সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম
সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলটি লেখা। অনেক আগে থেকেই আমদের বাংলাদেশে সজনে ডাটা খুব জনপ্রিয় একটা সবজি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। গুনে, মানে ও স্বাদে অতুলনীয় হয়ায় দিন দিন এর কদর বেড়েই চলছে। সজনে ডাটার পাশাপাশি পুষ্টিগুণের কারণে সজনে পাতার উপকারিতাগুলোর জন্য এর চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সজনে পাতার উপকারিতা, গুষ্টিমান, পুষ্টিগুণ ও নিয়ম জানার জন্য এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। সজনে পাতার আরেক নাম মরিঙ্গা ওলিফেরা. এতক্ষণে সবারই হয়ত জানতে ইচ্ছা করছে সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ গুলো কি কি? তাই আর দেরি না করে চলুন মূল অংশে অর্থাৎ সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করি।
সজনে পাতার পুষ্টিমান
- কার্বোহাইডেট পাওয়া যায় ৮.২৮ গ্রাম।
- ফাইবার পাওয়া গ্রাম ০২ গ্রাম।
- ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় ১৮৫ মিলিগ্রাম।
- আয়রন পাওয়া যায় ০৪ মিলিগ্রাম।
- প্রোটিন পাওয়া যায় ১.৪ গ্রাম।
- সোডিয়াম পাওয়া যায় ১৯ মিলিগ্রাম।
- ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায় ১৪৭ মিলিগ্রাম।
- ভিটামিন এ পাওয়া যায় ৩৭৮ মাইক্রগ্রাম।
আরো পড়ুনঃ ক্যালসিয়াম ঘাটতিঃ লক্ষণ কারণ প্রতিকার ও চিকিৎসা।
- ভিটামিন সি পাওয়া যায় ৫১.৭ মাইক্রগ্রাম।
- পটাশিয়াম পাওয়া যায় ২৫ মিলিগ্রাম।
- কপার পাওয়া যায় ৮.৫ মিলিগ্রাম।
- মিনারেল পাওয়া যায় ২.৩ মিলিগ্রাম।
- এনার্জি পাওয়া যায় ১৫০ কিলো ক্যালরি।
- মানব শরীরে গ্রহণ উপযোগী ৮ ধরনের এমাইনো এসিড।
- এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স।
সজনে পাতার পুষ্টিমান প্রায় দুধের সমান
আরও পড়ুন ঃ ডুমুরের পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার উপকারিতা।
সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা
সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম আলোচনায় এখানে পড়ুন উপকারিতা সদম্পরকে। সজনে পাতার উপকারিতা অনেক। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠনের জন্য এর উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রয়েছে। নিরামিষের অভাব পুরনে সজনে পাতা যথেষ্ট উপকারী। এ পাতাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকে যা আমাদের হাড় গুলোকে মজবুত করে।
সজনে পাতার পুষ্টিগুনের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন রকমের ঔষধিগুন। এতগুলো পুষ্টিমান ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করার নয। এ পাতা শুধু খেলেই নয় ব্যাবহারেও মিলবে অনেক উপকার। সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা গুলোর মধ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণগুলো পর্যায়ক্রমে নিম্নে আলোচনা করা হলো।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় সজনে পাতা
সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম, এ আলোচনায় এখন আলোচনা করব সজনে পাতার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে। সজনে পাতার উপকারিতা গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ পাতা হলো দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সজনে পাতায় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে,
আরও পড়ুন ঃ রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগুণ।
যেগুলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সজনে পাতা নিয়মিত খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। বিশেষ করে জ্বর, সর্দ্ কাশি এগুলো নিরাময়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
মুখে রুচি বাড়ায় সজনে পাতা
সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম, সজনে পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, জিংক ও মিনারেলসঃ যা রুচিবর্ধক হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন বি, জিংক ও মিনারেলস গাসটিন লেভেল বাড়ায় ফলে খাওয়ার রুচি বাড়ে। তাই সজনে পাতা নিয়মিত নিয়ম অনুযায়ী খেলে আমাদের মুখে রুচি বাড়ে। স্বাস্থ্য ভাল থাকে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম, ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সজনে পাতার গুড়া বা মরিঙ্গা পাউডার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে ব্লাড প্রেসার রোগীর উপরে ১২০ গ্রাম রান্না করা সজনে পাতা গুড়া খাওয়ানো হয়েছিল যারা
আরও পড়ুনঃ লটকন খাওয়ার ১০টি উপকারিতা
সজনে পাতা খেয়েছিলেন তাদের ব্লাড প্রেসার কন্ট্রোল ছিল। আর যারা খাননি তাদের ব্লাড প্রেসার বেশি ছিল। তাই অন্যান্য ঔষধের সাথে নিয়মিত সজনে পাতা খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সজনে পাতা
সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম, সজনে পাতার উপকারিতা গুলোর মধ্যে একটি হল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ। সজনে পাতাতে থাকা ইনসুলিন জাতীয় প্রোটিন রক্তের শর্করার পরিমাণ কমায়।
গ্লুকোজ বা সুগার মেটাবলিজমে সহায়তা করে। ডায়াবেটিসের ঔষধের সাথে সজনে পাতা নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হয়, পাশাপাশি ইনসুলিন নেওয়ার প্রবনতা ও পরিমাণ উভয় কমে যায়।
সজনে পাতা চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়
সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম, সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও বিটাক্যারোটিন রয়েছে। সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা হলো বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন এ চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে।
সে জন্য নিয়মিত সজনে পাতা খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে ও চোখ ভালো থাকে। চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখার জন্য সকলেরই পরিমান মত সজনে পাতা খাওয়া উচিত।
চুলের যত্নে সজনে পাতা
সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম, সজনে পাতা গুড়া করে পানির সাথে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করলে মাথার খুসকি দূর করে ও চুলের গোড়া মজবুত হয়। চুল ঘন ও লম্বা হয়, দেখতে সুন্দর ও সিল্কি হয়। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের পুষ্টি যোগায় ও চুল ঝরে পড়া কমে যায়।
ত্বকের যত্নে সজনে পাতা
ত্বকের উপরে বিভিন্ন রকমের ফোঁসকুড়ি বা গোঁটা বের হয় যা অনেক কষ্টকর ও যন্ত্রণাদায়ক। সজনে পাতা বেটে এই ফোষকুড়িতে লাগিয়ে
আরও পড়ুন ঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল মুখে ব্যাবহারের নিয়ম।
রাখলে আস্তে আস্তে ভালো হয়ে যায় ও ত্বক দেখতে সুন্দর ও মসৃণ হয়। যাদের ত্বকে এ ধরনের সমস্যা আছে তারা নিয়মিত এভাবে কয়েক দিন ব্যবহার করলে ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
মুখের বলিরেখা দূর করে
মুখে বলিরেখা দূর করার জন্য সজনে পাতা অতুলনীয় । সজনে পাতার গুড়া পানির সাথে মিশিয়ে বলি রেখার উপরে লাগিয়ে রাখলে বলিরেখা উঠে যায় ও মুখের ত্বক মসৃণ ও সুন্দর হয়। সজনে পাতায় বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে ত্বক সুন্দর ও মসৃণ করে। নিয়মিত সজনে পাতা খান ত্বক ভাল রাখুন।
সজনে পাতা শরীরের বিষ ব্যথা কমায়
সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি উপকারিতা হলো শরীরের বিষ-ব্যথা কমায়। সজনে পাতায় রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট, মিনারেলস ও এনটিইনফ্লামেটরি এজেন্ট।
যেগুলো আমাদের শরীরের বাথা কমায়। তাই সজনে পাতা নিয়মিত খেলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গের (মাজা, কোমর, হাঁটু ) বিষ ও বাতব্যাতা কমে যায় ।
হাড় ও দাঁত গঠনে সজনে পাতা
সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস সহ অন্যান্য মিনারেল থাকএ।সে কারণে হাড় ও দাঁতের গঠনে সজনে পাতার ভূমিকা অতুলনীয়।
মনে রাখতে হবে দেহের ভার বা ওজন বহন করে এই হাড়গুলো। হাড় ও দাঁত গুলো মজবুত করে গঠনের জন্য নিয়মিত সজনে পাতা খাওয়া উচিত।
কিভাবে খাবেন সজনে পাতা বা খাওয়ার নিয়ম
অনেক পুষ্টিগুন ও পুষ্টিমান সম্পন্ন সজনে পাতা খাওয়ার ব্যাপারে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলা দরকার। সজনে পাতা কিভাবে খেলে বা কিভাবে ব্যবহার করলে সঠিক উপকার পাওয়া যায় সেগুলো জানার জন্য নিম্নের আলোচনা গুলো পড়ুন।
- সজনে পাত ভেজে খাওয়া যেতে পারে ।
- সিদ্ধ করে ভর্তা বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- রোদে শুকিয়ে গুড়া করে চায়ের সাথে খাওয়া যেতে পারে।
- সজনে পাতা ব্লেন্ড করে জুসের মত খাওয়া যেতে পারে।
- সজনে পাতা পেস্ট করে ত্বকো ব্যবহার করা যেতে পারে।
- সজনে পাতা ও গুড়া করে পানির সাথে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করা যেতে পারে।
উল্লেখ থাকে যে তরকারির মত রান্না করে না খাওয়াই ভালো। এতে করে ভিটামিন সি ও পুষ্টিমান কম যেতে পারে।
সজনে পাতা খাওয়ার সতর্কতা
এতগুলো পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সজনে পাতা সকলের খাবার বেলায় কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।বিশেষ করে বাচ্চা ও গর্ভবতী মা'দের। সজনে পাতার উপকারিতা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই তবে সজনে পাতার শাখা প্রশাখা বা ডালগুলো অত্যন্ত ক্ষতিকর।
তাই সজনে পাতা খাওয়ার সময় এই ডালগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে । সতর্কতা গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।
- বেশি পরিমাণে সজনে পাতা খেলে বদহজম হতে পারে।
- যারা বেশি পরিমানে সংবেদনশীল তাদের এলার্জি হতে পারে।
- শাখা-প্রশাখা খাওয়া যাবে না।
লেখকের কথা
সতর্কতা অবলম্বন করে পুষ্টিগণ সমৃদ্ধ সজনে পাতা সকলেরই খাওয়া উচিত। সজনে ডাটা গুলোর অনেক মূল্য তাই বাড়ির আনাচে-কানাচে ফাঁকা জায়গাগুলোতে এর চাষাাবাদ বাড়াতে হবে । এতে করে কৃষক ভাইয়েরা সজনে পাতা খেয়ে প্রচুর পরিমানে পুষ্টি পাবেন পাশাপাশি অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
আজকের এ আর্টিকেলটি পড়ে সজনে পাতা সম্পর্কে সবকিছু পুরোপুরি জানতে পেরেছে। সজনে ডাটা সব্জির চাহিদা পূরণ করে পাশাপাশি সজনে পাতা আমাদের দৈহিক স্বাস্থ্য গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে । তাই নিয়ম মেনে সজনে পাতা সকলেরই নিয়মিত খাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url