শিমের পুষ্টিগুণ ও ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

শিমের পুষ্টিগুণ ও ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি লেখা। শিম, শীত মৌসুমের সবজি গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সবজি। বিভিন্ন পুষ্টিগুণ ও উপকারিতার জন্য শিমের পাশাপাশি শিমের বিচির কদরও দিন দিন বেড়েই চলছে।
শিমের পুষ্টিগুণ ও ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা জানতে পারবেন শিমের পুষ্টিগুণ, শিমের উপকারিতা, শিম খেলে চুল পড়া কমে যায়, ইত্যাদি বিষয় গুলো সম্পর্কে। আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ুন শিম সম্পর্কে সব অবাক করা তথ্যগুলো জানুন।
পেজ সুচিপত্র

শিমের পরিচিতি

শিম, লতা জাতীয় লম্বা উদ্ভিদের এক ধরনের ফল। শিম গুলো দেখতে পাতলা, লম্বা ও চেপটা হয়ে থাকে। বাজারে বিভিন্ন রঙের সিম দেখতে পাওয়া যায়, তবে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় গাঢ় সবুজ রঙের শিম। এছাড়াও কোন কোন ক্ষেত্রে হালকা খয়েরি রঙের পাওয়া যায়।

এক নজরে শিমের পরিচিতি

  • সবজির নাম ঃ শিম,
  • শিমের ইংরেজি নাম ঃ বিন (Bean),
  • শিমের রং ঃ গাঢ় সবুজ, হালকা খয়েরির রং।
  • শিমের বিচি ঃ সাধারণত বৃক্কাকার (কিডনির মত আকার),
  • শিমের অন্যান্য নাম ঃ অঞ্চল ভেদে এই শিম বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন -
  • চঁই,
  • আনাজ,
  • ফ্রেন্স শিম,
  • গ্রীন শিম,
  • খাইশেরা,
  • কিডনি শিম,,
  • ড্রাই শিম,
  • ফাবা শিম,
  • নাভাল শিম,
  • কটরা শিম,
  • সালাদ শিম,
  • স্ন্যাপ শিম,
  • কামরাঙ্গা শিম। ইত্যাদি।

শিমের অনেকগুলা প্রজাতি রয়েছে এর মধ্যে কিছু কিছু মানুষের খাওয়ার উপযোগী। আবার কিছু শিম আছে যেগুলো মানুষের খাবারের অনুপযোগী, এগুলো পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

শিমের পুষ্টিগুণ

শিম এমন একটা সবজি যা পুষ্টিগুণে ভরপুর। শিমগুলো খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিমানও অনেক। শিমে বিদ্যমান পুষ্টিমান ও পুষ্টি উপাদানগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

আরো পড়ুন ঃ লাউয়ের পুষ্টিগুণ ও ১৫ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা।

প্রতি ১০০ গ্রাম শিমে রয়েছে

  • এনার্জি বা খাদ্য শক্তি - ৮০ কিলোক্যালরি,
  • জলীয় অংশ - ৮৫ গ্রাম,
  • কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা - ৬.৭ গ্রাম,
  • আঁশ বা ফাইবার - ১.৮ গ্রাম,
  • প্রোটিন বা আমিষ - ৯.৭ গ্রাম,
  • ফ্যাট বা চর্বি - ০.৭ গ্রাম,
  • ভিটামিন সি,
  • খনিজ লবণ - ১.৭ গ্রাম,
  • ভিটামিন বি ১,
  • ভিটামিন বি২,
  • আয়রন - ১.৭ গ্রাম,
  • লিংক,
  • ভিটামিন বি৬,
  • ক্যালসিয়াম - ২১০ মিলিগ্রাম,
  • সেলেনিয়াম,
  • কপার,
  • ক্যারোটিন - ১৮৭ মাইক্রোগ্রাম, ইত্যাদি।
এছাড়াও শীমে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট মিনারেলস ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান।

১.গর্ভবতী মায়ের জন্য শিম নিরাপদ

শিমের পুষ্টিগুণ ও ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতায় এখন আমরা জেনে নেব শিম গর্ভবতী মায়ের জন্য উপকারী সে সম্পর্কে।। শিমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন  ও ফলিক এসিড।

আরো পড়ুন ঃ মিষ্টি কুমড়ার পুষ্টিগুণ ১১ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা।

যেগুলো গর্ভের বাচ্চার বডি গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও সিমে বিদ্যমান জিংক বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি দূর করতে সহায়তা করে। প্রতিনিয়ত পরিমানমত শিম খেলে গর্ভবতী মায়ের অপুষ্টিজনিত সমস্যা দূর হয় ও বাচ্চার গঠন ভালো হয়।

২.শিমের উপকারিতা সমূহ

শিমের পুষ্টিগুণ ও ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব শিমের উপকারিতা সমূহ সম্পর্কে। শিম ও শিমের বিচি এমন একটি সবজি জাতীয় খাদ্য যাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিভিন্ন খাদ্য উপাদান.
শিমের উপকারিতা সমূহ
শিমের এই নানান রকমের খাদ্য উপাদানের কারণে মানবদেহে বিভিন্ন রকমের উপকার করে থাকে। আমরা সকলেই শিম খেয়ে থাকি কিন্তু এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানা নেই। নিম্নে শিমের উপকারিতাগুলো ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো।

৩.শিম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

সিমের পুষ্টিগুণ ও ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা আলোচনা এখন আমরা জানবো শিম খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে সে সম্পর্কে। শিম অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি সবজি।

আরো পড়ুন ঃ কচু শাকের পুষ্টিগুণ ও ১৩ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা।

যাতে রয়েছে বিটেকারুটিন, এ্যানটিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য উপাদান। যেগুলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

৪.কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

শিমের পুষ্টিগুণ ও ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা জেনে নেব শিম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় সে সম্পর্কে। শিম একটা আঁশযুক্ত খাবার। শিমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডায়েটরি ফাইবার।

আরো পড়ুন ঃ লাল শাকের পুষ্টিগুণ ও ১৭ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা।

যেগুলো খাওয়ার পরে অন্যান্য খাবার হজম করতে সহায়তা করে, কোষ্টকাঠিন্য দূর করে ও মল ত্যাগ সহজ করে। যারা কষ্ট্য-কাঠিন্য সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত শিম খেলে এই সমস্যা দূর হয়।

৫.ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে

শিমের পুষ্টিগুণ ও ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব সিম খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে সে সম্পর্কে। শিম একটা আঁশযুক্ত খাবার। শিমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন ও এন্টি অক্সিডেন্ট।

আরো পড়ুন ঃ পান পাতার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও অপকারিতা।

আঁশযুক্ত খাবার হওয়ার কারণে শিম খেলে অনেক সময় ধরে পেট ভর্তি আছে বলে মনে হয়, এবং পরবর্তী খাবার আকাঙ্ক্ষা কমে যায়। এছাড়াও মেদ বা চর্বি বর্ধক উপাদান গুলো কম। যে কারণে নিয়মিত শিম খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৬.চুল পড়া কমে যায়

শিমের পুষ্টিগুণ ও ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতার মধ্যে একটি অন্যতম উপকারিতা হলো শিম খেলে চুল পড়া কমে যায়। শিমে বিদ্যমান পর্যাপ্ত পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন ই চুলের স্বাস্থ্য ভালো করে, চুল ঝরে পড়া কমায় এবং চুল ঘন, কালো ও উজ্জ্বল করে।

৭.রক্ত আমাশয় ভালো করতে সহায়তা করে

শিমের পুষ্টিগুণ ও ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতার একটি অন্যতম উপকারিতা হলো শিম, শিমের বিচি ও সিমের ফুল খেলে রক্ত আমাশা ভালো হয়। শিমের ফুলে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল অ্যাক্টিভিটি, যার কারণে সিমের ফুল খেলে রক্ত আমাশয় ভালো হয়।

৮.কোয়াশিয়ারকর রোগ প্রতিরোধ ্করে

শিমের পুষ্টিগুণ ও ১৫টি উপকারিতার মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো শিম কোয়াশিয়ারকর রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। প্রোটিনের অভাবে মূলত এই রোগটি হয়ে থাকে। এই রোগ বাড়ন্ত বয়সে বাচ্চাদের বেশি হয়।
কোয়াশিয়ারকর রোগ প্রতিরোধ করে
এই রোগ হলে প্লীহা বড় হয়ে যায়, বাচ্চার বর্ধন খর্ব হয়, স্মরণশক্তি কমে যায়। শিমের বিচিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন যা নিয়মিত খেলে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ হয় ও এই রোগের তীব্রতা কমে যেতে পারে। তাই নিয়মিত শিম সকলের খাওয়া উচিত।

৯.হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়

শিমের পুষ্টিগুণ ও ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতার মধ্যে একটি অন্যতম উপকারিতা হলো শিম খেলে হিমোগ্লোবিলে পরিমাণ বাড়ে। শিমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন। আয়রন রক্ত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ফলে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। প্রতিনিয়ত শিম খেলে রক্তস্বল্পতা সমস্যা দূর হয় ও হিমোগ্লোগানে পরিমাণ বাড়ে।

১০.হৃদপিণ্ড ভালো রাখে

শিমের পুষ্টিগুণ ও ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতার মধ্যে অন্যতম একটি স্বাস্থ্য উপকারিত হল শিম খেলে হৃদপিণ্ড ভালো থাকে। শিমে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল ও পটাশিয়াম যেগুলো রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হৃদপিণ্ডকে ভালো রাখে ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। 

১১.মেজাজ ভালো রাখে

শিমের পুষ্টিগুণ ও ১৫টি স্বাস্থ্য  উপকারিতার মধ্যে একটি হল কপার আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি মলিকুল কপার। আর ডোপামিনের মূল উপাদান হলো এটি।

ডোপামিনের কমবেশির কারণে মুড সুইমিং করে অর্থাৎ মেজাজ ভালো থাকা না থাকার জন্য এই ডোপামিন দায়ী। এই কপার ডোপামিনের মুভমেন্ট কে নিয়ন্ত্রণ করে ফলে মন ভালো থাকে অর্থাৎ মেজাজ ভালো থাকে।

১২.হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে

শিমের পুষ্টিগুণ ও ১৫ টি স্বাস্থ্য উপকারিতায় এখন আমরা জেনে নেব শিম খেলে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো হয় সে সম্পর্কে। শিমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস ও সিলিকন জাতীয় পদার্থ। যেগুলো হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও হাড়ে ক্ষয়র রোধ করতে সহায়তা করে।

১৩.ফুসফুসের ভালো রাখে

শিমের অনেকগুলো পুষ্টিগুনের মধ্যে একটি গুণহলো শিম খেলে ফুসফুস ভালো থাকে। শিমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, সেলিনিয়াম ও জিংক যেগুলো আমাদের ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যা কে রোধ করতে সহায়তা করে ফলে ফুসফুস ভালো থাকে।

১৪.ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে

বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের গবেষণা লগ্ধ ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের প্রকোপ অনেক গুনে বেড়ে গেছে। শিম খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে বলে জানা গেছে।

শিম সরাসরি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে না পারলেও শিমের বিচিতে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাবনয়েড ক্যান্সার সেলের বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়তা করে।

১৫.শিম খেলে স্মরণশক্তি বাড়ে 

শিমের বিচিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে শর্করা, প্রোটিন ও ভিটামিন বি সিক্স। ভিটামিন বি সিক্স স্নায়ুতন্ত্র সচল রাখে ও ব্রেনে খুব দ্রুত খাদ্যের যোগান দেয়, ফনে ব্রেন সতেজ হয় ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়।

শিম খাওয়ার সতর্কতা / সাবধানতা

শিম অত্যন্ত পুষ্টিগণ সম্পন্ন ও উপকারী একটি খাদ্য। শিম পুষ্টিকর ও উপকারী হলেও কিছু কিছু লোকদের ক্ষেত্রে একটু সতর্কতার সহিত খাওয়া উচিত না খাওয়াই ভাল।

  • যাদের কিডনি রোগের সমস্যা আছে তাদের শিম না খাওয়াই ভালো।
  • যে সকল ব্যক্তির শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেশি তাদের শিম খাওয়া উচিত নয়।
  • যে সকল ব্যক্তির পিত্তথলিতে পাথর আছে তাদেরও শিম না খাওয়াই ভালো।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক বৃন্দ, শিম সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলটি পড়ে অনেক জানা-অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন বলে আমার বিশ্বাস। মূল কথা হলো সকল মৌসুমী সবজি মৌসুমী রোগের দাওয়াই হিসেবে কাজ করে। সেজন্য মৌসুমী যে সবজিগুলো প্রতিনিয়ত পরিমাণ মতো সকলেরই খাওয়া উচিত।

এতে করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, অসুখ-বিসুখ কম হয়। ফলে শরীর সুস্থ থাকে মন মেজাজ ভালো থাকে। আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের ভালো লাগলে শেয়ার করে দিতে ভুলবেন না। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

সুত্রঃ ইউ এস ডি এ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • MD Raihan Islam
    MD Raihan Islam December 17, 2024 at 12:56 PM

    Nice

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url