আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এ আর্টিকেলটি লেখা।ফলের রাজা আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা লেখার আগে আম সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা জানা দরকার। বাংলাদেশে নানা প্রজাতির ও নানা প্রকৃতির ফল আছে । এতগুলো ফলের মধ্যে থেকে আমাকে ফলের রাজা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে ।
আমের স্বাদ ,সুঘ্রান ,সৌন্দর্য ,প্রাচুর্যতা, সহজলভ্যতা ও পুষ্টিগুণ সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করেই আমকে ফলের রাজা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা অনেক। আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা জানার জন্য আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।চলুন আম সম্পর্কে কিছু কথা জেনে আসি।
সূচীপত্র
আমের ইতিহাস
ভারতীয় উপমহাদেশে আজ থেকে প্রায় ছয় থেকে সাড়ে ৬ হাজার বছর আগে আম চাষ শুরু হয় । তৎকালীন সময়ে অল্প কিছু প্রজাতির আম উৎপাদন হতো । কালের বিবর্তনে বছরের পর বছর ধরে এখন নানা প্রজাতির,নানা বর্ণের ও নানা প্রকৃতির আম উৎপাদন হচ্ছে।
ধীরে ধীরে এর ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই কম বেশি আম উৎপাদন হয়। মাটির উর্বরতা ও আবহাওয়া জনিত কারণে রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আম স্বাদে ও মানে অতুলনীয়।
আমের জাত বা প্রকারভেদ
আমাদের বাংলাদেশে ফলের রাজা আমের বিভিন্ন জাত বা প্রকারভেদ রয়েছে। জাত ভেদে এই আম গুলো দেখতে যেমন সুন্দর ও ভিন্ন ভিন্ন রকমের তেমনি খেতেও সুস্বাদু ও ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের। বলা যেতে পারে সব ধরণের আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা প্রায় একই রকমের। নিম্নে আমের প্রকারভেদ উল্লেখ করা হলো।
- ল্যাংড়া আম
- রানী পছন্দ আম
- গুটি আম বা আঁটি আম
- গোপাল ভোগ আম
- লক্ষনভোগ বা বারি-২ আম
- মহোনভোগ আম
আরও পড়ুনঃ আদর্শ চালকের কি কি গুণাবলী থাকা উচিত।
- আমরুপালি বা বারি-৩ আম
- ফজলি আম
- খেরসাপাত বা হিমসাগর আম
- হাড়ি ভাঙ্গা আম
- বারি-৪ আম
- কালুয়া আম
- রঙিন আম বা বারি-১৪ আম
- কাঁচা মিঠা আম
- সূর্যডিম আম
- আশ্বিনা আম
- বোম্বাই আম
- কাটিমোন আম
- কুয়াপাহাড়ি আম
- দিগলা আম
- গৌড়মতি আম
আমের পুষ্টিগুণ
আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে এবার আমরা দেখব যে আমের পুষ্টিগুণ কেমন? গ্রীষ্মকালীন অনেক গুলো ফলের মধ্যে সুমিষ্ট ও রসালো ফল আম অন্যতম। এই আম খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিতেও ভরপুর। প্রতি ১০০ গ্রাম আমে নিম্নোক্ত পরিমাণে বিভিন্ন খাদ্য উপাদান বা ভিটামিন গুলো পাওয়া যায়।
- ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় ১৪ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি পাওয়া যায় ১৬ মিলিগ্রাম
- ক্যারোটিন পাওয়া যায় ২৭৪০ মাইক্রোগ্রাম
- আয়রন পাওয়া যায় ১.৩ গ্রাম
- ফসফরাস পাওয়া যায় ১৬ মিলি গ্রাম
- ভিটামিন বি২ পাওয়া যায় ০.৯ মিলিগ্রাম
আরো পড়ুনঃ মিষ্টি আলুর পুষ্টিগুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।
- ভিটামিন বি১ পাওয়া যায় ০.০৮ মিলিগ্রাম
- প্রোটিন পাওয়া যায় ১ গ্রাম
- ফ্যাট পাওয়া যায় ০.৭ গ্রাম
- খনিজ লবণ পাওয়া যায় ০.৫ গ্রাম
- শ্বেতসার পাওয়া যায় ২০ গ্রাম
- ভিটামিন এ
- এন্ট্রিঅক্সিডেন্ট
- ভিটামিন বি৬
- এ্যামাইনো এসিড
- কপার
- পটাশিয়াম
- বিটাক্যারোটিন
- জিংক
এছাড়াও পাকা আমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্সসহ অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলস।
আমের উপকারিতা
আমের পুষ্টিগুন ও উপকারিতা শিরোনামে এবার আমরা আলোচনা করব আমের উপকারিতা গুলো সম্পর্কে। রসালো ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল আম মানবদেহে অনেক উপকার করে থাকে। কাঁচা-পাকা সব ধরনের আমই যথেষ্ট পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ। কাঁচা বা পাকা যেকোন আম খেলে কি ধরনের
পুষ্টি বা উপকারিতা পাওয়া যায় তা সকলেরই জানা থাকা দরকার। আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা জানার জন্য আমাদের সকলেরই পড়তে হবে। একটু সময় নিয়ে স্টাডি করলেই আপনারা জানতে পারবেন আমের উপকারিতা সম্পর্কে। এখন পর্যায়ক্রমে আমরা এই উপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানবো।
আম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
আম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আমে বিদ্যমান ভিটামিন সি, ভিটামিন কমপ্লেক্স, জিংক ও ক্যারটিনোইড আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে
আরো পড়ুনঃ মহররমের তাৎপর্য ও আশুরার মাহাত্ম্য এবং ১০ মহররমের ২০ ঘটনা।
এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের ফ্রি রেডিকেল গুলোকে রিমুভ করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন নিয়মিত আম খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও সংক্রামন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ত্বক ও চুল সুন্দর করে
ত্বক ও চুল সুন্দর করার জন্য আমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমে বিদ্যমান ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেনে ও মিনারেলস গুলো ত্বক ও চুল সুন্দর করে। এন্টিঅক্সিডেন্ট গুলো ত্বকের ফলিকলগুলোকে
ত্বরান্বিত করে ফলে ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। ত্বক মসৃণ, মলিন ও সুন্দর হয়। আমে বিদ্যমান এন্টঅক্সিডেন্ট ও অন্যান্য ভিটামিন চুলের পর্যাপ্ত পুষ্টি যোগায় ফলে চুল, ঘন, লম্বা ও সুন্দর হয়।
চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়
ওজন কমাতে সহায়তা করে
আরো পড়ুনঃ এডিস মশা ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয় কি?
হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে
হজম বৃদ্ধি করে ও এসিডিটি কমায়
ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করে
আরো পড়ুনঃ ঢেঁকি ডাটা চাল খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি?
স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
স্কার্ভি ও বেরিবেরি রোগ প্রতিরোধ করে
আমের রেসিপি
যে কেউ এই আমগুলো খেতে পারবেন। আমগুলো খেতে ও দেখতে সুন্দর। কাঁচা-পাকা আমের বিভিন্ন রকমের রেসিপি তৈরি খাওয়া হয়ে থাকে। রেসিপিগুলো নিম্নরুপ।
- কাঁচা আমের তরকারি রান্না করে খাওয়া যায়
- কাঁচা আম খাওয়া যায়
- আমের আচার বানানো যায়
- কাঁচা আমের আমতা বানানো যায়
- পাকা আমের আমতা বানানো যায়
- আমের আসত্ত্ব বানানো
- পাকা আমের জুস বানিয়ে খাওয়া যায়
আমের টক-ঝাল-মিষ্টি আচার খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু যা সবাইকে খাবারের রুচি বাড়িয়ে দেয় ।
আম কোথায় পাওয়া যায়
আমাদের বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই আম পাওয়া যায়। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় আমের অনেক বড় বড় পাইকারি বাজার আছে। যেখান থেকে আপনি সহজে আমগুলো স্বল্পমূল্যে কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহজেই পাঠাতে পারবেন।.এখন চলছে আমের পাড়ার মৌসুম । বৈশাখ মাস থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত যে কেউ যে কোন ধরনের সুস্বাদু আম পাবেন এই বাজার গুলোতে।
পরিশেষ
আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এ আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা পুরোপুরি জানতে পেরেছেন। কাঁচা-পাকা আম অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও উপকারি। আমে পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা তো আছেই পাশাপাশি আম বিক্রি করে আম চাষী ভায়েরা প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারেন। কথায় বলে রাজশাহীতে এলাম যদি আমিই না খেলাম তাহলে কি করলাম জীবনে !
সকলের উচিত বেশি বেশি আম গাছ লাগানো ও আমের চাষ করা । বেশি বেশি আম উৎপাদন করুন, খেয়ে পরে স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করুন । এই আমগুলো একসময় দেশীয় চাহিদা পূরণের পরে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে আমার বিশ্বাস। এরকম আরো নতুন নতুন আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ সবাইকে।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url