রেমিটেন্স কি বা রেমিটেন্স কাকে বলে বিস্তারিতভাবে জানার জন্য এই আর্টিকেলেটি পুরোপুরি পড়ুন। বর্তমান সময়ে বহুল ব্যবহৃত ও বহুল আলোচিত একটি শব্দ 'রেমিটেন্স' (Remittance). সত্যিকার অর্থে রেমিটেন্স কাকে বলে বা রেমিটেন্স কি আমরা অনেকেই জানিনা। এটি জানার জন্য একটু নিচের দিকে দেখুন।
রেমিটেন্স (Remittance) শব্দটি ইংরেজি রেমিট (Remit) শব্দ থেকে এসেছে যার বাংলা অর্থ হলো অর্থ (টাকা) পাঠানো বা প্রেরণ করা। অর্থনীতির ভাষায় অর্থ প্রেরণ করাকে রেমিটেন্স বলা হয়। বর্তমান সময়ে রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকা শক্তি। আরো বিস্তারিত জানার জন্য নিচের দিকে পড়ুন।
পেজ সুচীপত্র
রেমিটেন্স কাকে বলে
রেমিটেন্স কি বা রেমিটেন্স কাকে বলে এই আলোচনায় এখন আমরা রেমিটেন্স এর সংজ্ঞা সম্পর্কে জানবো। রেমিটেন্স এর বিভিন্ন সংজ্ঞা বা রেমিটেন্স কাকে বলে নিম্নে আলোচনা করা হলো
বিদেশে অবস্থানরত কোনো ব্যক্তির কাছে থেকে তার মাতৃদেশে ব্যাংকের মাধ্যমে অন্যকারো কাছে ব্যাংক ড্রাফট, টেলিগ্রাফ ট্রান্সফার এ ধরনের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ করাকে রেমিটেন্স বলে।
রেমিটেন্স কথাটি আমাদের দেশে বেশি ব্যবহার করা হয় বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের ক্ষেত্রে, অর্থাৎ এই বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের কাছ থেকে আমার দেশে যে টাকা আসে তাকে রেমিটেন্স হিসেবে গণ্য করা হয়।
প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স আসে কারেন্সি বা ব্যাংক নোট হিসাবে, ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে, মেইল ট্রান্সফারের মাধ্যমে, বিদেশে ব্যাংক ও অন্যান্য মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে প্রেরিত ফরেন এক্সচেঞ্জ।
খুব সহজ ভাষায় বলা যেতে পারে বিদেশে কর্মরত, চাকরিরত, ব্যবসারত কোন ব্যক্তি যখন মাতৃদেশে তার প্রিয়জনের কাছে অর্থ প্রেরণ করে সেই প্রেরিত অর্থকেই রেমিটেন্স বলা হয।
বর্তমান সময়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে অধিক বেতনে, উন্নত জীবনযাত্রার জন্য স্বজনদের ছেড়ে পরিশ্রম ও কষ্ট উপেক্ষা করে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি মাতৃভূমি ছেড়ে বিদেশে চলে যান কর্ম করার জন্য।
বিদেশে বসবাসরত ও কর্মরত বাংলাদেশীরা অনেক অর্থ উপার্জন করেন এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছে দেশে পাঠান এই পাঠানো অর্থই রেমিটেন্স। যত বেশি লোক বিদেশে অর্থ উপার্জন করেন তত বেশি রেমিটেন্স দেশের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
রেমিটেন্সের উদাহরণ
রেমিটেন্স কি বা রেমিটেন্স কাকে বলে এ সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো রেমিটেন্স এর একটি বাস্তব উদাহরণ সম্পর্কে। ধরুন বাংলাদেশী কোন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি ডিভি লটারিতে উইন করে আমেরিকাতে বসবাস করেন। উনি আমেরিকাতে কিছু না কিছু কাজ-কর্ম করে ডলার উপার্জন করেন।
এই উপার্জিত ডলারের কিছু অংশ তার পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের কাছে পাঠিয়ে দেন। যে পরিমাণ ডলার প্রতিবার বাংলাদেশ পাঠান এই ডলারের বিপরীতে এক্সচেঞ্জকৃত টাকাই রেমিটেন্স।
যেসব দেশে বাংলাদেশী প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আয় করেন
রেমিটেন্স কি বা রেমিটেন্স কাকে বলে এই আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো বাংলাদেশী প্রবাসীরা যে সকল দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করেন ও সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠান সে সম্পর্কে। আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মসংস্থান ও অর্থ উপার্জনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়া-আসা করছেন ও বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে অর্থ উপার্জন করছেন।
বাংলাদেশের প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি যে দেশগুলোতে কর্মরত আছেন তার মধ্যে শীর্ষ কয়েকটি দেশের নাম উল্লেখ করা হলো। সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আছেন মধ্যপ্রাচ্য দেশগুলোতে। যেমন-
- সৌদি আরব
- আরব আমিরাত
- কাতার
- মিশর
- কুয়েত
- মরক্কো
- সিঙ্গাপুর
- মালয়েশিয়া
- মালদ্বীপ
- দক্ষিণ কোরিয়া
- ব্রোনাই
- দক্ষিণ আফ্রিকা
- ইতালী
এছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে অনেক মানুষ চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত আছেন এবং রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
রেমিট্যান্স অর্জনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশ
রেমিটেন্স কি বা রেমিটেন্স কাকে বলে এই আলোচনা এখন আমরা জানবো রেমিট্যান্স অর্জনকারী বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের নাম। রেমিটেন্স অর্জনকারী শীর্ষ ১০ টি দেশের মধ্যে আমাদের গর্বিত বাংলাদেশের অবস্থান সাত নম্বরে।। দেশগুলোর নাম নিম্নে প্রদান করা হলো।
- ভারত (ইন্ডিয়া)
- চায়না (গণচীন)
- মেক্সিকো
- ফিলিপাইন
- মিশর (ইজিপ্ট)
- নাইজেরিয়া
- বাংলাদেশ
- পাকিস্তান
- ভিয়েতনাম
- ইউক্রেন
উল্লেখ্য রেমিটেন্স অর্জনকারী বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের অবস্থার প্রতি বছরই পরিবর্তন হতে পারে।
রেমিটেন্সের প্রভাব বা সুবিধা
রেমিটেন্স কি বা রেমিটেন্স কাকে বলে এই সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আমরা জানব রেমিটেন্সের প্রভাব বা সুবিধা সম্পর্কে। প্রবাসী ভাই-বোনদের পাঠানো রেমিটেন্সের প্রভাবে আমাদের যে যে সুবিধা গুলো হয় সেগুলো নিম্নরূপ।
- রেমিটেন্স আমাদের দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ও জিডিপির মান উন্নত করে।
- রেমিট্যান্স দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করে।
- রেমিটেন্স একটি পরিবারে ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষাসহ উন্নত জীবন যাত্রার সুযোগ করে দেয়।
- অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
- রেমিটেন্স দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
- রেমিটেন্স মুদ্রাস্ফিতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে সরকারের উদ্যোগ
রেমিটেন্স কি বা রেমিটেন্স কাকে বলে এ সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে সরকার কি ধরনের উদ্যোগ বা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সে বিষয় সম্পর্কে।
আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে, রিজার্ভ বৃদ্ধিতে ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রেমিটেন্সের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই রেমিটেন্সে প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ সরকার করতে কিছু উদ্যোগ বা পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ বা উদ্যোগ নিম্নে আলোচনা করা হলো।
প্রণোদনা প্রদান
রেমিটেন্স প্রেরণকে উৎসাহিত করার জন্য সরকার কর্তৃক কিছু রেমিটেন্স প্রনোদনা প্রদানের ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে রেমিটেন্স প্রবাহকে বৃদ্ধি করার জন্য ২.৫% বোনাস দেয়া হচ্ছে।
খরচ কমানো
রেমিটেন্স প্রেরণের খরচ কমানোর জন্য সরকার কর্তৃক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠানোর ক্ষেত্রে এই সুবিধাটি প্রযোজ্য হবে।
হুন্ডি ব্যবস্থা বন্ধ
হুন্ডি ব্যবস্থার মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানো অবৈধ এবং এটি দেশের অর্থনীতির জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর। সে জন্য হুন্ডি ব্যবস্থা বন্ধ করার জন্য সরকার কর্তৃক কঠিন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বৈধ চ্যানেল ব্যবহারে উৎসাহিত করা
বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করে রেমিটেন্স পাঠানোর জন্য রেমিটেন্স যোদ্ধাদের সরকারিভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করে রেমিটেন্স পাঠালে প্রদেও অর্থের ওপর বেশি নিয়ন্ত্রণ থাকে ও বেশি সুবিধা পাওয়া পায়।
দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি
দক্ষ জনশক্তি বৃদ্ধি ও দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দক্ষ জনশক্তি প্রবাসে বেশি আয় করতে পারে এবং বেশি বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠাতে পারে।
প্রবাসীদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি
প্রবাসীদের উৎসাহিত করার জন্য ও তাদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য সরকার কর্তৃক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পদক্ষেপ গুলোর মধ্যে রয়েছে -
- প্রবাসীদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম
- প্রবাসীদের জন্য ওয়েবসাইট
- প্রবাসীদের জন্য নিয়মিত মিটিং
- প্রবাসীদের জন্য নিয়মিত কর্মশালার আয়োজন, ইত্যাদি।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন
দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সরকার কর্তৃক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হলে প্রবাসী ভাইরা দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন ফলে বেশি বেশি রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহিত হবেন।
রেমিটেন্স সম্পর্কে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা
রেমিটেন্স কি বা রেমিটেন্স কাকে বলে এ সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করবো রেমিটেন্স সম্পর্কে সাধারণ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা নিয়ে। দেশের অর্থনীতি চাকা সচল রাখতে রেমিটেন্সের গুরুত্ব অপরিসীম। সে জন্য রেমিটেন্স সম্পর্কে সাধারণ কিছু প্রশ্ন থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সাধারণ জিজ্ঞাসিত প্রশ্নগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো
রেমিট্যান্স অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান কততম?
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে ২০২১ সালে রেমিটেন্স অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম ও ২০২২ সালে অষ্টম।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আছে কোন দেশ থেকে?
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে সৌদি আরব থেকে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তৃতীয় অবস্থানে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
বাংলাদেশের কোন বিভাগে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে?
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে ঢাকা বিভাগ দ্বিতীয় অবস্থানে চট্টগ্রাম বিভাগ ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সিলেট বিভাগ।
উপসংহার
রেমিটেন্স কি বা রেমিটেন্স কাকে বলে এ সম্পর্কিত আলোচনায় আমরা রেমিটেন্স সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে জানতে পেরেছি। প্রবাসীদের অর্থনৈতিক অবদান ও রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বৃদ্ধির জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি প্রবাসী ভাইদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো একসাথে কাজ করে রেমিটেন্স পাঠানোর সুযোগ-সুবিধা আরো বাড়িয়ে রেমিটেন্স প্রবাহ আরো বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url