সোনা পাতার ১৫ টি উপকারিতা ও সতর্কতা
সোনা পাতার ১৫ টি উপকারিতা ও সতর্কতা সম্পর্কে আজকে আর্টিকেলটি লেখা। আপনারা অনেকেই সোনা পাতার নাম শুনেছেন, সোনা পাতা খেয়েও থাকেন। কিন্তু সোনা পাতা ঠিক কি কাজ করে? কি জন্য আমরা খাই? এ বিষয়গুলো হয়তো বিস্তারিতভাবে অনেকেই জানেন না। এ বিষয়গুলো জানানোর জন্যই আজকের আর্টিকেলটি লেখা।
প্রাচীনকাল থেকেই সোনা পাতা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোগ মুক্তির জন্য ভেষজ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমাদের বাংলাদেশেও এর ব্যবহার শুরু হয়েছে। এটি সঠিক নিয়ম মেনে পরিমাণ মতো নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরের অনেক রোগ মুক্তি হয়ে থাকে। চলুন মূল আলোচনায় সোনা পাতা সম্পর্কে।
পেজ সূচীপত্র
সোনা পাতার পরিচিতি
সোনা পাতার ১৫ টি উপকারিতা ও সতর্কতা আলোচনার প্রথমেই জেনে নেওয়া দরকার সোনা পাতার পরিচিতি সম্পর্কে। সোনা পাতাগুলো কাঁচা অবস্থায় দেখতে হালকা সবুজ রংঙের মেহেদী পাতার মতো। এই পাতাগুলো শুকিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই রং পরিবর্তন হয়ে হালকা হলুদ বা সোনালী রঙের মতো দেখায়।
এ পাতায় হালকা একটু বুনো গন্ধ আছে। সোনা পাতার ফুল, ফল ও পাতা সবই মানব কল্যাণে ব্যবহৃত হলেও এর পাতার ব্যবহারই বেশি। অঞ্চল ভেদে এ পাতার বিভিন্ন নাম রয়েছে যেমন -
- সোনা পাতা,
- সোনামুখী পাতা,
- স্বর্ণমুখী পাতা,
- সোনামাক্কি পাতা (আরবি ভাষা),
- ছেন্না (Senna), তিন্নেভ্যালি ছেন্না (Tinnevelly Senna) ইংরেজি নাম। ইত্যাদি।
সোনা পাতার পুষ্টিগুণ
সোনা পাতার ১৫ টি উপকারিতা ও সতর্কতা আলোচনায় আমরা এখন জেনে নিব সোনা পাতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। বহু ভেষজ গুণসম্পন্ন সোনা পাতায় রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ও মিনারেলস সোনা পাতা বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান গুলোর নাম নিম্ন উল্লেখ করা হলো।
আরও পড়ুন ঃ তিসি বীজের পুষ্টিগুণ ও ১৫ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা।
- বিভিন্ন এন্ট্রিঅক্সিডেন্ট,
- বিভিন্ন মিনারেলস,
- সল্ট বা লবণ,
- আঁশ বা ফাইবার,
- পোলিওন
- ক্যালসিয়াম,
- মিউসিলেন্স,
- হাইডোজায়ানথ্রাসিন,
- প্ল্যাভিনয়েড,
- ন্যাপথলিন গ্লাইকোসাইড,
- পিনিটল
- বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান। ইত্যাদি।
সোনা পাতা খাওয়ার নিয়ম
সোনা পাতার ১৫ টি উপকারিতা ও সতর্কতা সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব সোনা পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আসলে ঠিক কিভাবে সোনা পাতা খেলে রোগ নিরাময়ে ভালো উপকার পাওয়া যায় সে বিষয়ে সম্পর্কে।
আরও পড়ুন ঃ ঢেঁড়সের পুষ্টিগুণ ও ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা।
সোনা পাতা গুলো বিভিন্নভাবেই খাওয়া যেতে পার তবে এ পাতা খাবার উল্লেখযোগ্য উপায় হলো দুইটি -
- উপায় ১ ঃ সোনা পাতার গুড়া ১ থেকে দেড় চামচ এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা রেখে খালি পেটে গুড়া মিশ্রিত এই পানি খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
- উপায় ২ ঃ ৩ থেকে ৪ টি সোনা পাতা এক কাপ পানিতে ভিজেয়ে ৪-৫ ঘন্টা পরে গরম করে চায়ের মতো করে খেলেও ভালো উপকার পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য দৈনিক ২০ থেকে ৩০ গ্রামের বেশি সোনা পাতা গুড়া খাওয়া উচিত নয়।
১.সোনা পাতার উপকারিতা
সোনা পাতার ১৫ টি উপকারিতা ও সতর্কতা সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব সোনাপাতার উপকারিতা সম্পর্কে। সোনা পাতা হলো এমন এক ধরনের ভেষজ গুণসম্পন্ন পাতা যা পিচ্ছিল হওয়ার কারণে মানবদেহের লার্জ ইন্টেস্টাইনে পানি ও ইলেকট্রোলাইট শোষণে বাধাগ্রস্ত করে।
যার কারণে ইন্টেস্টাইনে উপাদানগুলোর ভলিউম বা চাপ বৃদ্ধি করে কোলনে দিকে সঞ্চালনের সহায়তা কর। সোনা পাতার বহুবিধি উপকারিতার কারণে এ পাতাকে মহৌষধ বলা হয়। সোনাপাতা খাওয়ার উপকারিতা গুলো নিম্নে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো।
২.সোনা পাতা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
সোনা পাতার ১৫ টি উপকারিতা ও সতর্কতা সংকিত যা আলোচনায় এখন আমরা জেনে নিবো সোনা পাতা খেলে কষ্টকাঠিঊন্য দূর হয় সে সম্পর্কে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) খন্ডকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য সোনা পাতা ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।
আরও পড়ুন ঃ শিমের পুষ্টিগুণ ও ১৫ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা।
সোনা পাতার একটি অন্যতম উপকারিতা হলো লার্জ ইন্টেস্টাইনে পানি ও ইলেকট্রোলাইট শোষণ বাধা প্রদান করে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে মল ত্যাগ হয়। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় সেজন্য সোনা পাতাকে কষ্ট পাটিন্ন রোগের বলা হয়ে থাকে।
৩.হজম প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করে
সোনা পাতার ১৫ টি উপকারিতা ও সতর্কতা সম্পর্কিত আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করবো সোনা পাতা খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় সে সম্পর্কে। পেরিসটালটিক মুভমেন্ট বৃদ্ধি করে।
আরও পড়ুন ঃ লাল শাকের পুষ্টিগুণ ও ১৭টি স্বাস্থ্য উপকারিতা।
সোনা পাতায় রয়েছে এ্যানন্থ্রানয়েড নামক একটি উপাদান যা আমাদের হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। যাদের হজম শক্তি কম, নিয়মিত সোনা পাতা খেলে তাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
৪.ত্বক ভালো রাখে
সোনা পাতার ১৫ টি উপকারিতা ও সতর্কতা সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব সোনা পাতা খেলে ত্বক ভালো থাকে সে সম্পর্কে। সোনা পাতার গুড়া নিয়মিত ফেলে ত্বক ভালো থাকে।
সোনা পাতার একটি অন্যতম গুণ হলো ত্বক ভালো রাখে। সোনা পাতায় বিদ্যমান বিভিন্ন এন্টিঅক্সিডেন্ট গুলো ত্বক ভালো রাখে, ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া ভাব দূর ও ব্রণের দাগ দূর করে।
৫.অর্শ রোগের জন্য উপকারী
সোনা পাতার ১৫ টি উপকারিতা ও সতর্কতা সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আমরা জেনে নিব সোনা পাতা নিয়মিত খেলে অর্শ রোগের প্রতিশোধক ও প্রতিরোধ কিসের কাজ করে।
৭.কৃমিনাশক
সোনা পাতার ভেষজ গুণাবলীর মধ্যে একটু অন্যতম গুন হলো সোনা পাতা খেলে কৃমি দূর হয় অর্থাৎ কৃমিনাশক হিসেবে সোনা পাতা ব্যবহৃত হয়।
৮.ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
সোনা পাতার ১৫ টি উপকারিতা ও সতর্কতা আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব সোনা পাতা খেলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে সে সম্পর্কে। ব্লাড প্রেসার অন্যান্য ওষুধের সাথে সোনা পাতা খেলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৯.ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
সোনা পাতার ১৫ টি উপকারিতা ও সর্তকতা আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা জেনে নিব সোনা পাতা নিয়মিত খেলে ওজন কমে সে সম্পর্কে। সোনা পাতা নিয়মিত খেতে থাকলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে বা কমে যায় ফলে খাওয়ার প্রতি তেমন বেশি আগ্রহ থাকে না সোনা কোথায় রয়েছে
১০.বধহজম দূর করে ও এসিডিটি কমায়
বদহজম দূর করে ও এসিডিটি কমায় সোনা পাতা। সোনা পাতা বিভিন্ন গুণাবলীর কারণে সোনা পাতা নিয়মিত খেলে বদ হজম ভালো হয়ে যায় ফলে এসিডিটি কমে যায়।
১১.সোনা পাতা অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে
সোনা পাতায় রয়েছে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান। এ উপাদানগলোর কারণেই সোনা পাতা মূলত অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে থাকে।
১২.রুচি বাড়ায়
রুচি বাড়ায় সোনা পাতা! নিয়ম করে সঠিক নিয়ম মেনে সোনা পাতা খেলে রুচি বাড়ে।
১৩.গর্ভাবস্থায় সোনা পাতা খেলে কি হয়
সোনা পাতার ভেষজগুণ ও উপকারিতা অনেক! সোনা পাতা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য খুব ভালো উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু গর্ভাবস্থায় এই সোনা পাতা খেলে ঠিক কি ধরনের উপকার বা ক্ষতি করে সে সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
আরও পড়ুন ঃ সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম।
সোনা পাতা খেলে গর্ভবতী মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হলেও ভ্রুনের ক্ষতি করতে পারে। সে জন্য খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সোনা পাতা না খাওয়াই ভালো।
১৪.সোনা পাতার দাম বা মূল্য কত
সোনা পাতার উপকারিতা অনেক! এ পাতার উপকারিতার কথা ভেবে অনেকেই কেনার জন্য অনলাইনে সার্চ করে থাকেন, এ পাতার দাম কত বা কিভাবে বিক্রি হয় সে সম্পর্কে। আমাদের দেশের সোনা পাতার বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন এখনো শুরু হয়নি বললেই চলে, তবে নাটোর সদর উপজেলের ঔষধি একটি এলাকা আছে যেখানে সোনা পাতার স্বল্প পরিসরে চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
সেখানকার কৃষকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে এই সোনা পাতাগুলো সরাসরি পাতা হিসেবে বিক্রি হয় এবং পাতাগুলো প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে গুড়া করেও কেজি দরে বিক্রি করা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে প্রতি কেজি সোনা পাতা গুড়ার দাম ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হয়। এ পাতার উপকারিতার কারণে দিনে দিনে এর কদর বাড়ছে।
১৫.সোনা পাতা কতদিন খাওয়া যায়
সোনা পাতা ভেষজ গুণসম্পন্ন একটি ভেসজ উপাদান। বিশ্ব হারবাল গবেষণা ইনস্টিটিউট সোনাপাতাকে শক্তিশালী ভেষজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সারা বিশ্বে কোষ্ঠকাঠিন্যসহ অন্যান্য রোগে সোনা পাতা গ্রহণের অনুমতি রয়েছে।
কিন্তু এই পাতা বেশি পরিমাণে খেলে বা বেশি দিন খেলে হীতে বিপরীত হতে পারে। সোনা পাতার গুনাগুন ও কার্যকারিতা ঠিক রাখার জন্য সপ্তাহে তিন-চার দিনের বেশি খাওয়া উচিত নয়।
সোনা পাতা খাওয়ার সতর্কতা
সোনা পাতা অত্যন্ত ভেষজ গুণসম্পন্ন একটি ভেষজ উপাদান। এর ভেষজগুণের কারণে মানব স্বাস্থ্যের অনেক উপকার করে থাকে। সোনা পাতা অত্যন্ত উপকারী হওয়ার পরেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে খাওয়া উচিত। যে সকল ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সেগুলো নিম্নরূপ -
- যাদের আমাশয় আছে বা ঘনঘন পাতলা পায়খানা হয় এ সকল রোগীদের সোনা পাতা না খাওয়াই ভালো।
- যাদের এ্নটিস্টাইনাল ইনফেকশন আছে, আলসার ও এপেন্ডিসাইটিস আছে তাদের সোনা পাতা না খাওয়াই উচিত।
- শিশু ও বৃদ্ধদের জনকতা খাওয়া উচিত নয।
- গর্ভবতী মা ও স্তনদানকারী মাদের সোনা পাতা উচিত খাওয়া উচিত নয়।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আজকের এ আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা সোনা পাতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন বলে আমার বিশ্বাস। তবে অত্যন্ত উপকারী বলেই সোনা পাতা বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত হবে না। আবার সপ্তাহে তিন -চার দিনের বেশি খাওয়া উচিত নয়।
সতর্কতার সহিত সঠিক নিয়ম মেনে সোনা পাতা খেলে শরীরের অনেক উপকারে আসে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। এ রকম আরও আপডেট তথ্য সবার আগে পাওয়ার জন্য চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথেই থাকুন। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url