তিতা খাবারের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
তিতা খাবারের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানেন কি? তিতা খাবারের নাম শুনলেই অনেকেরই চোখ কপালে ওঠে! বেশিরভাগ লোক টক, মিষ্টি ও ঝাল স্বাদের খাবার গুলো বেশি পছন্দ করে থাকেন। স্বাদের কারণেই মূলত তিতা খাবার বেশিরভাগ লোকেই খেতে চান না। কিন্তু এই তিতা খাবারেই রয়েছে অবাক করার মতো পুষ্টিগুণ স্বাস্থ্য উপকারিগুণ।
আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা জানতে পারবেন তিতা বা তিতো বা তেতো খাবারের পুষ্টিগুণ, তেতো খাবারের উপকারিতা, তিতা খাবার প্রতিদিন কি পরিমাণে খাওয়া উচিত? তেতো খাবারগুলোর নাম, এরকমের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে। এ সকল তথ্যগুলো জানার জন্য একটু নিচের দিকে পড়তে থাকুন।
পেজ সুচিপত্র
তিতা খাবারের পুষ্টিগুণ ও পুষ্টি উপাদান
তিতা খাবারের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা অনেক! আমার অনেকেই এই খাবারগুলোর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে না জেনেও খেয়ে থাকি, যা মনের অজান্তেই আমাদের শরীরে এ পুষ্টিগুলো এনার্জি উৎপাদন করে থাকে। বিভিন্ন পুষ্টিবিজ্ঞানীরা তেতো খাবারের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বলেন মুখে রুচি বাড়াতে ও দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন তিতা খাবার খেতে হবে। তিতা শাক-সবজিতে যে সকল পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় সেগুলো হলো -
- খাদ্যশক্তি বা এলার্জি,
- কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা,
- প্রোটিন বা আমিষ,
- ভিটামিন এ,
- ভিটামিন বি কমপ্লেক্স,
- ভিটামিন সি,
- ক্যালসিয়াম,
- আয়রন,
- ম্যাগনেসিয়াম,
- এন্ট্রিঅক্সিডেন্ট,
- বিটাক্যারোটিন,
- এন্ট্রি ব্যাকটেরিয়াল ইফেক্ট,
- এন্ট্রি ইনফ্লামেটরি উপাদান,
- জলীয় অংশ। ইত্যাদি।
তিতা খাবারের উপকারিতা
তিতা খাবারের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে আপনারা অনেকেই গুগলে সার্চ করেন। তিতা খাবারগুলোর নাম, তার উপকারিগুণ ও পুষ্টিগুণ জানার জন্য বিভিন্ন ওয়েবে সন্ধান করেন। তিতা খাবারের উপকারিগুণ সম্পর্কে জানানোর জন্যই আজকের এই লেখা। তিতা খাবার পছন্দ করেন এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর কিন্তু এর উপকারিগুণ অনেক! তিতা খাবারের নাম ও এর উপকারিগুণ সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করা হলো।
- করলা,
- পাটশাক,
- লেবুর খোসা,
- মেথি শাক,
- সরিষার শাক,
- নিমপাতা,
- ব্রাক্ষী শাক,
- চিরতা,
- থানকুনি বা তেলাকুচা পাতা,
- গ্রিন টি,
- পটলের কচি ডগা,
- সজনে ফুল,
- কোকো পাউডার,
- ডার্ক চকলেট,
- গন্ধ ভেদুলির পাতা,
- কিমা শাক। ইত্যাদি।
করলা বা উচ্ছের উপকারি দিক
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে,
- করলা খেলে সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে,
- ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে,
- করলা খেলে কোলেস্টেরল কমে,
- ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে,
- হার্ট ভালো থাকে,
- উচ্ছে খেলে বাত-ব্যথা কমে,
- চুল ও ত্বক সুন্দর করে। ইত্যাদি।
পাটশাক সংক্রমণ প্রতিরোধ করে
- শরীরের সংক্রমণ ব্যধি প্রতিরোধ করে,
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়,
- রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়,
- রক্তশূন্যতা দূর করে,
- দেহকে অক্সিডেটিভ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে,
- দাঁড়া তো হারের গঠন মজবুত করে,
- মুখের রুচি বাড়ায়। ইত্যাদি।
লেবুর খোসা এন্ট্রিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস
লেবু খেলে যেমন মুখের স্বাদ বাড়ে ব্লু জাতীয় রোগ দূর হয়। তেমনি লেবুর খোসা খেলেও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। লেবুতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে এনটিঅক্সিডেন্ট যেগুলো শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। লেবু খাওয়ার পরে এর তেতো স্বাদযুক্ত খোসা ফেলে না দিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। নিয়মিত লেবুর খোসা খেলে স্বাস্থ্যে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন ঃ রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগুণ।
মেথি শাক লিভার ভালো রাখে
তিতা খাবারের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা আলোচনায় এখন আমরা আপনাদেরকে জানাবো মেথির শাকের গুণ সম্পর্কে। মেথি শাক তিতা খাবারের মধ্যে অন্যতম একটি খাবার। আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যান্ড্রঅক্সিডেন্ট ও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ভরপুর এ শাক। নিয়মিত নিয়ম করে মেথি শাক খেলে নিম্নোক্ত রোগের উপকার পাওয়া যায়।
- লিভার ভালো রাখে মেথি শাক,
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে মেথি শাক,
- এসিডিটি কমায়,
- রক্তস্বল্পতা কমায়,
- হজম প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করে। ইত্যাদি।
সরিষার শাক ফুসফুস ভালো রাখে
- ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে,
- ফুসফুস ভালো রাখে,
- কোলন সুস্থ রাখে,
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে,
- হজম বৃদ্ধি করে। ইত্যাদি।
নিমপাতা বসন্ত রোগের জন্য উপকারী
- নিমপাতা বসন্ত রোগের জন্য উপকারী,
- নিমপাতা পানিতে মিশিয়ে গরম করে গোসল করলে শরীরের কড়া ভাব কেটে যায়,
- রুচি বৃদ্ধি করে নিম পাতার রস,
- লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়,
- নিমপাতার রস নিয়মিত খেলে সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে,
- নিমপাতার রস খেলে কৃমি দূর হয়। ইত্যাদি।
ফ্লু জাতীয় রোগে দূর করে ব্রাক্ষী শাক
- স্বরভঙ্গ দূর হয় অর্থাৎ গলা বসে যাওয়া রোগ সেরে যায়,
- ঠান্ডা-কাশি জনিত রোগে এ শাকের রস খেলে ভালো হয়,
- বসন্ত রোগ ভালো করতে এশাক যথেষ্ট উপকারী,
- ব্রাক্ষী শাক খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে,
- রক্তস্বল্পতা দূর করে। ইত্যাদি।
টক্সিন পদার্থ দূর করে চিরতার রস
- রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়,
- ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি করে,
- রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমায়,
- ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে,
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে,
- শরীরের টক্সিন পদার্থ বের করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে, যকৃত ও পাকস্থলী প্রদাহ কমায়। ইত্যাদি।
থানকুনি বা তেলাকুচা পাতা
- দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে,
- কৃষি নাশক হিসেবে কাজ করে,
- মেহ রোগের উপশম করে। ইত্যাদি।
গ্রীন টি মাথা ব্যথা কমায়
গ্রীন টি তিতা স্বাদযুক্ত খাবার বা পানীয় গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো গ্রীন টি। এই সাথে রয়েছে ক্যাফিনসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ও এন্ট্রি অক্সিডেন্ট। তিতা স্বাদের গ্রীন টি চিনি ছাড়া খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। গ্রিন টির উপকারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো -
- গ্রিন টি মাথা ব্যথা কমায়,
- ফ্লু জাতীয় রোগ, বিশেষ করে জ্বর ও কাশি উপশম করে,
- স্বর বা গলা বসে যাওয়ার রোগ ভালো হয়,
- ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে,
- চুল ও ত্বক ভালো রাখে। ইত্যাদি।
কৃমি নাশক পটলের কচি ডগা
- পটলের কচি পাতা কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে,
- রুচি বৃদ্ধি করে,
- হজম প্রক্রিয়া তুরান্বিত করে,
- পেটের গ্যাস ও অম্বল দূর করে। ইত্যাদি।
সজনে ফুল ও পাতার গুণাগুণ
- হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে,
- দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে,
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে,
- রুচি বৃদ্ধি করে,
- গর্ভবতী মাদের জন্য খুবই উপকারী,
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। ইত্যাদি।
কোকো পাউডার উপকারি
তিতা খাবারের মধ্যে একটি অন্যতম খাবার হলো কোকো পাউডার। কোকো পাউডার গুলো তিতা স্বাদযুক্ত হলো পুষ্টিগুলো ভরপুর। কোকো পাউডারের রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক ও কপারসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। কোকো পাউডার কোকো বীজ থেকে তৈরি করা হয়। এই পাউডারগুলো এমনিতেই খাওয়া যায় না। এই পাউডারগুলো মিষ্টি খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে অথবা চকলেট তৈরি করে খেতে হয়। তিতা স্বাদের এ পাউডার খেলে যে উপকার গুলো হয় -
- দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে,
- ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়,
- রক্তস্বল্পতা দূর হয়। ইত্যাদি।
ডার্ক চকলেট রক্ত চলাচল ঠিক রাখে
- ত্বক ভালো রাখে,
- চুল সুন্দর করে,
- রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে,
- ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া ভাব রোধ করে। ইত্যাদি।
গন্ধ ভেদুলির পাতা
তিতা খাবারের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা আলোচনায় এখন আমরা জেনে নেব গন্ধ ভেদুলির পাতা সম্পর্কে। গন্ধ ও তেতো স্বাদযুক্ত খাবারের মধ্যে অন্যতম হলো গন্ধ ভেদুলির পাতা। পাতা সাপ হিসেবে খাওয়া যায় এ পাতায় রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক। গন্ধফি দোলের পাতা নিয়মিত শাক হিসেবে খেলে যে উপকারগুলো পাওয়া যায় সেগুলো হলো -
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে,
- হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে,
- মুখের রুচি বৃদ্ধি করে,
- ক্ষুধা বাড়ায়। ইত্যাদি।
কিমা শাক রুচি বৃদ্ধি করে
তিতা স্বাদযুক্ত সবুজ শাক-সবজির মধ্যে একটি হলো কিমা শাক। এই কিমা শাক বর্ষাকালে গ্রামাঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়। সাথে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডায়েটরি ফাইবার এন্ড্রোঅক্সিডেন্ট ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান। এই শাক খেলে যে উপকারগুলো পাওয়া যায় সেগুলো হলো -
- মুখের রুচি বাড়ে,
- হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়,
- কৃমি নাশক হিসেবে কাজ করে,
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ইত্যাদি।
তিতা খাবার কেন খাবেন ?
খেতে বসলেই বাবা-মারা তিতা (করলা) খাবার খাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করেন। তিতা খাবারের যে এত পুষ্টিগুন এটা তোর আগে জানতাম না! তিতা খাবার খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, স্বাস্থ্য ভালো থাকে, কৃমিনাশক গুণ রয়েছে এই তিতা খাবারের। তিতা খাবার বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। উপরের আলোচনা থেকে বুঝা যায় তিতা খাবারের অনেক উপকার। আগের দিনের বাবা-মারা না বুঝেই তিতা খাবার খাওয়ার জন্য আর এখনকার বাবা-মারা জেনে শুনে বুঝেই বাচ্চা দেখে তিতা খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী এই তিতা খাবার গুলো প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত এবং সকলের খাওয়া দরকার।
তিতা খাবার খাওয়ার নিয়ম
তিতা খাবারের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা জেনে নিব তিতা খাবার বা তিতা শাক খাওয়ার নিয়ম বা কিভাবে খাবেন তিতা খাবার সে সম্পর্কে। এই তিতা খাবারগুলো খেতে তিতা হলেও এর গুনাগুণ অনেক মিষ্টি। এই খাবারগুলো একটু নিয়ম মেনে নিয়মিত খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এ খাবারগুলোর খাওয়ার কিছু নিয়ম নিম্নে আলোচনা করা হলো।
- তিতা করলা রান্না করে খাওয়া যায়,
- করলা জুস করে খাওয়া যায়,
- চিরতার পাতা ভিজিয়ে পানি খাওয়া যায়,
- মেথি রান্না করে খাওয়া যায়,
- মেথি ভিজিয়ে পানি খাওয়া যায়,
- তেতো নিমপাতার রস খাওয়া যায়,
- নিমপাতা পিষে বসন্ত হলে লাগালে উপকার পাওয়া যায়,
- নিমপাতা পানি দিয়ে গরম করে গোসল করলে রোগ নিরাময় হয়,
- কিমার শাক ও গন্ধ ভেদুলির পাতা রান্না করে খাওয়া যায়।
- পাট শাক রান্না করে খাওয়া যায়,
- ভাজি করে খাওয়া যায়,
- ভর্তা করে খাওয়া যায়। ইত্যাদি।
উপসংহার
আশা করি, তিতো খাবার সম্পর্কিত আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যগুলো জানতে পেরেছেন ও উপকৃত হয়েছেন। সুস্বাস্থ্যের জন্য তিতা খাবার সকলেরই খাওয়া উচিত। এ ধরনের আরো আপডেট তথ্য পাওয়ার জন্য চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথেই থাকুন। আর আর্টিকেলটি শেয়ার করে দিন যেন অন্যেরাও এ বিষয়গুলো জানতে পারে। তিতা খাবার খাবেন এবং শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখবেন। ধন্যবাদ।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url