বাসা-বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি এড়াতে যেগুলো করা উচিত
বাসা-বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি এড়াতে যেগুলো করা উচিত সে সম্পর্কে আজকে আর্টিকেলটি লেখা। আগুন শক্তির উৎস আবার এই আগুনই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, সামান্য অসতর্কতার কারণে। একটু সতর্ক হলেই বাসা-বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমানো সম্ভব হতে পারে।
প্রায়শই দেখা যায় বাসা-বাড়িতে অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে যা খুবই আকর্ষিক ও কোন কোন সময় অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা বেশিরভাগ লোকই জানিনা যে বাসা-বাড়িতে অগ্নি দুর্ঘটনা নির্বাপনে কি ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। বাসা-বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড এড়াতে নিম্নোক্ত ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করা উচিত।
পেজ সূচিপত্র
আগুনের উৎস সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে
বাসা-বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি এড়াতে যেগুলো করা উচিত তার মধ্যে অন্যতম হলো আগুনের উৎস সম্পর্কে সচেতন থাকা। আগুনের উৎস সম্পর্কে সচেতন থাকার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ভালোমতো খেয়াল রাখতে হবে।
- অনেকে চুলা জ্বালিয়ে রেখে বা রান্না করতে করতে অন্য রুমে চলে গিয়ে রেস্ট নেয়, এটা করা উচিত নয়।
- চুলা জ্বালানোর সময় ম্যাচের কাঠি আগুনসহ যেখানে সেখানে ফেলা উচিত নয়। আগুন নিভিয়ে ফেলে দেওয়া উচিত।
- খুব সহজেই আগুন লেগে যায় এমন দাহ্য পদার্থ, যেমন - শুকনো কাপড়, তেল, কাগজপত্র, খড়ি বা লাকড়ি এগুলো আগুনের সংস্পর্শে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- ঘুম ঘুম অবস্থায় অনেকে বিছানা বা সোফায় বসে ধূমপান করেন, এটা করা উচিত নয়।
- মোমবাতি, কুপি, বাতি জ্বালিয়ে রেখে অন্যত্র চলে যাওয়া উচিত নয়, এতে করে বাতাসে কাপড়-চোপড় বা কাগজপত্র এগুলোর সংস্পর্শে আসলে আগুন লেগে যেতে পারে।
আগুন প্রতিরোধী উপাদানের ব্যবহার
বাসা-বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি এড়াতে যেগুলো করা উচিত এই শিরোনাম আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো আগুন প্রতিরোধী উপাদানের ব্যবহার সম্পর্কে। বড় বড় বিল্ডিং বা বাসা-বাড়ি নির্মাণে আগুন প্রতিরোধী উপাদান ব্যবহার করা উচিত।
আরো পড়ুনঃ গর্ভে বাচ্চার সুস্থতা ও ত্রুটি কিভাবে বুঝবেন।
যেমন - দরজা, জানালা, রান্নাঘরের সিলিং, রান্না ঘরের আসবাবপত্র ইত্যাদি এগুলো আগুন প্রতিবাধী উপাদান হলে আগুন ধরে না। এমনকি আগুন দুর্ঘটনা ঘটলেও সহজে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে না।
বর্তমান সময়ে এমন কিছু হাইড্রোকার্বন বা সিন্থেটিক দিয়ে এই সাজসজ্জাগুলো করা হয় যাতে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে ও এতে সৃষ্ট ধোয়া দম বন্ধের উপক্রম হয় এবং অনেক সময় মানুষ মারাও যায়। বিল্ডিং এর ভিতর ওয়ালের মধ্যে ওয়ারিংগুলো এই সিনথেটিক জাতীয় উপাদান দিয়ে করা উচিত নয়।
গ্যাসের চুলার লাইনে ছিদ্র সম্পর্কে সচেতনতা
বাসা-বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি এড়াতে যেগুলো করা উচিত এই শিরোনাম আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো গ্যাসের চুলা ও লাইনের ছিদ্র সচেতনতা সম্পর্কে। গ্যাসের চুলা ও লাইনের ছিদ্র সম্পর্কিত দূর্ঘটনা এড়ানোর জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ভালোমতো খেয়াল রাখা উচিত।
আরো পড়ুনঃ দুবাই ভ্রমণঃ ঘুরে আসুন বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক শহর দুবাই থেকে।
- গ্যাসের চুলায় যে পাইপ বা লাইন দিয়ে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস সরবরাহ হয় প্রতিনিয়ত সেই লাইন চেক করতে হবে।
- হাড়ি-পাতিল ধরার কাজে ব্যবহৃত নেকড়াগুলো গ্যাসের চুলার আগুন থেকে দূরে রাখা উচিত। যাতে করে অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে যেতে না পারে।
- পুরাতন লাইন বাস্ট হয়ে আগুন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে তাই নির্দিষ্ট সময় পর পর লাইন পরিবর্তন করে নতুন লাইন লাগাতে হবে ।
- রাতের বেলায় ঘুমানোর আগে গ্যাসের চুলা বন্ধ আছে কি না, ভালোমতো খেয়াল করতে হবে।
- অনেক সময় দুর্ঘটনা বসোত গ্যাস লাইন লিক হয়ে যেতে পারে, ফলে রান্না ঘরে যেন গ্যাস জমে থাকতে না পারে সেজন্য রাতের বেলায় রান্না ঘরের জানালা খোলা রাখা উচিত।
বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে
বাসা-বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি এড়াতে যেগুলো করা উচিত এর মধ্যে অন্যতম হলো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এমনভবে ব্যবহার করা যাবে না যার কারণে বাসা-বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারে ও অগ্নিকাণ্ড রোধে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলা উচিত।
- ভিজা হাতে বৈদ্যুতিক সুইচ ব্যবহার করা যাবে না, এতে করে সর্ট সার্কিট হয়ে আগুন লেগে যেতে পারে।
- বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক ক্ষতিগ্রস্ত বা ছেঁড়া তার দ্রুত পরিবর্তন করতে হবে।
- চার্জেবল ডিভাইসগুলোর চাইতে মাল্টিপ্লাগের ওয়ার্ট বেশি হতে হবে, নইলে যে কোন সময় অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
- যেকোনো ডিভাইস চার্জ দেয়ার সময় বিছানার উপরে বা বালিশের নিচে রাখা উচিত নয়, এতে করে খুব সহজেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
- রান্নার কাজে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক হিটার, ইলেকট্রিক চুলা, রাইচ কুকার ইত্যাদি ভালো মানের তার দ্বারা লাইন সংযোগ করা উচিত, নইলে যেকোনো সময় অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
ডাক্ট লাইন ও ক্যাবল হোল সিল করা
বাসা-বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি এড়াতে যেগুলো করা উচিত তার মধ্যে একটি হল ডাক্ট লাইন ও ক্যাবন হোল সিল করা। বর্তমান সময়ে যে আধুনিক বিল্ডিং, বাসা-বাড়ি নির্মাণ করা হয় সেগুলোতে একই মোটা পাইপের মধ্যে দিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, হিটিং, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের জন্য লাইন টানা হয়।
আরো পড়ুনঃ অ্যালোভেরার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম।
এই লাইনগুলো টানার জন্য যে বড় ধরনের মোটা পাইপ ব্যবহার করা হয় এটাকে মূলত ডাক্ট লাইন বলা হয়। এই ডাক্ট লাইন বা ক্যাবল হোল দিয়ে যেন দ্রুত আগুন বা ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য অগ্নি প্রতিরোধক উপাদান দিয়ে এই লাইনগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
স্প্রিংকলার সিস্টেম
বাসা-বাড়িতে অগ্নিকান্ডেব ঝুঁকি এড়াতে যেগুলো করা উচিত তার মধ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা হলো স্প্রিংকলার সিস্টেম। এটি বড় কোন বিল্ডিং এর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা সাথে সংযুক্ত করা হয়। যদি কোন কারনে তাপমাত্রা ৫৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেটের বেশি হয়।
আরো পড়ুনঃ ক্যালসিয়াম ঘাটতিঃ লক্ষণ কারণ প্রতিকার ও চিকিৎসা।
তাহলে এই স্প্রিংকলার সিস্টেম অটো বিস্ফোরিত হয় এবং পানি ছিটিয়ে আগুন নিভাতে সহায়তা করে। এইগুলো সাধারণত বড় বড় বিল্ডিং বা কারখানায় ব্যবহার হয়ে থাকে। বর্তমানে অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে আবাসিক ভবন গুলোতেও ব্যবহার করা হচ্ছে।
অ্যালার্ম সিস্টেম বসানো
বাসা-বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি এড়াতে যেগুলো করা উচিৎ তার মধ্যে আরও একটি অন্যতম উপায় হল অ্যালার্ম সিস্টেম বসানো। বড় বড় বাসা-বাড়ি বা আবাসিক বিল্ডিং এর কোথাও যদি অগ্নিকাণ্ড ঘটে তাহলে এই অ্যালার্ম বেজে ওঠে ফলে সবাই সতর্ক হয়ে দ্রুত বিল্ডিং ত্যাগ করে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে। এতে করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানির পরিমাণ কমে যেতে পারে।
ফায়ার এক্সটিংগুইশার ও ব্লাংকেট হাতের কাছে রাখতে হবে
বাসা-বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি এড়াতে যেগুলো করা উচিত তার মধ্যে আরও একটি অন্যতম উপায় হল বাসা বাড়িতে ফায়ার এক্সটিংগুইশায় ও ফায়ার ব্ল্যাঙ্কেট হাতের কাছে রাখতে হবে। বিল্ডিং এর প্রত্যেকটি ফ্লোরে দরজার বাইরে
আরো পড়ুনঃ ঘরে বসে অনলাইনে ইনকাম করা ১০টি সহজ উপায়।
এই ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা অগ্নি নির্বাপক গ্রন্থ স্থাপন করা থাকতে হবে, ও এর সঠিক ব্যবহার প্রত্যেককে জানতে হবে। যেন অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে গেলে সাথে সাথে এই অগ্নি নির্বাপক ব্যবহার করে আগুন নিভাতে পারে।
অগ্নি দুর্ঘটনায় করণীয় বিষয়ের মহড়া
বাসা-বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি এড়াতে যেগুলো করা উচিত তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো অগ্নি দুর্ঘটনায় করনীয় বিষয়ে অবহিত করা বা মহড়ার ব্যবস্থা করা। বাসা বাড়িতে যদি অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে কি কি করতে হবে সে সম্পর্কে বাড়ির সকলকে বিশেষ করে বাচ্চাদেরকে শেখাতে হবে। যাতে করে বিপদের মধ্যে সবাই হতবম্ব হয়ে চুপ না থাকে।
এই মহড়ায় যেগুলো করণীয় সেগুলো নিম্নরূপ- যত দ্রুত সম্ভব ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের জানিয়ে দেওয়া।
- আগুন থেকে উৎপন্ন বিষাক্ত ধোঁয়া নিঃশ্বাসে যেন গ্রহণ না করে।
- ভেজা তোয়াল দিয়ে নাক ডেকে নিঃশ্বাস নেওয়া।
- খুব দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাওয়া।
- আগুন লাগলে আগুন নেভানোর জন্য কে কি করবে তা আগে থেকেই ঠিক করে নেওয়া।
- অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটলে ঘাবড়ে গিয়ে বা উদ্বিগ্ন হয়ে ভবন থেকে লাফ দেওয়া উচিত নয় ।
জরুরী বহির্গমন পথ ও ব্যবহার
স্মোক ডিরেক্টর স্থাপন
উপসংহার
আশা করি বাসা-বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি এড়াতে আজকে এই আর্টিকেলটি থেকে অর্জিত জ্ঞান আপনাদের খুব উপকারে আসবে। ক্ষুদ্র বা ছোট পরিসরে হলেও আগুনকে ক্ষুদ্র মনে করা উচিত নয়। মুহুর্তের মধ্যে এর লেলিহান শিখা কেড়ে নিতে পারে বাসা-বাড়িসহ অনেক প্রাণ।
আগুন বা তাপ যেমন আমাদের প্রাণের শক্তি তেমনি একটু অসতর্কতার জন্য প্রাণ নাশের কারণও হতে পারে এই আগুন। কাজেই সবাই সতর্ক হোন, সতর্ক থাকুন, কোথাও আগুন লাগলে সবাই মিলে একসাথে নিরাপদে আগুন নিভানোর চেষ্টা করুন। সবাইকে ধন্যবাদ।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url