গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিন মাসে করণীয় বর্জনীয় ও নির্দেশিকা
আপনার (গর্ভবতীর) অনুভূতি কেমন
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিন মাসে করণীয় বর্জনীয় ও নির্দেশিকা সমূহ আলোচনার প্রথমেই আমরা জেনে নেব গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিন মাসের অনুভূতি কেমন সে বিষয় সম্পর্কে।
প্রত্যেকটা মহিলাই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য হলেও গর্ভবতী মহিলাদের অনেকেই প্রথম তিন মাসের চেয়ে দ্বিতীয় তিন মাসের সময়টা বেটার ফিল করেন। এই সময়টাতে বমি বমি ভাব ও ক্লান্তি বোধ কমে যায়।
দ্বিতীয় তিন মাসের এই সময়ে গর্ভবতী মায়ের পেট বড় হতে শুরু করবে, বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করতে পারবেন এবং বাচ্চা আপনার পেটে আঘাত করছে আপনি সেটা অনুভব করতে পারবেন।
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিন মাসের সাধারণ লক্ষণ
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিন মাসে করণীয় বর্জনীয় ও নির্দেশিকা আলোচনায় আমরা এখন আলোচনা করব গর্ভাবস্থা দ্বিতীয় তিন মাসের সাধারণ লক্ষণগুলো কি কি সে সম্পর্কে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ
প্রথম টাইমিস্টার ও দ্বিতীয় টাইমিস্টার, গর্ভাবস্থা দুটি কখনোই এক নয়। দ্বিতীয় তিন মাসের সময় কিছু কিছু অতিরিক্ত লক্ষণ দেখা দেয় সে গুলো নিম্নরূপ।
- হাত ও আঙ্গুলের যন্ত্রণা অনুভূত হতে পারে,
- আঙ্গুলে অস্বস্তি বা অবশ অবশ ভাব অনুভূত হতে পারে,
- মুখে গাঢ় ছোপ ছোপ দাগ (ম্যাসাতা)পড়তে পারে,
- গর্ভবতীর নাভি থেকে যৌন কেশ পর্যন্ত ত্বকের একটি দাগ বিস্তৃত হতে পারে,
- স্তনে বোটা কালো হয়ে যেতে পারে,
- পেট বড় হওয়ার জন্য নিতম্ব, পেট, স্তন ও উরুতে ত্বকের ফাটা দাগ হতে পারে।
- পেটের নিচের অংশে অস্ত্র নিতে ব্যথা হতে পারে।
গর্ভবতী মায়ের যত্ন
আরো পড়ুনঃ গর্ভে বাচ্চার সুস্থতা ও ত্রুটি কিভাবে বুঝবেন?
- গর্ভাবস্থায় পিঠের নিচের দিকে ব্যথা ও শ্রোনিতে ব্যথার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন। বর্তমান সময়ে ঔষধের বিকল্প হিসেবে ফিজিওথেরাপি নিতে পারেন।
- হাত পায়ের যন্ত্রণা ও অবশ অবশ ভাবের ক্ষেত্রে বরফ স্যাক দিতে পারেন, পূর্ণ বিশ্রাম ও আপনার হাত ও কব্জি উপর তুলে ব্যায়াম করতে পারেন।
- মুখে প্রসারিত ছোপ ছোপ দাগ তোলার জন্য কিছু ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। যেমষ- সানস্ক্রিন বা এই টাইপের ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিন মাসের লক্ষণ
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিন মাসে করণীয় বর্জনীয় ও নির্দেশিকা সমূহ আলোচনায় এখন আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় দ্বিতীয় তিন মাসের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে। দ্বিতীয় তিন মাসের মাস ওয়াইজ লক্ষণগুলো নিম্নরূপ।
- চতুর্থ মাস ঃ গর্ভাবস্থার চতুর্থ মাসে গর্ভবতী মায়ের মুখের উজ্জ্বলতা বেড়ে যায় ও গর্ভে সন্তানের নড়াচড়া বেশি অনুভূত হয়।
- পঞ্চম মাস ঃ গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাসে গর্ভবতী মহিলারা আরো বেশি ক্লান্তি অনুভব করেন এবং গর্ভে সন্তানের নড়াচড়ার স্পষ্টতা আরো প্রপোট ভাবে বুঝতে পারেন।
- ষষ্ঠ মাস ঃ গর্ভাবস্থার ষষ্ঠ মাসে বাচ্চা ধীরে ধীরে বড় হওয়ার কারণে শরীরের ভিতরে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের (যেমন কিডনি ফুসফুস) উপরে তাপ ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট হয়।
গর্ভাবস্থায় খাদ্য অভ্যাস
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিন মাসে করণীয় বর্জনীয় ও নির্দেশিকা সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব একজন গর্ভবতী মায়ের দ্বিতীয় তিন মাসে কি ধরনের খাবার গ্রহণ করা উচিত যে সম্পর্কে।
আরো পড়ুনঃ টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ।
এই সময় গর্ভবতী মায়ের একটু বেশি পরিমাণে পুষ্টির দরকার হয়। সেজন্য বাড়তি খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আপনার গর্ভের সন্তানের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা উচিত।
একজন গর্ভবতী মায়ের নিম্নোক্ত খাবারগুলো রুটিন ওয়াইজ পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
- শাকসবজি,
- সিম,
- শস্য দানা,
- মাংস,
- আমিষ,
- আয়রণ,
- দুধ,
- ফলমূল,
- খনিজ,
- ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার,
- আয়োডিন,
- ফলিক এসিড,
- ভিটামিন এ,
- ভিটামিন সি,
- ভিটামিন ডি,
- ভিটামিন বি৬,
- ভিটামিন বি১২। ইত্যাদি।
গর্ভাবস্থায় যে সকল খাবার এড়িয়ে চলা উচিত
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিন মাসে করণীয় বর্জনীয় ও নির্দেশিকা সমূহ আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত না সে সম্পর্কে।
গর্ভবতী মাদের সবসময় পুষ্টিযুক্ত ও নিরাপদ খাবার গ্রহণ করা উচিত। তবে কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো নিরাপদ মনে হলেও গর্ভবতী মাদের জন্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
আরো পড়ুনঃ অর্থসহ মেয়ে বাচ্চাদের ইসলামিক নামের তালিকা ও ইংরেজি বানান।
গর্ভাবস্থায় যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত সেগুলো নিম্নরূপ
- মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার,
- কাঁচা দুধ,
- কাঁচা বা অর্থসিদ্ধ ডিম,
- কাঁচা বা পুরোপুরি রান্না না হওয়া মাংস বা মাংস জাত পণ্য।
- কাঁচা বা কম সিদ্ধ মাছ।
- কাঁচা বা অর্ধ সিদ্ধ সবজি। ইত্যাদি।
গর্ভাবস্থায় কতটুকু বেশি খাবার প্রয়োজন
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিন মাসে করণীয় বর্জনীয় ও নির্দেশিকা সমূহ আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় কতটুকু বেশি খাবার খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে।
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে তেমন কোনো বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না তবে দ্বিতীয় তিন মাসে গর্ভবতী মায়ের স্বক্ষমতা বাড়িয়ে বাচ্চার সুস্থতার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৩৪০ থেকে ৩৫০ ক্যালরি অতিরিক্ত প্রয়োজন হবে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের করণীয় বর্জনীয় ও নির্দেশিকা।
অতিরিক্ত ক্যালরি যোগান দেওয়ার জন্য গর্ভবতী মাকে অতিরিক্ত পরিমাণে সতেজ, তরতাজা ফলমূল ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। এই খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে
- বাদাম,
- দই,
- ঘি,
- সুজি,
- ডিমের কুসুম,
- কলিজা,
- কলা,
- পেয়ারা,
- ডালিম,
- কমলা,
- বেদেনা,
- অন্যান্য সতেজ ফলমূল।
গর্ভে সন্তানের বৃদ্ধি কিভাবে ঘটছে
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিন মাসে করণীয় বর্জনীয় ও নির্দেশিকাসমূহ আলোচনায় জেনে নিব গর্ভে সন্তানের বৃদ্ধি কিভাবে ঘটছে সে সম্পর্কে অর্থাৎ দ্বিতীয় তিন মাসে গর্ভে বাচ্চার কোন সময় কতটুকু ওজন বা কতটুকু দৈর্ঘ্য থাকা দরকার সে বিষয়ে।
দ্বিতীয় তিন মাসে বাচ্চার আভ্যন্তরিণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো আস্তে আস্তে বিকশিত হতে থাকে ও সুদৃঢ় হতে থাকে। দ্বিতীয় তিন মাসে বাচ্চার দেহে যা যা ঘটতে থাকে সেগুলো নিম্নরূপ।
- ত্বকের গঠন গাঢ় হতে থাকে,
- হাড়ের গঠন শক্ত হতে থাকে,
- পায়ের গোড়ালির গঠন শুরু হয়,
- নার্ভাস সিস্টেম বিকশিত হয়,
- শ্রবণ শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে,
- চোখের পাতা খুলতে ও বন্ধ করতে পারে,
- মস্তিষ্কের গঠন বিকশিত হয়,
- লাথি একটু জরালো হয়,
- ফুসফুস সুসম্পন্ন ভাবে গঠিত হয়,
- হজম ব্যবস্থা কাজ করতে শুরু করে।
দ্বিতীয় তিন মাস শেষ হওয়ার পরে গর্ভে বেড়ে ওঠা সন্তানের দৈর্ঘ্য হয় প্রায় ৩৫ সেন্টিমিটার বা ১৪ ইঞ্চি এবং ওজন হয় ১ থেকে ২ কেজি বা ২ থেকে ৪ পাউন্ড।
বিঃ দ্রঃ গর্ভে বাচ্চার দৈর্ঘ্য ও ওজন গর্ভবতী মায়ের সুস্থতা, শারীরিক সক্ষমতা, উচ্চতা ও সুস্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে কম বেশি হতে পারে।
গর্ভবতী মাকে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
গর্ভাবস্থায় দ্বিতীয় তিন মাসে করণীয় বর্জনীয় ও নির্দেশিকা সমূহের মধ্যে এখন আমরা জেনে নেব গর্ভবতী মা কে কোন কোন বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত সে সম্পর্কে।
একজন গর্ভবতী মাকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রেখে চলতে হবে। নিম্নের যে কোন সমস্যা দেখা দেওয়ার সাথে সাথে আপনাকে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
- জ্বর হলে (শরীরের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা ১০০° ফারেনহাইট এর বেশি হলে),
- বুকে পিঠে মারাত্মকভাবে খিল ধরলে বা পেট ব্যথা হলে,
- দুর্গন্ধযুক্ত যোনি স্রাব,
- যোনি পথে রক্ত বা তরল বের হলে,
- শরীর হঠাৎ ফুলে গেলে,
- প্রসাবে জ্বালা-যন্ত্রণা হলে,
- অবিরাম বা মারাত্মক মাথা ব্যথা হলে,
- শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হলে,
- রক্ত বমি হলে,
- হঠাৎ ধড়পড়ি বেড়ে গেলে,
- চোখে ঝাপসা দেখলে।
গর্ভবতীর করনীয়
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিন মাসে করনীয় বর্জনীয় ও নির্দেশিকা সমূহ আলোচনা এখন আমরা জেনে নেব গর্ভ অবস্থায় করণীয় কাজগুলো সম্পর্কে। গর্ভবতী মায়ের যে সকল বিষয় করনীয় সেগুলো নিম্নরূপ।
- গর্ভবতীকে নিয়মিত স্বাস্থ্য চেকআপ করাতে হবে,
- গর্ভবতীকে দিনের বেলায় অন্তত দু'ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হবে,
- গর্ভে শিশুর সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য এ সময় গর্ভবতীকে একটু বাড়তি ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে,
- গর্ভবতীকে সবসময় হাসিখুশি রাখার জন্য সবারই ভূমিকা পালন করতে হবে,
- গর্ভবতীকে বেশি করে পানি খেতে হবে, দৈনিক কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস,
- ডাক্তারের পরামর্শে প্রতিদিন ওষুধ গুলো ঠিক টাইমে খেতে হবে,
- বেশি বেশি ধর্মীয় অনুশীলন করা উচিত।
গর্ভবতীর বর্জনীয়
গর্ভাবস্থায় দ্বিতীয় তিন মাসে করণীয় বর্জনীয় ও নির্দেশিকা সমূহ আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব গর্ভবতীর যে সকল কাজগুলো বর্জনীয় সে সম্পর্কে।
গর্ভবতী মায়ের নিম্নোক্ত কাজগুলো থেকে বিরত থাকা উচিত
- গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের ঝুঁকিপূর্ণ ও ভারী কাজ করা উচিত নয়, যেমন - টিউবয়েল চাপা, ধান বানা, ভারী জিনিস উত্তোলন করা, অতিরিক্ত কাপড় কাঁচা ইত্যাদি,
- গর্ভকালীন সময়ে শরীরের ঝাকি লাগে এমন কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত, যেমন - দূরের জার্নি করা।
- গর্ভবতীকে দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে,
- ক্ষতিকর ঔষধ সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে,
লেখক এর কথা
আজকের আর্টিকেলটি পড়ে গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিন মাসের সকল বিষয় সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন। পুরো গর্ভাবস্থা জুড়ে একজন গর্ভবতী মাকে সব সময় দুশ্চিন্তা মুক্ত ও নিরাপদে রাখা জরুরি।
গর্ভাবস্থায় যে কোন সমস্যা দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে তে যোগাযোগ করে সমস্যার সমাধান করে নিতে হবে। আজকের আর্টিকালে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
তথ্যগুলো সংগৃহীত।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url