মিষ্টি কুমড়ার পুষ্টিগুণ ১১টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা
মিষ্টি কুমড়ার পরিচিতি
মিষ্টি কুমড়ার পুষ্টিগুণ ১১টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা জানার আগে একটু জেনে নেব মিষ্টি কুমড়া পরিচিতি সম্পর্কে। কুমড়া সাধারণত দুই ধরনের হয় একটাকে বলে চাল কুমড়া আরেকটি অনটি হল মিষ্টি কুমড়া। আজকে আমরা মিষ্টি কুমড়া সম্পর্কে আলোচনা করব।
মিষ্টি কুমড়া সাধারণত গোলাকার পেট মোটা কালচে বা কমলা বর্ণের হয়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে লম্বা সাইজের মিষ্টি কুমড়াও দেখতে পাওয়া যায়। মিষ্টি কুমড়াগুলো পেঁকে গেলে বাহিরে এবং ভিতরের গাঢ় কমলা বর্ণ ধারণ করে। এর ভিতরে বিচি থাকে। বিচিগুলো খেতে বেশ সুস্বাদু।
এক নজরে মিষ্টি কুমড়া
- কুমড়ার নাম ঃ মিষ্টি কুমড়া, কোন কোন এলাকায় মিষ্টি লাউ নামেও পরিচিত।
- মিষ্টি কুমড়ার ইংরেজি নাম ঃ পাম্পকিন, ওয়াটার স্কোয়াশ (Pumpkin, Water Squash),
- মিষ্টি কুমড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ঃ সুসুরবিটা মিক্সটা (Cucurbita moschata)
- মিষ্টি কুমড়ার রং ঃ কাঁচা অবস্থায় কালচে বর্ণের হয়, পুরোপুরি পেকে গেলে গাঢ় কমলা বর্ণ ধারণ করে।
- মিষ্টি কমলার প্রথম চাষ ঃমিষ্টি কুমড়ার প্রথম চাষ শুরু হয়েছিল মধ্যে আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার উত্তরাংশে।
মিষ্টি কুমড়ার পুষ্টিগুণ
মিষ্টি কুমড়ার পুষ্টিগুণ ১১টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা আলোচনায় এখনো আমরা মিষ্টি কুমড়ার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। মিষ্টি কুমড়া বহুগুনে গুণান্বিত। এই মিষ্টি কুমড়ার বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ও পুষ্টিগুণ রয়েছে, যেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
আরো পড়ুন ঃ কচু শাকের পুষ্টিগুণ ও ১৩টি স্বাস্থ্য উপকারিতা।
প্রতি ১০০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়ায় যে পরিমাণে পুষ্টি উপাদান ও পুষ্টিমান থাকে
- শক্তি বা এনার্জি - ১৬ কিলো ক্যালরি,
- শর্করা বা কার্বোহাইডেট - ৩.৪ গ্রাম
- সুগার বা চিনি - ২.২ গ্রাম,
- খাদ্য আঁশ বা ফাইবার - ১.১গাম,
- স্নেহ পদার্থ - ০.২ মিলিগ্রাম,
- প্রোটিন বা আমিষ - ১.২ গ্রাম,
- ভিটামিন এ - ১০ মাইক্রগ্রাম,
- বিটা ক্যারোটিন - ১২০ মাইক্রগ্রাম,
- লুটিন জিয়াক্সেন্থিন - ২১২৫ মাইক্রগ্রাম,
- ভিটামিন বি১ - ০.০৪৮ মিলিগ্রাম,
- ভিটামিন বি২ - ০.১৪২ মিলিগ্রাম,
- ভিটামিন বি৩ - ০.৪৮৭ মিলিগ্রাম,
- ভিটামিন বি ৫ - ০.১৫৫ মিলিগ্রাম,
- ভিটামিন বি ৬ - ০.২১৮ মিলিগ্রাম,
- ভিটামিন বি ৯ - ২৯ মাইক্রোগ্রাম,
- ভিটামিন সি - ১৭ মিলিগ্রাম,
- ভিটামিন কে - ৩ মাইক্রোগ্রাম,
- ক্যালসিয়াম - ২৪ মিলিগ্রাম,
- সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম,
- পটাশিয়াম - ৩৪০ মিলিগ্রাম,
- আয়রন - ০.৩৫ মিলিগ্রাম,
- ম্যাগনেসিয়াম - ১৭ মিলিগ্রাম,
- ম্যাঙ্গানিজ - ০.১৭৫ মিলিগ্রাম,
- ফসফরাস - ৩৮ মিলিগ্রাম,
- পটাশিয়াম - ২৬২ মিলিগ্রাম,
- জিংক - ০.২৯ মিলিগ্রাম,
- জলীয় অংশ বা পানি - ৯০ গ্রাম। ইত্যাদি।
১.মিষ্টি কুমড়া গর্ভাবস্থায় নিরাপদ
মিষ্টি কুমড়া গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিরাপদ। শুধু তাই নয় মিষ্টি কুমড়াতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যেগুলো গর্ভবতী মায়ের ও গর্ভের বাচ্চার জন্য যথেষ্ট উপকারী। এতে বিদ্যমান আয়রন, ফোলেট, ক্যালসিয়াম, বাচ্চার শরীর গঠনে সহায়তা করে।বলা যায় একমুখে দুজনের খাবার খেতে হয়।
আরো পড়ুন ঃ লাল শাকের পুষ্টিগুণ ১৭টি স্বাস্থ্য উপকারিতা।
এ জন্য এমন ধরনের খাবার পছন্দ করতে হয় যার পুষ্টিগুণ বেশি। এসব খাবারের মধ্যে মিষ্টি কুমড়া শ্রেয়। মিষ্টি কুমড়ায় বিদ্যমান এই পুষ্টি উপাদান গুলো গর্ভে বাচ্চার জন্মগত চ্যালেঞ্জ প্রতিরোধ করে এবং আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক ও ক্যালসিয়াম একটি সুস্থ গর্ভধারণকে নিশ্চিত করে।
২.মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা সমূহ
৩.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
৪.মিষ্টি কুমড়া ওজন কমায়
৫.চোখের জন্য উপকারী
৬.ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে
মিষ্টি কুমড়ার পুষ্টিগুণ ১১টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা আলোচনায় আমরা জানবো মিষ্টি কুমড়া খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে সে সম্পর্কে। বিভিন্ন পুষ্টিগুণের কারণে দেহের ক্যান্সার সেল বৃদ্ধিতে প্রতিরোধ করে।
বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার বা প্রোস্টেট ক্যান্সার বৃদ্ধি রোধে বেশি উপকারী তবে মিষ্টি কুমড়া ক্যান্সার রোধ করতে পারে না শুধু মিষ্টি কুমড়ার উপর নির্ভর না করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে।
৭.হজম বৃদ্ধি করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
৮.ত্বকের জন্য উপকারী
৯.রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
১০.ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
১১.গর্ভবতী মাদের মিষ্টি কুমড়ার বিচি খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভবতীর মাদের মিষ্টি কুমড়ার বীজ বা বিচি খেলে গর্ভের সন্তানের অনেক উপকার পাওয়া যায়। এই বীজে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন যা বাচ্চার চোখ, ফুসফুস, হাড়, কিডনি, হার্ট ইত্যাদি গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
এ বিচির আয়রন দেহের অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি করে। এই বিচিতে বিদ্যমান জিংক ও ওমেগা থ্রি ভ্রমের ব্রেন ডেভেলপমেন্ট ও নার্ভ সিস্টেমকে পরিপূর্ণ করতে সহায়তা করে।
মিষ্টি কুমড়ার অপকারিতা সমূহ
এ্যালার্জি সমস্যা
মিষ্টি কুমড়া খেলে অনেকেরই এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ্যালার্জির সমস্যা হলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, ত্বকে ফুসকুড়ি উঠতে পারে, ত্বকে গোটা বের হতে পারে। ত্বক চুলকাতে পারে, লাল হয়ে যেতে পারে। তাই এ সমস্ত লোকদের সাবধানতার সহিত মিষ্টি কুমড়া খাওয়া উচিত।
বধহজম হতে পারে
মিষ্টি কুমড়াতে রয়েছে পর্যাপ্ত ফাইঘর। যা বেশি পরিমাণে খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। পেটে ব্যথা হতে পারে কি এমন কি ডাইরিয়া পর্যন্ত হতে পারে।
গ্যাস হতে পারে
মিষ্টি কুমড়াতে এক ধরনের ফ্রুক্টোজ থাকে যা সকলের পক্ষে হজম করা সহজ নয়, সেজন্য বেশি পরিমাণে মিষ্টি কুমড়া খেলে এসিডিটি বেড়ে যেতে পারে।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আশা করি মিষ্টি কুমড়া সম্পর্কিত আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা মিষ্টি কুমড়া সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন ও উপকৃত হয়েছেন। আর্টিকেলটি শেয়ার করে দিলে আপনার অন্যান্য বন্ধুরা এ সম্পর্কে জানতে পারবে বলে আমি মনে করি।
মিষ্টি কুমড়া অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি সুস্বাদু সবজি, এর উপকারিতাও অনেক। অনেক উপকারিতা আছে বলেই বেশি পরিমাণে একবারে খাওয়া উচিত নয়। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মিষ্টি কুমড়া রাখা উচিত এবং পরিমাণমতো খাওয়া উচিত। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url