বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম সম্পর্কে আমার কোন ধারণাই ছিল না। এই বিটরুট সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি এক সবজি বিক্রেতার কাছ থেকে। একদিন কাঁচা তরকারি বা সবজি বাজারে গিয়ে সবজি কেনার সময় দেখলাম দোকানে আমার অজানা লাল টুকটুকে ড্রাগন ফলের মতো কি যেন খুব সুন্দর করে সাজানো আছে। আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনি ধৈর্য সহকারে পুরোপুরি পড়েন তাহলে বিটরুট বা বিট সম্পর্কে সবকিছু বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আমি অত্যন্ত কৌতূহল ভরে সবজি বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই ওগুলো কি ড্রাগন ফল নাকি অন্য কিছু? সব্জি বিক্রেতা আমাকে একটু মুচকি হাঁসি দিয়ে বললেন এগুলো এক ধরনের সবজি। দেখতে লাল টুকটুকে অপরূপ সুন্দর হোলেও এটা কোন ফল না। এটা এমন একটা পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সব্জি যা কিনা বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। সবজি বিক্রেতা এই আলাপ করতে করতে একটা বিটরুট আমাকে ছিলিয়ে দিলেন। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেয়ে নিলাম। সত্যিই সুন্দর ও সুস্বাদু।
বিটরুট সম্পর্কে যা পড়বেন
বিটরুট কাকে বলে বা পরিচিতি
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম জানার আগে জানা দরকার এর পরিচিতি সম্পর্কে। বিটরুট এক ধরনের সবজি। বিটরুট শীতকালীন এক ধরনের সবজি যা এখন প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। দেখতে লাল টুকটুকে আবার কখনো গাঢ় বেগুনী বর্ণের হয়ে থাকে। কিছুটা ড্রাগন ফলের মত। এই সবজিটি মাটির নিচে হয়।
এই ফলটির নিচের অংশে লম্বা মূল থাকে ও মাটির উপরে অংশে লাল সবুজ রঙের পাতা থাকে। পাতাগুলো দেখতে অনেকটা মুলার পাতার মতো। গঠন অনেকটা শালগম এর মতো। পরিপক্ক বিটরুট দেখতে ক্রিকেট খেলার লাল ডিউজ বলের মত হয়। অনেকেই এই সবজিকে বিট নামে চিনেন।
বিটরুটে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম এই আলোচনায় এখন আমরা জানবো বিটরুটের পুষ্টিমান সম্পর্কে। বিটরুট নামের এই সবজিটি দেখতে যেমন লাল টুকটুকে তেমনি খেতেও সুস্বাদু। লাল টুকটুকে বিটরুট নামের এই সবজিটিতে রয়েছে আমাদের শারীরিক গঠনের উপযোগী বিভিন্ন পুষ্টি উপকরণ, ভিটামিন,খনিজ ও মেনারিলস।
আরো পড়ুনঃ পুঁইশাকের পুষ্টিগুণ উপকারিতা।
পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বিটরুটে আরো রয়েছে জিংক, আয়োডিন,ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ,ফাইবার ও এন্টিঅক্সিডেন্ট। বিভিন্ন পুষ্টিমান ও ঔষধিগুন সম্পন্ন হওয়ায় বিটরুট নামে খ্যাত এই সবজিটিকে সুপার ফুড বলে অবহিত করা হয়েছে।
এখন আমরা আলোচনা করব বিটরুটে কি পরিমানে এই পুষ্টি উপাদান গুলো বিদ্যমান থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম বিটরুটে নিম্নোক্ত পরিমাণে ও শতকরা ভাগে পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। বিভিন্ন পুষ্টিমান ও ঔষধিগুন সম্পন্ন হওয়ায় বিটরুট নামে খ্যাত এই সবজিটিকে সুপার ফুড বলে অবহিত করা হয়েছে।
- ক্যালরি ৪৩ গ্রাম
- ফ্যাট ০.২ গ্রাম
- স্টার্চ ফ্যাট ০ গ্রাম
- কোলেস্টেরল ০ গ্রাম
- সোডিয়াম ৭৮ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম ৩২৫ মিলিগ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ১০ গ্রাম
- ডায়াটারি ফাইবার ২.৮ গ্রাম
- সুগার ৭ গ্রাম
- প্রোটিন ১.৬ গ্রাম
- ভিটামিন সি শতকরা ৮ ভাগ
- আয়রন শতকরা ৪ ভাগ
- ম্যাগনেসিয়াম শতকরা ৫ ভাগ
- ক্যালসিয়াম শতকরা ১ ভাগ
- ভিটামিন ডি৩ শতকরা ০ ভাগ
- ভিটামিন বি৬ শতকরা ৫ ভাগ
এই পার্সেন্টেজ বা শতকরা ভাগগুলো ২০০০ ক্যালরি ডায়েট প্রয়োজন হিসেবে বের করা হয়েছে যা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের চাহিদার উপর নির্ভর করে শতকরা ভাগ গুলো কম বেশি হতে পারে।
রিপোর্ট : ইউএসডিএ
কোথায় পাওয়া যায় বিটরুট
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম সম্পর্কিত আলোচনা এখন আলোচনা করব কোথায় পাওয়া যায় সে সম্পর্কে। বিটরুট অনেক আগে থেকেই বিশ্বের অন্যান্য দেশে সবজি হিসেবে বেশ প্রচলিত আছে। বিশেষ করে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ,উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রসহ অন্যান্য প্রদেশে। অল্প কিছুদিন থেকে আমাদের দেশে বিটরুটের চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ গাজরের পুষ্টিকুল ও উপকারিতা।
বড় বড় সবজি বাজার গুলোতে বিটরুট বা বিট কিনতে পাওয়া যায়। বর্তমানে বড় বড় সুপার শপ গুলোতেও বিটরুট পাওয়া যাচ্ছে। এই সবজিটি কেজি দরে বাজারে বিক্রি করা হয়ে থেকে। ধারণা করা হয় অনেক বছর আগে থেকেই এই সবজিগুলো ইউরোপের দেশগুলোতে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে আছে। ধীরে ধীরে আমাদের বাংলাদেশেও এই সবজির জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
বিটরুটের মূল্য বা দাম কেমন
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আলোচনা করব বিটরুটের দাম বা মূল্য সম্পর্কে। বিটরুট বা বিট নামের এই সবজি দেখতে অনেক সুন্দর হওয়ায় খাবারের পাশাপাশি এগুলো পরিবেশের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। এই সবজিগুলোর উৎপাদন শীতকালে বেশি হয় যেহেতু এটা একটা শীতকালীন কাঁচা সবজি বা ফসল।
এই সবজির উৎপাদন বা আমদানির উপর নির্ভর করে এর দামের তারতম্য হতে পারে। আবার বড় সাইজের বিটের মূল্য ছোট সাইজের বিটের চেয়ে একটু বেশি হয়। শীতকালে বাজারে বিটরুট ১৩০ টাকা থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় আর অন্য মৌসুমে ১৮০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়ে থাকে।
বিটরুট খাওয়ার নিয়ম বা কিভাবে খাবেন বিটরুট
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম এ সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আলোচনা করব বিটরুট খাওয়ার নিয়ম বা কিভাবে খাবেন বিটরুট সে সম্পর্কে। বিটরুট নামের গাঢ় বেগুনি বা গোলাপি কিম্বা লাল বর্ণের সবজিটি দেখতে অনেক সুন্দর ও খেতে সুস্বাদু হলেও আমাদের দেশে এখনও এর ব্যাপক পরিচিতি বা প্রচলন শুরু হয়নি।
এই সবজিটি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। সুপার ফুড নামে পরিচিত এই সবজিটি সালাদ বানিয়ে কাঁচা খাওয়া যায়, অন্য সবজির সাথে রান্না করে খাওয়া যায় আবার অন্যান্য ফলের সাথে ইয়ামী ইয়ামী সব মজাদার জুস বা স্মুদি বা সেখ বা শরবত বানিয়েও খাওয়া যায়। নিম্নে বিটরুট খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম গুলো আলোচনা করা হলো।
সালাত বানিয়ে খাওয়া যায় বিটরুট
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম আলোচনার এখন জানব সালাত বানিয়ে খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। বিটরুটের পুষ্টিমান ও ঔষধিগুণের কারণে দিনে দিনে এর জনপ্রিয়তা বাড়বে। সুপার ফুড নামে পরিচিত এই সবজিটি চিকন করে কেটে তার সাথে, কাঁচা মরিচ, লবন ও সামান্য পরিমাণ টক দই
আরো পড়ুনঃ মধুর পুষ্টিগুণ খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা।
সাথে অল্প পরিমাণে গাজর ও শসা কেটে মিশিয়ে মাখিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে গেলো মজাদার সালাদ। বিটের এই সালাত ভাতের সাথেও খেতে পারেন আবার এমনিতেও খেতে পারেন। শুধু বিটের সালাদ বানিয়েও খাওয়া যায়।উল্লেখ্য যে বিটরুট কাঁচা খেলে বেশি ভিটামিন পাওয়া যায়।
তরকারি বা সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়
বিটরুট অন্যান্য তরকারি বা সবজির মতো রান্না করেও খাওয়া যায়। ভালো করে ধুয়ে নিয়ে তরকারি হিসেবে কাটাকাটি করা ভালো। তরকারি হিসেবে কাটাকাটি করার পরে বেশি ধোয়া উচিত না। বিটের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকে যা পানিতে দ্রবনীও।
পানিতে দ্রণীয় এই ভিটামিনগুলো চলে যেতে পারে। এই সবজিটি রান্নার সময় বেশি ফুটানোও উচিৎ নয়। বিট বেশি ফুটলে বা সিদ্ধ করলে এর পুষ্টি মাল কমে যেতে পারে। মাছ - মাংসের সাথে বিট আলুর মতো রান্না করেও খাওয়া যায়। পুষ্টিমানের কারণে সবারই বিট খাওয়া উচিত।
মজাদার জুস বা সরবত বানিয়ে খাওয়া যায় বিটরুট
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম সম্পর্কে বলতে গিয়ে আগেই বলেছি এর মজাদার সব খাবারের কথা। এই বিট দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ইয়ামী ইয়ামী মজাদার সব জুস তৈরি করা যায়। এগুলো দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি খেতেও খুবই সুস্বাদু। আসুন আমরা এবার জুসের প্রস্তুত প্রণালী সম্পর্কে জেনে নিব। জুসের প্রস্তুত প্রণালী সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো।
বিটের জুস সাথে গাজর
বিটের জুস তৈরির প্রস্তুত প্রণালী প্রায় সবই একই রকমের। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর উপাদানের পার্থক্য থাকার কারণে কিছুটা আলাদা হয়। আমরা প্রথমেই দেখব বিটের সাথে গাজরের জুস কিভাবে বানাতে হয়। বিট-গাজরের জুস তৈরির জন্য আমাদের প্রথমেই নিতে হবে
- পরিমাণ মতো বিট,
- পরিমাণ মতো গাজর,
- কয়েকটি পুদিনা পাতা,
- পরিমাণ মতো পানি,
- প্রয়োজন মতো কাঁচা মরিচ,
- প্রয়োজন মতো বিট লবণ বা লবন,
- লেবুর রস।
প্রথমেই বিট, গাজর, কাঁচা মরিচ ও পুদিনা পাতা ব্লেন্ড করে নিতে হবে এরপরে পরিমাণ মতো পানি, লবন ও লেবুর রস সাথে শীতল ভাব আনার জন্য এক খণ্ড বরফ মিশালেই তৈরি হয়ে গেল ইয়ামী বিট-গাজর জুস। এবার খেয়ে নিন, দেখবেন মজাটাই আলাদা।
বিটের জুস সাথে ডালিম
বিটরুট ও ডালিমের জুস তৈরি করা বিষয়টা খুবই সিম্পল। আগের আলোচনা পড়েই আপনারা বুঝে গেছেন যে কিভাবে বিট-ডালিম জুস তৈরি করতে হবে। এই জুস তৈরি করার জন্য আমাদের প্রথমেই নিতে হবে
- পরিমাণ মতো বিট,
- পরিমাণ মত ডালিমের দানা,
- অল্প পরিমাণের লবণ,
- পরিমাণ মতো পানি,
- প্রয়োজনে একটু চিনি,
প্রথমে বিট ও ডালিমের দানা গুলো একসাথে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ব্লেন্ড করা হয়ে গেলে পরিমাণ মত পানি, একটু লবণ ও প্রয়োজনে একটু চিনি মিশিয়ে নিতে পারেন। জুসটিকে তৃপ্তিদায়ক শীতল করার জন্য একটু বরফ মিশালেই তৈরি হয়ে গেল সুস্বাদু ও পুষ্টিকর বিট-ডালিম জুস। এবার খেয়ে নিন পরিবারের সকলে মিলে বিট-ডালিমের পুষ্টিকর জুস।
বিটের জুস সাথে টমেটো
বিট ও টমেটোর টক টক জুস কিভাবে বানানো যায় এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করব। বিট-টমেটোর টক টক জুস তৈরি করার জন্য আমাদের যে উপকরণ গুলো প্রয়োজন সেগুলো হলো
- পরিমাণ মতো বি্
- পরিমান মত টমেটো,
- পরিমাণ পানি,
- পরিমাণ মতো লবণ বা বিট লবণ,
- পরিমাণ মত লেবুর রস,
- দু-একটি কাঁচা মরিচ,
- প্রয়োজনে ধনে পাতা,
এই জুস তৈরি করার জন্য শুরুতে বিট ও টমেটো সাথে মরিচ ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ব্লেন্ড করা হয়ে গেলে এর সাথে প্রয়োজনমত লবণ, পরিমাণ মতো লেবুর রস ও পানি, সাথে জুসকে শীতল করার জন্য এক খন্ড বরফ মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে গেল টেষ্টি ও তৃপ্তিদায়ক বিট-টমেটোর টক টক জুস। এবার খেয়ে নিন এক গ্লাস, সতেজ হবে মন-প্রাণ।
বিটরুট ও কলার স্মুদি
বিটরুট ও কলার স্মুদি বা সেক বানিয়েও বিট খাওয়া যেতে পারে। এই স্মুদি বা সেক তৈরি করার জন্য আমাদেরকে নিতে হবে
- পরিমাণ মতো বি্
- পরিমাণ মতো কলা,
- পরিমাণ মতো দু্ধ,
- পরিমাণ মতো মাখন,
- একটু চিনি,
প্রথমে বিট ও কলা একসাথে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ব্লেন্ড করা হয়ে গেলে এর সাথে দুধ, মাখন ও চিনি মিশ্রিত করলেই তৈরি তৈরি হয়ে গেল সকলের পছন্দের স্মুদি বা সেক। আপনার মন-প্রাণকে সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখতে প্রতিদিন পান করুন এই স্মুদি বা সেক।
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। বিটরুট নামের এই সবজিটি দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও তেমনি সুস্বাদু। এই সবজিটির পুষ্টিমানের পাশাপাশি রয়েছে অনেক ঔষধিগুণ। যার কারণে এই সবজিটির কদর দিনে দিনে বাড়ছে।
নিম্নে আমরা এই বিটরুট সবজি খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। সুস্বাদু ও লোভনীয় এই সবজিটি বিভিন্ন উপায়ে আমাদের মানব শরীরে উপকার করে থাকে। কখনো পুষ্টিগুণের কারণে ,কখনো ঔষধিগুনের কারনে আবার কখনো কখনো মন-প্রাণকে সতেজ করার মাধ্যমে উপকার করে থাকে।
বিটরুট ইমিউনিটি সিস্টেম ডেভেলপ করে বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
বিটরুট আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণায় দেখা গেছে বিটরুটে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা আমাদের রক্তের শ্বেত রক্ত কণিকা উৎপাদন ও স্ট্রেনাদেন করার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
বিটে বিদ্যমান ভিটামিন সি আমাদের সর্দি-জ্বর,হাঁচি,কাশি ও সংক্রমণ এগুলো নিরাময়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। সেজন্য সকলের নিয়মিত বিট খাওয়া উচিত।
বিটরুট হাই ব্লাড প্রেসার কন্ট্রোল করে বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
বিটরুট নিয়মিত খেলে হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিটরুটে রয়েছে নাইট্রেট যা খাওয়ার পরে মানব শরীরে গিয়ে নাইটিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়। আমাদের ব্লাড ভেসেল বা রক্তনালীকে ডায়লেট বা প্রসারণ করে।
ফলে রক্ত চলাচল সহজ হয় রক্তের উচ্চচাপে কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে বিশেষ করে যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তারা নিয়মিত বিটরুট খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
চোখের যত্নে বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা
বিটরুট এমন একটা সবজি যা বিভিন্ন পুষ্টিগুনে ভরপুর।বিটে রয়েছে চোখের উপকারি ভিটামিন এ, লুটেইন, বিটাক্যারোটিন, এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিক্যালের মতো আই ফ্রেন্ডলি উপাদানসমূহ।এই পুষ্টি উপাদানগুলো চোখের ছানি জনিত সমস্যা, দৃষ্টিতে সমস্যা বা স্নায়বিক সমস্যা দূর করে।
চোখের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। বিটের এন্টিঅক্সিডেন্ট চোখের ফ্রিরেডিকেলগুলোকে মুক্ত করে চোখের ইনফেকশন বা প্রদাহ বন্ধ করে দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। বিটে বিদ্যমান ফাইটিকেমিক্যাল গুলো চোখের চারপাশের টিস্যু বা স্নায়ু শক্তি বৃদ্ধি করে দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে।
রূপচর্চায় ও ত্বকের যত্নে বিটরুটের ব্যবহার
বিটরুট অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি সবজি। এতক্ষণ আমরা বিটের সবজি হিসেবে খাবারের গুনাগুন সম্পর্কে আলোচনা করেছে। এই খাবারের পাশাপাশি মুখে , ব্রণে, ত্বকে ও চুলে ব্যবহার করলে মুখ, ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। নিম্নোক্ত উপায়ে বিট মুখে, ত্বকে ও ব্রণে ব্যবহার করা যায়। এখন বিটের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করব।
আরো পড়ুনঃ গর্ভে বাচ্চার সুস্থতা ও ত্রুটি কিভাবে বুঝবেন।
- বিটরুট বেটে মুখে ও গলায় লাগিয়ে পনের বিশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন, নিয়মিত ব্যবহার করলে মুখ ও গলার রং উজ্জ্বল হয়।
- বিটরুট বেটে সাথে একটু চিনি মিশিয়ে নিয়মিত ঠোঁটে ব্যবহার করলে ঠোঁটের কালচে ভাব দূর হয়।
- দুধ,মধু ও বিটের রস একসাথে মিশিয়ে মুখের ডার্ক সেল বা ব্রণের উপরে লাগিয়ে 15-20 মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে ডার্ক সেল বা ব্রণের দাগ ভালো হয়।
- বিটে বিদ্যমান এন্টিঅক্সিডেন্ট গুলো অকালে ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
- বিটের রস বলী রেখার উপর ব্যবহার করলে বলিরেখা দূর করে ত্বকের উপর একটা ন্যাচারাল আভা তৈরি করে যাতে করে ত্বক দেখতে সুন্দর ও উজ্জ্বল হয়।
চুলের যত্নে বিটরুট খাওয়ার ও ব্যবহারের উপকারিতা
বিটরুট চুলের যন্ত্রে অনেক কার্যকরী। বিটরুটে বিদ্যবান বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যেমন ভিটামিন সি, আয়রণ, ফোলেট ও এন্ট্রিঅক্সিডেন্ট এগুলো চুলকে করে ঘন, কালো, লম্বা, স্বাস্থ্যজ্জ্বোল। এ খাদ্য উপাদান ও প্রোটিন চুল ঝরে পড়া রোধ করে।
এছাড়াও বিটরুটে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো ফ্রীরেডিকেল মুক্ত করে মাথার ত্বক কে খুশকি মুক্ত করে ও ফলিকুলগুলোক সুরক্ষিত করে ফলে নতুন চুল গলায়, চুলের গোড়া থেকে ভেঙ্গে যাওয়া রোধ হয় ও চুল পড়া বন্ধ হয়।
আরো পড়ুনঃ অ্যালোভেরার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম।
- খুশকি মুক্ত চুলের জন্য বিটের রস সাথে নিমের রস ও ভিনেগার মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করতে পারেন।
- বিটরুট খাওয়ার পাশাপাশি বিটের রস কফির গুঁড়ার সাথে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় কিছুক্ষন সময় লাগিয়ে রেখে পরিষ্কার পানি ধুয়ে ফেলুন এতে করে চুল পড়া কমে যায়।
- চুলের রুক্ষতা ও জট পাকানো এই সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা নারিকেলের তেল ব্যবহারের পরে বিটের রস ব্যবহার করে আধা ঘন্টা পরে শ্যাম্পু ও পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে দু-একদিন কয়েক সপ্তাহ নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের রুক্ষতা কমে, জট পাকানো বন্ধ হয়।
বিটরুট ওজন কমায়
বিটরুট ওজন কমাতে সহায়তা করে। বিটে বিদ্যমান উচ্চ ফাইবার ও কম ক্যালোরির কারণে এটিকে ওজন নিয়ন্ত্রণের ডায়েট হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে। এই ফাইবার গুলো সব সময় আমাদের পেট পরিপূর্ণ আছে এমন অনুভূতি বাড়ায় ও খাওয়ার অনুভূতি কমায়।
আরো পড়ুনঃ দ্রুত ওজন কমানোর ১০ টি সহজ উপায়।
ফলে বেশি বেশি খাবার সম্ভাবনা কম থাকে এবং ওজন কমে।এছাড়া নাইট্রেটগুলো নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়ে শরীরের ক্রিয়া-কলাপ বা ব্যায়াম করার কার্যক্ষমতা বাড়ায় যা আমাদের শরীরে জমে থাকা ফ্যাট পুড়িয়ে ক্যালোরি খরচ করতে সক্ষম ফলে শারীরিক ওজন হ্রাস করে বা কমে যায়।
বিটরুট স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
বিটরুট সবজি হিসেবে খেলে বহুবিধ উপকারীতার মধ্যে আরও একটি উপকার হলো এটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় ও স্মরণশক্তি বাড়ায়। বিটে বিদ্যমান নাইট্রেট ব্লাড ভেসেল প্রসারিত করার মাধ্যমে ব্রেনের সার্কুলেশন বৃদ্ধি করে এটিপি ও অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়।
ফলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও বিটে বিদ্যমান এন্টিঅক্সিডেন্ট গুলো বডিতে বিদ্যমান ফ্রিরেডিকেল গুলোকে বাধা দেয় তাতে করে ছাত্র জীবনে ও বয়:বৃদ্ধির সাথে সাথে জ্ঞানীয়পতন বা বুদ্ধিমত্তার বিকাশ পতন বোধ হয়। প্রতিদিন বিটরুট খান স্মরণ শক্তি বাড়ান।
বিটরুট হজম শক্তি বাড়ায়
বিটরুট একটা সবজি হলেও এর কার্যকারিতা সুপারম্যান এর মত ! বি সবজিটি ফাইবারে পরিপূর্ণ। এই ফাইবারগুলো আমাদের পরিপাকতন্ত্রের ক্রিয়াকলাপকে ত্বরান্বিত করে। যার কারণে খুব ভালো মতো খাদ্য হজম হয়।
এছাড়ও বিটের রস খাদ্য হজমকারী এনজাইমগুলোর সিক্রেশন ত্বরান্বিত করে। এজন্যই বিট সবজি খেলে খুব তাড়াতাড়ি খাদ্য হজম হয় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই সুপারফুড খ্যাত বিট সবজি থাকা উচিত।
মাসিকের সমস্যা দূরীকরণে বিটরুট
বিটরুটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা আমাদের রক্তশূন্যতা দুর করে ও রক্ত বাড়ায়। পাশাপাশি যে সমস্ত মেয়েদের রক্তস্বল্পতার কারণে ঋতু চক্র বা মাসিক ঠিকমতো না হওয়ার কারনে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে আয়রন ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল খেয়ে থাকেন।
তারা নিয়মিত উক্ত ঔষধের সাথে বিট খেলে রক্তস্বল্পতা কমে যাবে ও ঋতু চক্র নিয়মিত হবে। রক্তশূন্যতা দূরীকরণে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বিট সবজি রাখুন।
বিটরুট শরীরের টক্সিন রিমুভ করে
বিটরুট এমনই একটা সবজি যার মধ্যে বেটালাইন নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে। বেটালাইন পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ানোর মাধ্যমে খাদ্য হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে ও লিভারের কার্যকারিতা বাড়ানোর মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে টক্সিন জাতীয় পদার্থগুলোকে
রেচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দিতে সহায়তা করে। এতে করে আমাদের শরীর বিষক্রিয়া বা টক্সিন মুক্ত থাকে ও শরীর পরিষ্কার হয়। এইটা বিটের একটি ডিটক্সিফাই কার্যক্ষমতা। তাই শরীরকে পরিষ্কার রাখতে ও টক্সিনমুক্ত করতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বিটরুট থাকা উচিত।
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা
বিটরুট একটি সবজি জাতীয় খাদ্য হলেও এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ,ক্যালসিয়াম, জিংক, এন্ট্রিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি। বিট গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় খাদ্য। তাই কোন গর্ভবতী মা যদি প্রতিনিয়ত পরিমান মত বিট খান তাহলে তার রক্তশূন্যতা কমতে পারে, ক্যালসিয়ামের ঘাটতিপূর্ণ হতে পারে,
যাদের সতর্কতার সহিত বিটরুট খেতে হবে
বিটরুট অত্যন্ত পুষ্টিগুন ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি সবজি যা খেলে আমাদের বেশিরভাগই উপকার হয়। তবে এই সুপারফুড খ্যাত ওষুধিগুণ সম্পন্ন খাবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সতর্কতা গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো
- যে সমস্ত ভাই-বোনদের লো ব্লাড প্রেসার আছে তাদের না খাওয়াই ভালো। বিটরুট খেলে অনেক সময় ব্লাড প্রেসার ফল করে।
- যাদের ডায়াবেটিকস আছে তাদের না খাওয়া উচিত। উচ্চ মাত্রায় সুগার থাকে যা গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ইনক্রিজ করে। এতে করে ডায়াবেটিস বেড়ে যায়।
- যাদের কিডনিতে বা গলব্লাডারে স্টোন বা পাথর আছে তাদের বিট খাওয়া উচিত হবে না। বিটের ক্যালসিয়াম অক্সালেট স্টোনের আকৃতি ও পরিমাণ বাড়াতে থাকে।
- বিটরুট খেলে অনেক সময় এলার্জি বেড়ে যেতে পারে। যাদের স্কিনে অ্যালার্জি আছে সে সমস্ত লোকদের ভেবে চিন্তে খাওয়া উচিত বা খাওয়া উচিত না।
বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ সবাই খেতে পারবে বিটরুট
বিট পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি সবজি। এই সবজি খেতে বয়সের কোন তারতম্য বা ভেদাভেদ নেই। সকল বয়সের বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ অথাৎ আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাই খেতে পারবেন এই বিটরুট সবজিটি।
বাচ্চা ও বৃদ্ধদের পরিমাণে কম খাওয়াই শ্রেয়।খেতে কারো কোন সমস্যা দেখা দিলে না খাওয়াই ভালো। কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। তাই পরিমাণমত বিটরুট সবাই খান সুস্থ থাকুন।
উপসংহার
বিটরুটের বহুবিধ পুষ্টিগুণ ও ঔষধিমানের জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বিটরুট রাখা দরকার। আপনার পরিবারের খাদ্য তালিকায় বিটরুট সংযোগ করার মানেই হলো আপনি আপনার পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এক ধাপ এগিয়ে গেলেন। নিয়ম করে বিট খেলে আপনার প্রতিদিনের ভিটামিনের অভাব কিছুটা হলেও পূরণ হবে।
আজকের এই লেখাগুলো পড়ে এতক্ষনে আপনারা নিশ্চয় জেনে গেছেন, বিটরুটের উপকারিতা, খাবার নিয়ম, কাদের খাওয়া উচিত, কাদের খাওয়া উচিত নয়। এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনারা বিটরুট সম্পর্কে অবগত বা উপকৃত হন তাহলে আমি আমার এই লেখাটাকে সার্থক বলে মনে করব। পরিশেষে বলতে চাই পাশে থাকা বেল আইকনটি চেপে পোস্টটি শেয়ার করে দিবেন।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url