সিজার কখন করাতে হয় ও নরমাল ডেলিভারির গুরুত্ব

সিজার কখন করাতে হয় ও নরমাল ডেলিভারির গুরুত্ব সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলটি লেখা। আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা জানতে পারবেন গর্ভে শিশুর কোন কোন অবস্থার প্রেক্ষিতে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে বেবি ডেলিভারি করা হয় ও নরমাল ডেলিভারির গুরুত্ব সম্পর্কে।

সিজার কখন করাতে হয় ও নরমাল ডেলিভারির গুরুত্বমেয়েদের জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো মা হওয়া। মা হতে গিয়ে অনেকেই নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব করেন আবার কেউ কেউ সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তানের মা হচ্ছেন। নরমাল ডেলিভারির গুরুত্ব সবচাইতে বেশি। বিশেষ জটিলতার সৃষ্টি না হলে কোন ডাক্তার সিজারিয়ান অপারেশনের ইচ্ছা প্রশন করেন না।

পেজ সুচীপত্র 

পরিকল্পিত সিজার অপারেশন

সিজার কখন করাতে হয় ও নরমাল ডেলিভারির গুরুত্ব সম্পর্কে আজকের আলোচনায় এখন আমরা জানবো কখন পরিকল্পিতভাবে সিজারের ব্যবস্থা করতে হয়। অনেক মহিলাদের পেটে বাচ্চা আসার পর থেকেই বিভিন্ন জটিলতায় ভুগতে থাকেন।

এই রুগিদের সব সময় একজন গাইনোকোলজিস্ট এর তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। গাইনোকোলজিস্ট নিয়মিত চেকাপের মাধ্যমে বিশেষ জটিলতার প্রেক্ষিতে নির্ধারণ করেন যে রুগির নরমাল ডেলিভারি হবে না সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি হবে।

এই ধরনের সিজারগুলোকে সাধারণত: পরিকল্পিত সিজার অপারেশন বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও আরো কিছু জটিল ক্ষেত্রগুলোতে প্রসব বেদনা ওঠার আগে থেকেই সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারির পরিকল্পনা করা হয়ে থাকে। সেই জটিল ক্ষেত্রগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।

প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হলে সিজার লাগতে পারে 

সাধারণত: প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল গর্ভাবস্থায় জরায়ুর উপরের দিকে থাকে। যদি কোন কারণে এই গর্ভফুল বা প্লাসেন্টা জরায়ুর নিচের দিকে থাকে তাহলে ডাক্তারি ভাষায় তাকে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বলা হয়।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ

আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া সম্পর্কে সিওর হওয়া যায়। প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হলে নরমাল ডেলিভারি করানো জটিল হয়। এই অবস্থায় নরমাল ডেলিভারি করাতে গেলে বা চেষ্টা করলে প্রচুর ব্রিডিং হতে পারে।

প্রচুর ব্লিডিংয়ের কারণে গর্ভের শিশু ও গর্ভবতী মা উভয়ের জন্য প্রাণ নাশের হুমকি হতে পারে। এই ধরনের জটিলতা এড়ানোর জন্য এই কেসগুলোতে প্রসব বেদনা উঠার আগে থেকেই সিজারের পরিকল্পনা করে রাখতে হয়।

ব্রিচ অথবা শিশুর অস্বাভাবিক অবস্থান

সিজার কখন করাতে হয় ও নরমাল ডেলিভারির গুরুত্ব শীর্ষক আলোচনায় এখন আমরা জানবো ব্রিচ অথবা শিশু অস্বাভাবিক অবস্থান সম্পর্কে। প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসলে গর্ভের শিশু যে অবস্থায় থাকে তা হল মাথা নিচের দিকে ও নিতম্ব থাকবে উপরের দিকে।

আরো পড়ুনঃ অর্থসহ মেয়ে বাচ্চাদের ইসলামিক নামের তালিকা ও ইংরেজি বানান

গর্ভে শিশুর অবস্থান এমন হবে যেন মুখ মায়ের পিঠের দিকে লেগে থাকবে আর ঘাড় এমনভাবে ভাঁজ হয়ে থাকবে যেন চিবুক বা থুতনি বুকে লেগে থাকে। যদি কোন কারনে শিশুর পা নিচের দিকে ও মাথা উপরের দিকে অবস্থান করে তাহলে ডাক্তারি ভাষায় এটাকে ব্রিচ পজিশন বলা হয়।

গর্ভে শিশু স্বাভাবিক অবস্থার পরিবর্তে যদি ব্রিচ বা অস্বাভাবিক অবস্থায় থাকে বা আড়াআড়ি ভাবে পেটের মধ্যে অবস্থান করে তাহলে নরমাল ডেলিভারির পরিবর্তে সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি করানো মা ও শিশু উভয়ের জন্য নিরাপদ।

এই সকল জটিল কেসগুলোতে প্রসব বেদনা ওঠার আগে থেকেই গর্ভবতী মা ও শিশুর নিরাপত্তার জন্য সিজারের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হয়।

জমজ শিশুর ক্ষেত্রে সিজারের পরিকল্পনা 

সিজার কখন করাতে হয় ও নরমাল ডেলিভার গুরুত্ব আলোচনায় এখন আলোচনা করবো জমজ শিশুর ক্ষেত্রে সিজারের পরিকল্পনা সম্পর্কে। বাচ্চা কনসেপ্ট করার পরে নিয়মিত গাইনোকোলজিস্ট এর তত্ত্বাবধানে থাকতে র্থসহ ছেলে শিশুর ইসলামিক নামের তালিকা

জমজ শিশুর ক্ষেত্রে সিজারের পরিকল্পনা

কনসেপ্ট করার একটি পর্যায়ে যদি আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে আপনার গর্ভে জমজ বা একাধিক বেবি রয়েছে এবং জমজ বেবির পজিশন ঠিক না থাকে।

অর্থাৎ যে বাচ্চাটি নিচের দিকে থাকে তার মাথা যদি প্রসবের রাস্তার দিকে এগিয়ে না থাকে তাহলে নরমাল ডেলিভারি করানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়। এই সকল ক্ষেত্রে নিরাপদ ডেলিভারির জন্য সিজার নিরাপদ।

প্রসবের রাস্তা ও শিশুর আকার

সিজার কখন করাতে হয় ও নরমাল ডেলিভারির গুরুত্ব শীর্ষক আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো প্রসবের রাস্তা ও শিশুর আকার সম্পর্কে। অনেক সময় দেখা যায় প্রসবের রাস্তা বা যোনিপথ যেটুকু প্রশস্ত হতে পারে তার তুলনায় বাচ্চার সাইজ বা আকার বা চওড়া অনেক বেশি।

আরও পড়ুনঃ  ঢেঁকি ছাঁটা লাল চাল এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

ফলে তুলনামূলকভাবে ছোট প্রসবের রাস্তা বা যোনিপথ দিয়ে বড় আকারের বাচ্চা নরমাল ডেলিভারি করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য বা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই সকল ক্ষেত্রে গর্ভবতী মা ও বাচ্চার নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে সিজারের পরিকল্পনা আগে থেকেই নিয়ে রাখতে হয়।

জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা

সিজার কখন করাতে হয় ও নরমাল ডেলিভারির গুরুত্ব আলোচনায় এখন আমরা জানবো গর্ভবতী মহিলার জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে। গর্ভবতী মহিলার জটিল কোন স্বাস্থ্য সমস্যা (যেমন-অতি উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের নির্দিষ্ট কিছু সমস্যা, ব্রেইনের নির্দিষ্ট জটিলতা) থাকে

আরো পড়ুনঃ অর্থসহ ছেলে শিশুর ইসলামিক নামের তালিকা

তাহলে রোগী বা রোগীর লোকজন এবং গাইনোকোলজিস্ট সবাই মিলে মনে করেন রোগীর জন্য নরমাল ডেলিভারি চাইতে সিজারিয়ান ডেলিভারি বেশি নিরাপদ হবে। সেই ক্ষেত্রে প্রসব বেদনা উঠার আগে থেকেই সিজারের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হয়।

প্রসবের সময় ইনফেকশনের সম্ভাবনা

সিজার কখন করাতে হয় ও নরমাল ডেলিভারির গুরুত্ব শীর্ষক আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো প্রসবের সময় ইনফেকশনের সম্ভাবনা সম্পর্কে। কোন গর্ভবতী মায়ের যদি এমন কোন জটিল ও সংকামন রোগ ( এইচ আই ভি ও যৌনাঙ্গের হার্পিস) থাকে।

যা যোনি পথ দিয়ে বাচ্চা প্রসব করার সময় বাচ্চার গায়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেই ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারির পরিবর্তে বাচ্চার নিরাপত্তার কথা ভেবে সিজারিয়ান ডেলিভারির পরিকল্পনা করা যেতে পারে।

পূর্বের সিজার অপারেশন

সিজার কখন করাতে হয় ও নরমাল ডেলিভারির গুরুত্ব শীর্ষক আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো গর্ভবতী মায়ের পূর্বের সিজারে অপারেশন সম্পর্কে। এইটা যদি সিজারের সেকেন্ড ইস্যু হয়

আরো পড়ুনঃ স্মার্টফোন ব্যবহারে শিশুদের কি কি ক্ষতি করে

তাহলে পূর্বের সিজারের সময় যদি কিছু নিয়ম-নীতি বা পদ্ধতি অবলম্বন করে পেট বা জরায়ু না কাটা হয়ে থাকে তাহলে বর্তমান শিশুর জন্য সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি করানোর প্রয়োজন হতে পারে।

ঐচ্ছিক সিজার বা রোগীর ইচ্ছাকৃত সিজার

সিজার কখন করাতে হয় ও নরমাল ডেলিভারির গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা এখন আমরা আলোচনা করবো ঐচ্ছিক সিজার বা রোগীর ইচ্ছাকৃতিক সিজার সম্পর্কে। অনেক রোগী আছেন যারা প্রসব বেদনার কষ্ট সহ্য করতে চান না। আবার কেউ কেউ আছেন দিনক্ষণ বুঝে বাচ্চা প্রসব করতে চান।

এই সকল ক্ষেত্রে রোগী তার গাইনোকোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করে নিবেন। এই সকল ক্ষেত্রে ডাক্তার রুগির যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষার করে রুগি ও তার অভিভাবকের সাথে আলোচনা করে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ডেলিভারি সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করতে পারেন।

ঐচ্ছিক সিজারের সিদ্ধান্ত সাধারণত কোন ডাক্তার নিতে চান না। ডাক্তার স্যারেরা জানেন প্রসব বেদনা ক্ষণিকের আনন্দ দীর্ঘদিনের আর সিজারের আনন্দ ক্ষণিকের কষ্ট দীর্ঘদিনের। তাই শখের বসে ইচ্ছাকৃতভাবে ঐচ্ছিক সিজার না করাই উচিত।

পরিকল্পিত সিজার নিয়ে কিছু পরামর্শ

সিজার কখন করাতে হয় ও নরমাল ডেলিভারির গুরুত্ব শীর্ষক আলোচনায় আমরা এখন আলোচনা করবো পরিকল্পিত সিজার নিয়ে কিছু পরামর্শ সম্পর্কে। পরিকল্পিত সিজার হলো রোগীর ইচ্ছা অনুযায়ী বা গর্ভবতীর জটিলতার কারণে ডাক্তারের পরিকল্পনা বা পরামর্শ মতে সিজারের মাধ্যমে বেবি ডেলিভারি করাকে বুঝায়। পরিকল্পিত সিজার সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

  • অনেক প্রেগনেন্ট মহিলা কনসেপ্ট এর পর থেকেই নানা রকম জটিলতায় ভুগতে থাকেন। এই ক্ষেত্রে একজন গাইনোকোলজিস্ট এর পরামর্শে থাকতে হয়। প্রথম থেকেই ঐ গাইনোকলজিস্ট রুগির অবস্থা বিবেচনা করবেন। যদি সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি নিরাপদ মনে করেন।‌ সেই ক্ষেত্রে গর্ভবতী মা ডাক্তারের সাথে খোলামেলা আলাপ-আলোচনা করে নিবেন যে কেনো সিজারিয়ান ডেলিভারি নিরাপদ মনে করছেন? সে বিষয়ে সম্পর্কে। তারপরে ভেবেচিন্তে সিজারের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
  • পরিকল্পিত সিজার উচিত নয়। তারপরেও কোনো রোগী যদি পরিকল্পিত ভাবে সিজার করাতে চান? তাহলে ৩৯তম সপ্তাহের পরে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। কেননা ৩৯তম সপ্তাহের আগে গর্ভে শিশুর পরিপূর্ণভাবে ম্যাচুরিটি হয় না। ফলে ৩৯সপ্তাহের আগে সিজার অপারেশন করে বেবি ডেলিভারি করালে ঔ বেবির নানারকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। যেমন - ব্রেথিং প্রবলেম হতে পারে, স্পেশাল কেয়ার ইউনিট বা নিওনেটাল আইসিইউতে নিতে হতে পারে। এমনকি অপরিপক্কতার কারণে এবনরমাল বেবি হতে পারে)।
  • একজন গর্ভবতী মহিলার কনসেপ্ট করার পর থেকেই গাইনোকোলজিস্টের চেকআপের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ডেলিভারির পরিকল্পনা ঠিক করে রাখা বাঞ্জনীয়। যেমন - আপনি কি ধরনের ডেলিভারি করাতে চান? যদি নরমাল ডেলিভারি করাতে চান তাহলে অয়েল এন্ড গুড কিন্তু যদি সিজারিয়ান ডেলিভারি করানোর প্রয়োজন হয় সেই ক্ষেত্রে আগে থেকেই অর্থাৎ নরমাল ডেলিভারি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখের পর্বেই হাসপাতালে ডেলিভারির জন্য ভর্তি হতে হয়।

ইমারজেন্সি সিজার অপারেশন

কিছু কিছু সময় এমারজেন্সি সিজার অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে। নরমাল ডেলিভারির সকল প্রস্তুতি থাকার পরেও কোন কোন ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে তখন ইমারজেন্সি সিজার অপারেশনের মাধ্যমে বেবি ডেলিভারি করতে হয়। এই এমার্জেন্সি বিষয়গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।

প্রসব সংক্রান্ত কারণ

নরমাল ডেলিভারির সকল প্রক্রিয়া সঠিকভাবে শুরু হওয়ার পরে যদি প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যায় বা গর্ভবতী মায়ের পেটের সংকোচন ধীরগতিতে হয় বা লম্বা বিরতিতে হয় বা প্রসবের রাস্তা যথেষ্ট প্রসস্থ না হয় তাহলে যোনিপথ দিয়ে নরমাল ডেলিভারি করানো সম্ভব হয়ে ওঠেনা। সেই ক্ষেত্রে ঝুঁকি এড়াতে তৎক্ষণাৎ ইমার্জেন্সি সিজারে সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।

প্ল্যাসেন্টাল অ্যাব্রাপশন জনিত কারণ

প্রতিনিয়ত প্রেগনেন্সি রোগীদের ডাক্তারি চেকআপের মাধ্যমে যদি এমন হয় যে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিন্তু যদি কোন কারণে ডেলিভারি হওয়ার পূর্বে প্ল্যাসেন্টা বা গর্ভফুল ছিড়ে যায় বা বিছিন্ন হয়ে যায় তাহলে ঝুকি এড়াতে জরুরি ভিত্তিতে সিজার অপারেটর মাধ্যমে ডেলিভারি করানো হয়।
ইমারজেন্সি সিজার অপারেশন
মেডিকেল সাইন্সের ভাষায় গর্ভবতী মহিলার এইরকম জরুরি অবস্থাকে প্ল্যাসেন্টাল আব্র্যাপশন বলে। এই অবস্থা সৃষ্টি হলে গর্ভবতী মহিলার একমাত্র তীব্র পেট ব্যথা ওজনের উপর দিয়ে ভারী রক্তপাত হয় প্রস্তুতিতে মা ও শিশু অবহেলি জীবন না সে সম্ভাবনা থাকে। 

অপ্রসস্ত যোনিপথ জনিত কারণ

গর্ভে শিশুর আকার বা সাইজ যদি বেশি বড় হয় নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে বা আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে যদি এটা বুঝা না যায় এবং যোনিপথ বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার জন্য সেই পরিমাণে প্রশস্ত না হয় তাহলে নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ইমার্জেন্সি সিজারিয়ান অপারেশনের প্রয়োজন পড়তে পারে।

শিশু সংক্রান্ত কারণ

অনেক সময় দেখা যায় নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় কিন্তু এর পরেও নরমাল ডেলিভারি হয় না। আবার ফোরসেপ ও ভেনটুস এর সাহায্যেও নরমাল ডেলিভারি করানো সম্ভব হয় না সেই ক্ষেত্রে ইমারজেন্সি ভিত্তিতে সিজারের সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।

যদি কোনো কারণে গর্ভে শিশুর উপরে অস্বাভাবিক চাপ পড়ে তাহলে হার্টবিট স্বাভাবিক ( হার্ট বিট ১১০-১৬০/ মিনিট ) এর চেয়ে কম বেশি হয়ে যেতে পারে। আবার আম্বলিকাল কর্ড এর ওপর প্রেসার পড়লে গর্ভে শিশুর অক্সিজেন বা খাদ্য সরবরাহ ঠিকমতো হয় না।

ফলে শিশু আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ে ও নড়াচাড়া কমে যায়। এই অবস্থায় গর্ভবতী মা ও সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবেই সিজার অপারেশনে সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।

গর্ভবতী সংক্রান্ত কারণ

অনেক গর্ভবতী মহিলার গর্ভকালীন সময়ের শেষের দিকে অর্থাৎ নরমাল ডেলিভারি হওয়ার আগে অতি উঢঢ রক্তচাপ,  প্রি-একলাশিয়া ও একলামশিয়া বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা কারনে যোনিপথ দিয়ে নরমাল ডেলিভারি করানো সম্ভব হয় না সেই ক্ষেত্রে সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

সিজারিয়ান অপারেশনের ঝুঁকি

সিজারীয়ান অপারেশনের ঝুঁকি সম্পর্কিত আলোচনায় আমরা এখন আলোচনা করবো সিজারিয়ান অপারেশনের বিভিন্ন ঝুকি সম্পর্কে। গর্ভবতী মায়ের কনসেপ্ট পরার পর থেকেই মানসিক টেনশন শুরু হয় কিভাবে বাচ্চা ডেলিভারি করবেন। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে নাকি সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে।

আগেই বলে রাখি বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কোন অবস্থাতেই সিজারিয়ান অপারেশন করা উচিত নয়। এমনিতেই সিজার অপারেশন বেশ নিরাপদ তবে অন্যান্য বড় অপারেশনের মতো এতেও কিছু ঝুঁকি রয়েছে।

খুব কম সংখ্যক সিজারিয়ান অপারেশনের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে আবার সেটা চিকিৎসার মাধ্যমে সমাধান হয়ে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক কিছু ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। মা ও শিশুর মৃত্যুর সুখী ও হতে পারে। এই যুক্তিগুলো নিম্নে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হয়।

প্রসূতির ঝুঁকি

সিজারিয়ান অপারেশনের ঝুঁকি সম্পর্কে আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো প্রসূতির সম্পর্কে। এই ঝুঁকিগুলো কোন অবস্থাতেই ইগনোর করা উচিত নয়। অপারেশনের সময় বা পরে প্রত্যেকটা ঝুঁকি আসতে পারে এটা মাথায় রেখেই একজন গাইনী সার্জনকে সিজারিয়ান অপারেশনের ব্যবস্থা নিতে হয়। সিজারিয়ান অপারেশনের সময় বা পরে 

  • ইনফেকশন জনিত ঝুঁকি ঃ জরায়ু ও এর আশেপাশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও কাঁটা স্থানে ইনফেকশন হতে পারে। এই ধরনের যে কোন ইনফেকশনের ক্ষেত্রে যোনিপথের অস্বাভাবিক স্রাব ও ভারী রক্ত হতে পারে, জ্বর হতে পারে, পেটে ব্যথা হতে পারে , কাঁটা স্থানে লাল হতে পারে, ফুলে যেতে পারে সর্বোপরি পুজ আসতে পারে।সিজার অপারেশনের আগে ও পরে খুব ভালো মতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হয়, যন্ত্রপাতি অটো গ্লাভসের মাধ্যমে জীবাণু মুক্ত করে নিয়ে অপারেশন করলে এই ঝুঁকি গুলো কমে যায়। উক্ত ঝুঁকিগুলো দেখা দিলে ডাক্তারের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থেকে ভালোমতো ড্রেসিং করে উন্নত মানের ঔষধপত্র গ্রহণ করলে এই  এধরনের ইনফেকশন গুলো ভালো হয়ে যায়।
  • রক্তক্ষরণ জনিত ঝুঁকি ঃ সিজারিয়ান অপারেশনের সময় ও পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। যদি কোন কারণে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা না যায় তাহলে জরায়ু কেটে ফেলে দিতে পারে। আবার রক্ত দান করা রাখতে পারে, কোন কোন ক্ষেত্রে পুনরায় অপারেশন করে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে হতে পারে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও রুগির মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
  • অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে যাওয়ার ওয়ার মত ঝুঁকিঃ সিজারিয়ান অপারেশনের সময় জরায়ুর আশেপাশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে যাওয়ার মতো ঝুঁতে বৃষ্টি হতে পারে। যেমন-মূত্রথলী, মূত্রনালী বা অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অসাবধানতাবশত: কেটে যেতে পারে এবং জটিল সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এই ক্ষেত্রে পূণরায় অপারেশন করে ওই কেটে যাওয়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রিপেয়ার করার দরকার হতে পারে যা মারাত্মক ঝুঁকি এমনকি রুগির মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
  • জীবনযাপন স্বাভাবিক হতে দেরি ঃ আমরা সকলেই জানি নরমাল ডেলিভারি সব সময় ব্যাটার। সিজারিয়ান অপারেশনের পরে প্রসূতি মাকে স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরতে নরমাল ডেলিভারির তুলনায় অনেক বেশি সময় লাগে। ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে অস্বস্তি বোধ করে ও স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাহত হয়।
  • মেডিসিন রি-অ্যাকশন জনিত ঝুঁকি ঃসিজারিয়ান অপারেশনের সময় প্রসূতি মাকে এ্যানতথেশিয়ার অ্যানস্থেসেয়ার ঔষধসহ আরো অনেক ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। এই ঔষধগুলো অনেকের রি-অ্যাকশন করে এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে। যা স্বাভাবিক হতে বেশ কিছু দিন সময় লাগে।

শিশু বা নবজাতক সংক্রান্ত ঝুঁকি 

সিজারিয়ান অপারেশনের ঝুঁকি সম্পর্কে আলোচনা এখন আমরা আলোচনা করব শিশু বা মতজাতক সংক্রান্ত যোগী সম্পর্কে। সিজারিয়ান ডেলিভারির শিশু বা নবজাতক  নরমাল ডেলিভারির শিশুর চাইতে বেশি ঝুঁকির সম্মুখীন হয়ে থাকে। নবজাতক সংক্রান্ত ঝুঁকিগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।

  • শিশুর শরীর কেটে যাওয়া জনিত ঝুঁকিঃ সিজারিয়ান অপারেশনের প্রাক্কালে জরায়ু কাটার সময় অসাবধানতাবশত: শিশুর শরীরের কোন অংশে হালকা কেটে যেতে পারে।
  • শিশুর শ্বাসকষ্ট জনিত ঝুঁকিঃ ইম্মাসুয়ের বেবি ( অপরিপক্ক ) বা গর্ভধারণের ৩৯ সপ্তাহের আগে সিজারের অপারেশনের মাধ্যমে ডেলিভারি করানো হলে ওই নবজাতক শিশুর শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  • শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জনিত ঝুঁকি ঃ গবেষণার ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে জন্মের পরে বাচ্চাদের যে টিকা গুলো প্রদান করা হয় এতে সিজারিয়ান ডেলিভারি বাচ্চাদের চাইতে নরমাল ডেলিভারির বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তৈরি হয়।

সিজার পরবর্তী ভবিষ্যৎ গর্ভধারণের ঝুঁকি

সিজারিয়ান অপারেশন সংক্রান্ত আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো সিজার পরবর্তী ভবিষ্যৎ গর্ভধারণের ঝুঁকি সম্পর্কে। সিজার অপারেশন একটি নিরাপদ অপারেশন।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিজারিয়ান প্রসূতি মায়ের গর্ভধারণের তেমন কোনো সমস্যা হয় না। কোন কোন মায়ের ক্ষেত্রে জটিল সমস্যা ও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

একটি সিজার অপারেশনের পরে কমপক্ষে দুই থেকে তিন বছর পরে দ্বিতীয় বাচ্চা নেওয়া চিন্তা করা উচিত। সিজার পরবর্তী অল্প দিনের ব্যবধানে পুনরায় গর্ভধারণ করলে গর্বভাবস্থায় ও প্রসব সংক্রান্ত জটিলতা বা ঝুঁকি অনেক গুণে বেড়ে যায়। সিজার পরবর্তী অল্প সময়ের মধ্যে কনসেপ্ট করলে -

  • জরায়ুর শেলাই খুলে যেতে পারে।
  • জরায়ু ফেটে যেতে পারে।
  • বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • মৃত বাচ্চা প্রসব হতে পারে।
  • ব্লিডিং হতে পারে।
  • অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি হতে পারে।

সিজার সম্পর্কে লেখক এর মতামত

সিজার সংক্রান্ত আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা সবাই অন্তত:পক্ষে একটি বিষয়ে ক্লিয়ার হতে পেরেছেন যে সিজার কোন অবস্থাতেই কোন গর্ভবতী মায়ের জন্য কাম্য নয়। নরমাল ডেলিভারির চাইতে সিজারের ঝুঁকি অনেক গুণ বেশি। সিজারিয়ান ডেলিভারির চাইতে নরমাল ডেলিভারি অনেক নিরাপদ।

সিজার অপারেশনের বিভিন্ন জটিলতা বা ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে যে সকল ক্ষেত্রে সিজার না করলেই নয় অর্থাৎ সিজারের ঝুঁকির তুলনায় রোগী দীর্ঘমেয়াদি বেশি নিরাপদে থাকবে সেই সকল ক্ষেত্রেই কেবল সিজার অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। ধন্যবাদ সবাইকে। সবাই সুস্বাস্থ্যে ভালো থাকবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url