ডুমুরের পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতা

ডুমুরের পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলটি লেখা। আমরা কম বেশি সকলেই ডুমুর খাই কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই জানিনা এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে। এই ফলের গাছ এমন একটি গাছ যার প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মানব কল্যাণে কাজে লাগে। এই ফলের বহুবিধ পুষ্টিগুণ ও ভেষজগুণের কারণে দিনে দিনে এর কদর বাড়ছে।

ডুমুরের পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতা

ডুমুরের গাছগুলো সাধারণত অযত্ন অবহেলায় বেড়ে উঠতে দেখতে পাওয়া যায় গ্রামের ঝোপে জঙ্গলে। আমাদের বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই ডুমুর গাছ দেখতে পাওয়া যায় এর মধ্যে বেশি দেখা যায় রাজশাহী, নাটোর, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মৌলভীবাজার, টাংগাইল, সিলেট জেলাতে।  পুষ্টিবিজ্ঞানীরা জানান এটি প্রাকৃতিক এক অসাধারণ ফল। পুষ্টিগুণ ও ভেষজগুণের জন্য ডুমুরকে পুষ্টির 'স্টোর হাউজ' হয়।

সূচীপত্র 

ডুমুরের পরিচিতি

ডুমুরের পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানার আগে ফলটির পরিচিতি সম্পর্কে জানা দরকার। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে ডুমুরের বেশ কয়টি প্রজাতি রয়েছে। ডুমুরের ইংরেজি নাম Fig ( ফিগ) , বৈজ্ঞানিক নাম Ficus carica ও Ficus hispida. অঞ্চল ভেদে এ ফলের বিভিন্ন নাম রয়েছে। কোন কোন এলাকায় ফলটিকে যজ্ঞ বা যগই, কাক ডুমুর, গোল ডুমুর আবার কোন কোন এলাকায় আনজির বলা হয়।

আরো পড়ুনঃ সজনে পাতার উপকারিতা গুলো কি কি।

ডুমুরের গাছ ১৫ থেকে ২০ ফিট পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। এই গাছের কান্ড, শাখা-প্রশাখা ও পাতা খসখসে হয়ে থাকে। ডুমুর ফল থোকায় থোকায় শাখা-প্রশাখা ও কান্ডে ধরে থাকে। এই ফলগুলো কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পাকলে লাল, কোন কোন ক্ষেত্রে কালচে ও খয়েরী রং এর হয়ে থাকে। ডুমুর কাঁচা, পাকা, শুকনো ও সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। ডুমুর খেতে নরম ও সুস্বাদু।

ডুমুরের পুষ্টিগুণ

ডুমুরের পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতা পর্যালোচনা করতে গিয়ে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা জানান এটি প্রাকৃতিক এক অসাধারণ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল যা অত্যন্ত উপকারী। এফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিগুণ ও ভেষজগুণ রয়েছে।

উক্ত পুষ্টিবিদ আরো জানান ডুমুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, শর্করা, খাদ্যশক্তি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও আয়রন  যেগুলো মানব স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।

আরো পড়ুনঃ নিমপাতা ব্যবহারের উপকারিতা গুলো কি কি।

পুষ্টিবিজ্ঞানীদের বিভিন্ন গবেষণালব্ধ ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ১০০ গ্রাম ডুমুরে নিম্নোক্ত পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে। পুষ্টি উপাদানের পরিমাণগুলো চার্ট আকারে প্রদান করা হলো।

উপাদানের নাম

পরিমাণ

ক্যালরি

৩৭ কিলোক্যালরি

ক্যারোটিন

১২৬ মাইক্রোগ্রাম

জলীয় অংশ

৮৮.১ গ্রাম

খনিজ পদার্থ

০.৬

আঁশ বা ফাইবার

২.২

আমিষ

১.৩

চর্বি বা ফ্যাট

০.২

শর্করা

৭.৬

ক্যালসিয়াম

৮০ মাইক্রোগ্রাম

আয়রণ

১.১ মিলিগ্রাম

ক্যারোটিন

১৬২ মিলিগ্রাম

ভিটামিন বি১

০.০৬ মিলিগ্রাম

ভিটামিন বি২

০.০৫ মিলিগ্রাম

ভিটামিন সি

৫ মিলিগ্রাম

জিংক

 

এন্ট্রিঅক্সিডেন্ট 

 

সূত্র: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৌলভীবাজার।

ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা

ডুমুরের পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতার এবং ভেষজগুণের জন্য বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় আদিমকাল থেকেই ডুমুরের পাতা, পাকা ফল, কাঁচা ফল, গাছের বাকল, নির্যাস, মূল ইত্যাদি ফলপ্রসূ ভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। ডুমুরের পাতা পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা

মাগুর মাছ, শিং মাছ বা জিয়ল  মাছ পরিষ্কার করার জন্য এই পাতা ব্যবহার লক্ষ্য করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে পুষ্টিমান ও ভেষজগুণ সম্পন্ন ডুমুর মানব দেহের জন্য নানাবিধ উপকারিতা রয়েছে। ভেষজগুণ সম্পন্ন ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা গুলো পর্যাক্রমে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

ডুমুর খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে 

ডুমুরের পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতা এখানে পড়ুন। ডুমুর খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, কারণ এতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন,ক্যারোটিন লিংক, মিনারেলস ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধী পুষ্টি উপাদান। নিয়মিত ডুমুর খেলে টিউমার বা অন্যান্য অস্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।

আরো পড়ুনঃ কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও সতর্কতা গুলো কি কি।

প্রতিনিয়ত পরিমান মত ডুমুর খেল ডাব্লুবিসি বা হোয়াইট ব্লাড সেল কে স্ট্রেন্থদেন করে ও দেহের  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সতেজ ও শুকনো ডুমুর খেলেও পেশি মজবুত হয় । নিয়মিত ডুমুর খান দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ড়ুমুর

ডুমুরের পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতা গুলোর অন্যতম হলো কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য ডুমুর অতুলনীয় খাদ্য। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকে যা সহজেই খাদ্য - খানা হজমে সহায়তা করে ও বাউল মুভমেন্ট ঠিক রাখে। যার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এছাড়াও  ডায়রিয়াসহ পেটের অন্যান্য সমস্যা দূর করে। নিয়মিত ডুমুর খান পেট পরিষ্কার রাখুন।

যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

ডুমুরের পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতা এখানে পড়ুন। যৌন ক্ষমতা ধরে রাখতে ডুমুরের গুনাগুন ব্যাপক। বিশেষ উপায়ে ডুমুর খেলে যৌন মিলনে পাবের বাড়তি আনন্দ। যৌনতাকে ধরে রাখার জন্য সহধর্মীনিকেও খাওয়াতে পারেন এই ফল। 

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ।

যৌনতাকে তুঙ্গে রাখার জন্য প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি শুকনো ডুমুর দুধে ভিজিয়ে খেতে হবে। এভাবে নিয়মিত কিছুদিন খেলে পুরুষত্বহীনতা দূর হবে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, আর আপনি হবেন মহাপুরুষ।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ডুমুর। রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো সোডিয়াম। ডুমুরে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম যা রক্তে সোডিয়ামের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রক্তের চাপ ঠিক রাখে। নিয়মিত প্রতিদিন না ডুমুর খেলে সোডিয়াম পটাশিয়ামের ব্যালেন্স ঠিক করার মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডুমুর খান সুস্থ থাকুন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও ক্যাননসার প্রতিরোধ করে 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ডুমুর। ডুমুরের মধ্যে এমন কোন পুষ্টি উপাদান রয়েছে যার যার ফলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমায় ও ইনসুলিন সিক্রেশন বাড়ায়। এভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে ডুমুর।

আরো পড়ুন: বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম।

ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে ডুমুর। ডুমুরে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ফ্রিরেডিকালগুলোকে ধ্বংস করে। এই ফ্রিরেডিকেলের কারণেই বডিতে টিউমার বা ক্যান্সার হয়ে থাকে। এই ফ্রি রেডিক্যালগুলোকে ধ্বংস করার মাধ্যমে টিউমার বা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ডুমুর।

হাড় ও দাঁত মজবুত করে এবং দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে 

হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে ডুমুর। ডুমুরে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস। সাপ্লিমেন্ট গুলো আমাদের দেহের অস্থি - তরুণাস্থি, হাড় ও দাঁতের গঠনকে মজবুত করে। নিয়মিত ডুমুর খেলে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমে।

হাড় ও দাঁত মজবুত করে এবং দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে

ডুমুরের পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতার মধ্যে আরও একটি অন্যতম গুণ হল দৃষ্টি শক্তি ঠিক রাখে। আমরা জানি বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানব চোখের ম্যাকুলার ডিজেনারেশন শুরু  হতে পারে যার ফলশ্রুতিতে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। ডুমুরে রয়েছে পর্যাপ্ত এন্টিঅক্সাইড ও ভিটামিন যা আমাদের চোখের দৃষ্টি শক্তি ঠিক রাখতে সহায়তা করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ডুমুর

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য ডুমুর অতুলনীয় খাদ্য। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকে যা সহজেই খাদ্য - খানা হজমে সহায়তা করে ও বাউল মুভমেন্ট ঠিক রাখে। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এছাড়াও  ডায়রিয়াসহ পেটের অন্যান্য সমস্যা দূর করে। নিয়মিত ডুমুর খান পেট পরিষ্কার রাখুন।

প্রজনন স্বাস্থ্য ঠিক থাকে

প্রজন্ম স্বাস্থ্য ঠিক রাখে ডুমুর। ডুমুরে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে জিংক, ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজেরমত খনিজ। এই খনিজগুলো প্রজনন স্বাস্থ্যকে উর্বর করে। শুক্রাণু ও ডিম্বানুর প্রস্ফুটনকে ত্বরান্বিত করে।

গর্ভবতী মায়েরাও এ ফলটি প্রতিনিয়ত খেতে পারেন। প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন দুই একটি করে ডুমুর দুধের সাথে মিশিয়ে অথবা সালাত হিসেবে খেতে পারেন।

পরিশেষ

ডুমুরের পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে পুরোপুরি জানতে পেরেছেন। এই ফলটি যেভাবেই খান না কেন এর পুষ্টি গুণের কোন কমতি নেই। তাই সকলেরই প্রতিদিনের খাবারে সবজি হিসেবে বা ফল হিসেবে ডুমুর থাকা উচিত।

ডুমুর সম্পর্কে আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন। এরকম আরো নতুন নতুন আপডেট পেতে এখনি সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথেই থাকুন। পরিশেষে বলতে চাই সবাই সুস্থ থাকবেন, সুন্দর থাকবেন। ধন্যবাদ।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url