাকে প্রথমেই একটি হোটেলের ব্যবস্থা করে বুকিং দিতে হবে। এই কাজটি আপনি অনলাইনে করতে পারেন আবার নেপালে পৌঁছে সরাসরি হোটেলে হোটেলে ঘুরে বুকিং করতে পারেন।

নেপালে থাকার জন্য সবচাইতে ভালো হলো থামেলের হোটেল। থামেলে অলিতে গলিতে অনেক হোটেল রয়েছে। মধ্যম থেকে উচ্চ মানের হোটেল এখানে পাওয়া যায়। হোটেলের খরচ গুলো নিম্নরূপ।

আরো পড়ুনঃ বাচ্চার ওজন কত হলে সিজার করাতে হয় ও নরমাল ডেলিভারির গুরুত্ব

  • মোটামুটি মালেরঃ সিঙ্গেল রুম ৫০০ টাকা পার নাইট।
  • মিডিয়াম মনেরঃ সিঙ্গেল রুম ৯০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা পার নাইট।
  • উচ্চ মানেরঃ সিঙ্গেল রুম ২৫০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা পার নাইট

নেপালের দর্শনীয় স্থানসমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিম্নে আলোচনা করা হলো।

কাঠমুন্ডু

নেপাল ভ্রমণঃ এর সবচাইতে আকর্ষণীয় জায়গা হল কাঠমুন্ডু। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুকে হিমালয়ের প্রবেশদ্বার বলা হয়। কাঠমুন্ডু নেপালের সবচাইতে জনবহুল ও ব্যয়বহুল শহর। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক থেকে মানুষের বসবাস এই শহরে।

আরো পড়ুনঃ MM Kit এর কাজ খাওয়ার নিয়ম ও দাম

এখানে হিন্দু বৌদ্ধ সহ সকল ধরনের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। মঠ, মন্দির ও বৌদ্ধস্তুপ জন্য বিখ্যাত এই কাঠমুন্ডু। এই কাঠমান্ডুতেই রয়েছে বিশ্বখ্যাত কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান। যেমন -

  • বৈদ্যনাথ স্তূপা।
  • দরবার স্কয়ার।
  • পশুপতিনাথ মন্দির।
  • স্বয়ম্ভুনাথ স্তূপা।
  • কাঠমুন্ডু উপত্যকা। ইত্যাদি।

এই সবগুলো ভালো করে ঘুরে দেখতে আপনার কয়েকদিন সময় লেগে যাবে। কাঠমুন্ডুতে থাকার এবং খাবার সুব্যবস্থা রয়েছে।

নেপালের দরবার স্কয়ার (পাটান, ভক্ত পুর)

দরবার স্কয়ার নাম শুনে বুঝতে পারছেন মানুষ জমায়েত হওয়ার বড় একটা মাঠ বা উঠান বা আংগিনা, যেখানে একসঙ্গে অনেক লোকজন জমায়েত হতে পারে। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের সকল অনুষ্ঠান আগে এখানে সংঘটিত হয়। এখানে বিভিন্ন রাজকীয় অনুষ্ঠান

আরো পড়ুনঃ ছাত্র জীবনে অনলাইনে ইনকাম করার ৮ টি সহজ উপায়

যেমন বিয়ে, পূজা, মন্ত্রপাঠ ও রাজ্যাভিষেক হয়। অনেকগুলো মূর্তি ও মন্দির আছে এখানে। ২০১৫ সালের ভয়াবহ নেপাল ভূমিকম্পে এই দরবার স্কয়ারের অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয় যেগুলোর কিছু কিছু পুনরুদ্ধার হয়েছে কিছু কিছু পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে।

বৌদ্ধনাথ স্তুপা

বৌদ্ধ ধর্মের আলোকবর্তিকা খ্যাত বৌদ্ধ স্তুপটি ১৪ শতকে বুদ্ধের মৃত্যুর পরে নির্মিত হয় বলে ঐতিহাসিকভাবে জানা যায়। বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল এলাকাতে শান্তি ও সোহায়ারদের বার্তা বয়ে আনে ও বিদেশী বণিকরা সহজেই এটি দেখে আকৃষ্ট হয়ে ধর্মান্তরিত হতে পারে এই উদ্দেশ্য নিয়েই স্থাপন করা হয় এই বৌদ্ধ স্তূপটি।

বনিক ও পর্যটকদের চোখ ধাঁধানো পিরিয়ড আকৃতির টাওয়ার ও গম্বুজের মাঝখানে চতুর্ভুজ আকৃতির বাক্সের চারপাশে চার জোড়া বড় বড় চোখ আছে যেগুলো বুদ্ধের সর্বদর্শিতাকে প্রতিনিধিত্ব করে।

পশুপতিনাথ মন্দির

নেপালে ভ্রমণঃ এ পর্যটকদের কাছে আরও একটি আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্থান হল পশুপতিনাথ মন্দির। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য অনেকগুলো মন্দির রয়েছে তার মধ্যে এই মন্দিরটি সবচাইতে সুন্দর ও বিখ্যাত। হিন্দু ধর্মের ভগবান শিবের উৎসর্গে গংগার শাখা বাগমতি নদীর তীরে এই বিখ্যাত মন্দিরট নির্মিত হয়েছে। এই মন্দিরের নির্মাণশৈলী পর্যটকদের নজর কাড়ে।

প্রতি বছর অনেক বয়স্ক হিন্দুরা এই মন্দিরে ভিড় করেন। তাদের ধারণা এই মন্দিরে মারা গেলে পরজনমে মানুষ হয়ে জন্মাবেন। এই ধারণা থেকেই অনেক বয়স্ক, অসুস্থ ও মৃত্যু প্রায় হিন্দু ব্যক্তিবর্গ এখানে আসেন। এই মন্দির প্রাঙ্গণে বিভিন্ন  দেশের পর্যটন, সাধু, সন্যাসি, পন্ডিত, মৃত প্রায় লোকজন, অনেক বানর, হরিণ ও দেখা যায়।

স্বয়ম্ভুনাথ স্তুপ (বানরের মন্দির)

কাঠমান্ডু ভ্যালিতে শহরের পশ্চিমে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত স্বয়ম্ভুনাথ স্তুপ। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ৩৬৫ টি পাথরের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। এই সিঁড়ি দিয়ে উপরের দিকে ওঠার সময় আশেপাশে অনেক ভালো দেখতে পাবেন। এজন্য অনেক পর্যটকরা স্তুপটিকে 'মানকি টেম্পল' বা 'বানরের মন্দির' বলে থাকেন।

এই স্তুপটি পাহাড়ের এত উপরে অবস্থিত যে সেখান থেকে ৩৬০ ডিগ্রি এংগেলে পুরো কাঠমুন্ডু শহরের মনোরম দৃশ্য আপনি উপভোগ করতে পারবেন। প্রায় দুই হাজার বছর আগে নির্মিত নেপালের অন্যতম পুরানো একটি স্থাপনা এই স্তুপ। স্বয়ম্ভুনাথ স্তূপ এলাকার মধ্যে আরও কিছু গুপ্তস্থান বা মঠ রয়েছে।

জনপ্রিয় মঠগুলো হলো 

  • বুদ্ধমূর্তি
  • দেওয়া ধর্ম মঠ
  • ঘুমন্ত বুদ্ধের মূর্তি
  • হারাতির মন্দির
  • স্বর্ণমুদ্রিত বজ্রপাতের অস্ত্র "বজ্র"। ইত্যাদি।

থামেল

নেপাল ভ্রমনের আরো একটি সুন্দরতম পর্যটন স্পট হলো থামেল। কাঠমান্ডু শহরেই অবস্থিত থামেলের রাতের দৃশ্য অন্যরকম সুন্দর লাগে। থামেলের দুই পাশ দিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে দোকানপাট এবং ওখানে কেনাকাটার অন্য রকম মজা রয়েছে। থামেল এ রয়েছে অনেক নাইটক্লাব, রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে ও বার। আপনার সাথে আরও অনেক বাঙালির দেখা হয়ে যেতে পারে এই থামেলে।

চন্দ্রগিরি পাহাড়

নেপাল ভ্রমনের অন্যতম আকর্ষণীয় স্পট চন্দ্রগিরি পাহাড়। এই চন্দ্রগিরি পাহাড় কাঠমুন্ডু শহর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই পাহাড়ের প্রধান আকর্ষণ হলো কেবল কার। বিভিন্ন পর্যটকরা চন্দ্রগিরি পাহাড়ের উচ্চতা উঠার জন্য কেবল করে উঠে থাকেন। এই কেবল কারের ভাড়া ১১৫০ টাকা প্রতিজন।

আরো পড়ুনঃ আদর্শ চালকের কি কি গুণাবলী থাকা উচিত

তিন হাজার ফুট উঁচু চন্দ্রগিরি পাহাড়ে ওঠার সময় এর চারপাশে বিভিন্ন দৃশ্য আপনার মনকে ভরিয়ে দেবে। আবহাওয়া ভালো থাকলে এই চন্দ্রগিরি পাহাড়ের চূড়া থেকে হিমালয় পর্বতমালা ভালো করে দেখা যায়। এই পাহাড়ের আরো একটি আকর্ষণ হলো এই পাহাড়ে উঠার সময় মনে হবে আপনি মেঘের মধ্যে দিয়ে চলছেন।

এই পাহাড়ের চূড়ায় একটি মান মন্দির রয়েছে। যে মন্দিরে প্রবেশের জন্য পঞ্চাশ টাকা টিকিট কাটতে হয়। ক্ষুধা নিবারণের জন্য মানমন্দিরের পাশেই রেস্টুরেন্ট আছে, রয়েছে আইসক্রিম পার্লার। যেখানে আপনি কম খরচে খেয়ে নিতে পারবেন।

পোখরা

নেপাল ভ্রমনের অন্যতম আকর্ষণীয় স্পট হল পোখরা শহর। কাঠমান্ডু থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে মনমুগ্ধকর ও আকর্ষণীয় এই শহরটি অবস্থিত। কাঠমন্ডু থেকে বাস ভাড়া করে বা প্রাইভেটকারে করে যাওয়া যায়। বাসে করে বাইরোডে যাওয়ার সময় রাস্তার দুপাশে সুন্দর পাহাড় পর্বতে সিনসিনারি গুলো অবলোকন করা যায়।

আপনি নেপালের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট যোগেও পোখরা যেতে পারেন। কাঠমুন্ডু থেকে বাস বা ট্যাক্সি যোগে পোখরা যেতে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা সময় লাগে। পোখরা শহরের পুরো দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে ফিরে দেখতে প্রায় দুই-তিন দিন সময় লেগে যায়। পোখরাতে থাকা এবং খাওয়া ভালো ব্যবস্থা রয়েছে।

ফেওয়া লেক

ট্যুরিস্টদের জন্য পোখরার বিভিন্ন লেক বা হ্রদ অন্যতম আকর্ষণীয় স্পর্ট। কয়েকটি লেক বা হ্রদ রয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফেওয়া লেক বা হ্রদ। এই হ্রদের ঠিক মাঝখানে একটি দ্বীপে দেবতা বিষ্ণুকে  উৎসর্গ করে একটি মন্দির নির্মিত হয়েছে। যার নাম 'তাল বরাহী মন্দির'। এই হ্রদের পানি অনেক স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। সাতশত টাকা টিকিটের বিনিময়ে এই রোদে বোটে ঘুরতে অনেক মজা লাগে।

সারাংকোট বা প্যারাগ্লাইডিং স্পট 

নেপালে ভ্রমণের আরেকটি অন্যতম আকর্ষণ হল সারাংকোট বা প্যারাগ্লাইডিং স্পট । এখানে বছরে হাজার হাজার পর্যটক আসেন শুধু প্যারাগ্লাইডিং করার জন্য। ২৫-৩০ মিনিটের প্যারাগ্লাইডিং করতে খরচ হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। প্যারাগ্লাইডিং করার সময় যখন উপরে উঠবেন মনে হবে রংবেরঙের পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে, আসলে তারা প্যারাগ্লাইডিংরত মানুষ।

মহেন্দ্র গুফা

নেপাল ভ্রমনের অন্যতম আকর্ষণ হলো পোখরার মহেন্দ্র গুফা। এইটি মূলত একটি গুহা যা অন্ধকার এবং সেঁতসেঁতে ও ভেজা। এই গুহার মধ্যে রয়েছে একটি শিবমন্দির ও অসংখ্য বাদুড়। গুহাটির অর্ধেক পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত আলোকিত করা আছে আর বাকি অর্ধেক বন্ধ থাকে।

ডেভিস ফলস

নেপালে ভ্রমণে টুরিস্টদের আরও একটি আকর্ষণীয় স্পট হলো পোখরায় অবস্থিত ডেভিস ফলস নামক একটি ঝর্ণা। এই ঝর্নাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও দেখতে খুব সুন্দর। ডেভিড ফলস এর পানির মূল উৎস হল ফেওয়া লেক। শীতকালে এখানে কুয়াশার কারণে ঝর্না দেখা খুব দুরূহ কিন্তু বর্ষাকালে গেলে ঝর্না পরিষ্কার দেখা যায়।

এই ঝর্ণার নামকরণের পিছনে একটি গল্প প্রচলিত আছে। ডেভিড ফলস নামক একজন মহিলা তার পার্টনারকে নিয়ে এই ঝর্ণাতে গোসল করার সময় পড়ে মারা যান। কথিত আছে তিনদিন পরে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তার বাবার ইচ্ছা অনুসারে এই ঝর্ণাটির নামকরণ করা হয় ডেবিট ফলস। এই ঝর্নাটি ট্যুরিস্টদের কাছে এখন অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটা টুরিস্ট স্পট।

নগরকোট

নেপাল ভ্রমণের সবচাইতে আকর্ষণীয় ট্যুরিস্ট স্পট হলো নগরকোট। কাঠমান্ডু থেকে নগরকোট যেতে মাত্র এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় লাগে। এই নগরকটে পাহাড়ের গায়ে স্থাপিত হোটেল গুলো থেকেই আবহাওয়া ভালো থাকলে হিমালয় পর্বতমালার আটটি রেঞ্জ এক সাথে স্পষ্ট দেখা যায়।

দূর থেকে হলেও এই হিমালয় পর্বতমালা দেখার সৌভাগ্য সবার হয় না।এই পর্বতমালা দেখার জন্য আকাশ পরিষ্কার থাকতে হয়, কুয়াশা হতে হয়, ওয়েদার ভালো থাকতে হয়। তাহলেই কেবল এভারেস্ট সহ হিমালয় পর্বতমালা দেখা যায়। হিমালয় পর্বতমালা দেখার জন্য সেখানে দুই তিন রাত অপেক্ষা করতে হয়।

চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক

নেপাল ভ্রমণের আরো একটি আকর্ষণীয় টুরিস্ট স্পট হলো চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক। নেপালের তরাই অঞ্চলে অবস্থিত একটি হল বন্যপ্রাণীদের অভয়ারণ্য। এখানে সকল প্রজাতির বন্যপ্রাণী নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারে। বিশাল আকৃতির এই পার্কটি ৯৫২ স্কয়ার কিলোমিটার বিস্তৃত।

চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্কে রয়েছে ৬৮ স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৫৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ১২৬ প্রজাতির মাছ ও ৫৪৪ প্রজাতির পাখি। নেপালে  ভ্রমণে গেলে এই পার্কটি অবশ্যই ঘুরে আসা উচিত। এই পার্কটিতে পর্যটকদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা।

লুম্বিনি

নেপাল ভ্রমণের সবচাইতে আকর্ষণীয় ও ইতিহাস বিজড়িত স্থানটি বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান এই তরাই অঞ্চলের লুম্বিনী নামক স্থানে। চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক থেকে লুম্বিনীর দূরত্ব মাত্র ১৮০ কিলোমিটার। গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান হওয়ার কারণেই এই স্থানটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্রতম তীর্থস্থান। এই জায়গাতে বুদ্ধের সময়কার অনেক স্মৃতি বিজড়িত পুরাকীর্তি দেখতে পাওয়া যায়।

হিমালয় রেঞ্চে ট্রেকিং

নেপালে ভ্রমণের অন্যতম আনন্দময় ট্যুরিজম হলো হিমালয় রেঞ্জে ট্রাকিং। হিমালয়কন্যা নেপালে রয়েছে বিশ্বের সবচাইতে এক্সাইটিং কিছু ট্রেক। এই ট্রেক গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এভারেস্ট বেস্ট ক্যাম্প, অন্নপূর্ণা সার্কিট, অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প, ল্যাংট্যাং, আপার মাসট্যাং ইত্যাদি। হিমালয় রেঞ্জে রয়েছে এইসব বৈচিত্র্যময় সব ট্রেকিং এর রাস্তা।

আপনার পারদর্শিতা অভিজ্ঞতা ও সহনশক্তির উপর নির্ভর করে আপনি যেকোনো একটি ট্রেক বেছে নিতে পারেন। হিমালয় রেঞ্জে ট্র্যাকিং করতে গিয়ে দেখতে পাবেন অসম্ভব সুন্দর কিছু সিন সিনারি, যেগুলো আপনাকে বিমোহিত করবে ও আপনার ভ্রমণের আনন্দকে পূর্ণতা দিবে।

নেপালি থালি

নেপালি থালি অর্থ হলো একটি খাবারের ব্যবস্থা থালি এটা একটা বড় আকৃতির প্লেট। এই প্লেটে একসঙ্গে তারা ভাত, ডাল, সবজি, তরকারি, মুরগি মাংস বা খাসির মাংস পরিবেশন করে থাকেন। নেপালিরা রান্নাবান্নায় অতিরিক্ত মসলা বা তেল ব্যবহার করে না কিন্তু খেতে স্বাদ হয়।

নেপালি থালি বা খাবার

নেপালের প্রায় সব ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতেই নেপালি থালির ব্যবস্থা রয়েছে। এই খাবারগুলো সাশ্রয়ও বটে। এছাড়াও নেপালিরা সিঙ্গাড়া, নানা রকম পিঠা, ডেজার্ট ও লাচ্ছি পছন্দ করে থাকেন। আলহামদুলিল্লাহ ও বিসমিল্লা হোটেল হালাল খাবারও পাওয়া যায়।

নেপাল রিভার রাফটিং

নেপালে ট্যুরিস্টদের জন্য আরেকটি আকর্ষণীয় হলো রিভার রাফটিনং। রিভার রাফটিং স্কয়ারডটি নেপালের ত্রিশূলই রিভারসাইড রিসোর্ট অবস্থিত। এখানে রিভার রেফটিং করার জন্য সকলের রয়েছে আকর্ষণীয় সুযোগ কিন্তু এই সুযোগটি লুফে নিতে পার হেড ২৫০০ টাকা করে গুনতে হয়। প্রথমে একটু ভয়ভীতি মনে হলেও পরবর্তীতে শুরু হয় অন্যরকম আনন্দ।

নেপাল বাঞ্জি জাম্পিং

নেপালে ট্যুরিস্টদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিষয় হলো বাঞ্জি জাম্পিং। নেপালের দ্যা ক্লিফ রিসোর্ট স্কোয়াডে রয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাঞ্জি জাম্পিং পয়েন্ট। যারা একটু দুর্বল চিত্তের মানুষ তারা এই বান্জি জাম্পিংয়ে অংশ নিতে পারে না বরং যারা একটু শক্ত চিত্রের মানুষ ঠিক তারা এই বাঞ্জি জাম্পিংয়ে অংশ নিতে পারেন। বান্জি জাম্পিং উপভোগ করাও খুব মজার।

ভ্রমণের উপযুক্ত সময় 

শুধু নেপাল নয়! যেকোনো দেশে ট্যুরে যেতে চাইলে সেই দেশের আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে সময় ও দিন-তারিখ ঠিক করা উচিৎ।  নেপালে শীত শুরু হওয়ার আগে আগে আবহাওয়া খুব ভালো থাকে, তাপমাত্রা কম থাকে, গাছপালা ও প্রকৃতি সবুজ থাকে ও

কুয়াশা মুক্ত আকাশ থাকার কারণে অনেক দূর থেকে হিমালয়ের দৃশ্য অবলোকন করা যায়। সুতরাং উল্লেখিত পরিস্থিতি বিবেচনায় দেখা গেছে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত নেপালে ভ্রমণ করার উপযুক্ত সময়।

নেপালে ভ্রমণে কত খরচ লাগে

নেপাল ভ্রমণে কত খরচ লাগে এই আলোচনাটা একটু আপেক্ষিক। কেননা আপনার থাকা, খাওয়া, কেমন মানে হোটেলে থাকবেন, কয়দিন থাকবেন, কোন কোন জায়গায় যাবেন তার উপর নির্ভর করে টোটাল খরচ। মোটামুটি ভাবে বলা যায় ৭ থেকে ১০ দিনের ট্যূরে এবং সিলেকটিভ ভালো ভালো  জায়গাতে ঘুরলে ৫৫ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।

লেখক এর মতামত

আশা করি আজকের হিমালয়কন্যা নেপাল ট্যুরে সম্পর্কে এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের ভালো লেগেছে এবং নেপাল ট্যুরের সব খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। সামর্থ্য থাকলে সকলেরই দেশ ভ্রমন করা উচিত। দেশ ভ্রমণে জ্ঞান বাড়ে, সৃষ্টি জগত সম্পর্কে গভীর অনুভূতি আসে। পোস্টটি পড়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url